চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সেচে কৃষককে বাড়তি গুনতে হবে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১১ আগস্ট, ২০২২ | ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

কৃষিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চাষি মো. মোজাম্মেল হক বকুল। বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়ে অন্তত পাঁচটি লেবু বাগানসহ বিভিন্ন ফলমূলের আটটি বড় বাগান রয়েছে। এসব বাগানে সেচ দেওয়ার রয়েছে সাতটি শ্যালো পাম্প। প্রতি সপ্তাহে ডিজেলের একশ লিটারের ড্রাম কিনতে হয় তাকে। বর্ষা ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে বাগানে সেচ দিতে হয়। এখন ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচ খরচ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। শুধু ফলমূলের বাগান নয়, চলতি আমন মৌসুমেও চাষাবাদে খরচ বেড়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে আগামী বোরো মৌসুমে। বোরো হচ্ছে পুরোটায় সেচনির্ভর।

বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের কুমকুম দাশ বলেন, আমান চাষের জন্য জমিতে তিনবার চাষ দিতে হয়। প্রতিকানিতে ২২-২৩শ টাকা দরে চাষ দিয়েছেন ট্যাক্টর মালিকেরা। এখন ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে কানিপ্রতি তিন হাজার টাকা দাবি করছেন।

২০১৪ সালের এক জরিপ বলছে, দেশে ৭০ শতাংশ সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। বাকি ৩০ শতাংশ সেচযন্ত্র বিদ্যুৎ দিয়ে চালানো হয়। তবে ২০১৯ সালে কৃষি উন্নয়ন কপোরেশন, বিএমডিএ এবং ডিএই সৌথ সমীক্ষা প্রকাশ করে। ২০১৬-১৭ সালের এ জরিপের হিসাব বলছে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র ৭৯ শতাংশ ও বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র ২১ শতাংশ।

চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত ১০ হাজার ২৪৯টি সেচযন্ত্র রয়েছে। এরমধ্যে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে তিন হাজার ৯৬০ দশমিক ৫৯ মে. টন ডিজেল ব্যবহার করা হয়।

কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, বছরে ৩৯ লাখ ৬০ হাজার ৫৯০ লিটার ডিজেল ব্যবহৃত হয়। ডিজেলে প্রতিলিটারে ৩৪ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। সেই হিসাবে ১৩ কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হবে কৃষকদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে কৃষকের খরচ এখন বেড়ে যাবে।’

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না। আমন হচ্ছে প্রকৃতিনির্ভর। বৃষ্টির পানিতেই চাষাবাদ করা যায়। কিন্তু চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে বীজতলা তৈরিতে সেচ দিতে হয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টি না হওয়ার অনেক জায়গা সেচ দিয়ে জমি চাষ করতে হয়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ার প্রভাব ইতিমধ্যেই কৃষকের ওপর চাপ পড়েছে।
কৃষি সেচে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচপাম্পের ব্যবহার করা হয়। ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে বেড়ে একলাফে ১১৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রতিলিটারে ৩৪ টাকা বেড়েছে।

কৃষক কুমকুম দাশ বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির বড় প্রভাব পড়বে আগামী বোরো মৌসুমে। কারণ বোরো মৌসুম হচ্ছে পুরোটায় সেচনির্ভর। ডিজেলের দাম কমানো অথবা ভর্তুকি প্রদানের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। ডিজেল ও সারের দাম বাড়ানোর ফলে কৃষককে লোকসান গুণতে হবে। কৃষক বাঁচবে না। তাই সার ও ডিজেলে ভর্তুকি দিয়ে কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভর্তুকির বিষয়টি সরকারের ঊচ্চপর্যায়ের বিষয়।’

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চাষি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতিভার লেবু (একভারে ৩৫০-৪০০টি) বিক্রি হয়েছে ১৫০-২০০শ টাকা। এখন ৩শ টাকা দিচ্ছেন আড়তদাররা। অথচ প্রতিদিন ১৮-২০ শ্রমিক বাগানে কাজ করেন। জনপ্রতি ৫১০ টাকা করে মজুরি গুণতে হয়। এখন লাভের বদলে প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে। আর শুষ্ক মৌসুমে সেচ খরচ বাড়বে কয়েক গুণ। কৃষি কাজে যেভাবে খরচ বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে, বাগান ছেড়ে পাহাড়ে এখন বিকল্প হিসেবে গরু-মহিষের খামার করতে হবে।’

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট