চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চালের বাজার অস্থির ৩ কারণে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৬ আগস্ট, ২০২২ | ৪:২১ অপরাহ্ণ

চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে শুল্কহার কমিয়ে আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু শুল্কহার কমানোর পর বেড়ে যায় ডলারের দাম। এর ফলে আমদানি হয়েছে সামান্য চাল। আমদানি কম হওয়ার সুযোগে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চিনিগুড়া চালের দাম।

ব্যবসায়ীরা জানান, চালের মিল না থাকলে দেশের বড় ৮-১০টি কর্পোরেট গ্রুপ বাজারে প্যাকেটজাত চাল বিক্রি করে। তার সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি বড় মিলার। ধান-চালের বাজার এখন নিয়ন্ত্রণ করছে কর্পোরেট গ্রুপ ও বড় মিলাররা। প্রতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুদ করে। অস্বাভাবিক মজুদের কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। সংকটের সুযোগে পরবর্তী সময়ে ইচ্ছেমতো দামে চাল ছাড়ে বাজারে।

তিন কারণে চালের বাজার অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে দাবি করেন চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম। তিনি বলেন, ‘ঊচ্চ শুল্ককর ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে বড় সমস্যা। তাছাড়াও এখন এলসি খোলার জন্য ৭৫ শতাংশ টাকা নগদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। যা আগে ১০ শতাংশ টাকা নগদ দিয়ে এলসি (আমদানি অনুমতিপত্র) খোলা হত। বড় তিন সংকটের কারণে চাল আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন আমদানিকারকেরা। অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকটের কারণে বাজারে ফের চালের দাম বেড়েছে।

শুল্ক কমানোর পরও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে চালের আমদানি মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে। এতে বাজারে প্রভাব পড়েনি। এজন্য শুল্কহার প্রত্যাহারের দাবি করেছেন তিনি।

নগরীর অন্যতম বড় চালের মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, ‘কর্পোরেট গ্রুপগুলোর কারণে আমাদের কপাল পুড়ছে। সরকারও যেন তাদের কাছে জিম্মি। অস্বাভাবিকভাবে চাল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। পরে ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করে।’

তিনি বলেন, এক-দুই ও পাঁচ কেজি ওজনের প্যাকেটে শপিংমল এবং মার্কেট-দোকানে চাল বিক্রি করে কর্পোরেট গ্রুপগুলো। প্যাকেটজাত এসব চাল কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

একই কথা বললেন সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমদও। তিনি বলেন, ‘বাজার তদারকি না থাকায় চালের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। চিনিগুঁড়া চালের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ৭-৮শ টাকা বেড়েছে। এটা ইতিহাসের রেকর্ড।’

চালের বাজার অস্থিরতার জন্য বড় কর্পোরেট গ্রুপ ও মিলারদের দায়ী করেছেন ব্যবসায়ী নেতা নিজাম উদ্দিনও। ২০২০ সাল থেকে দেশে চালের দাম বাড়তে থাকে। করোনা সংক্রমণের পর অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সেই থেকে চালের বাজারে স্থিতিশীল আনা যাচ্ছে না। তবে চালের দাম কমাতে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। সরকার ছাড়াও এখন বেসরকারিভাবে চাল আমদানির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গত ২৫ জুন চাল আমদানির শুল্ককর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। শুল্কছাড়ের পর প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাল আমদানি হয়েছে সামান্য। বাজারে এই নগণ্য আমদানির প্রভাব পড়েনি। উল্টো দাম কমার বদলে চালের দাম বেড়েই চলেছে।

ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা জানান, ডলার ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি। একই সঙ্গে চালের রপ্তানিমূল্যও বাড়িয়েছে ভারত। এরফলে শুল্কহার কমানোর পরও চালের দাম কমছে না।

চালের বড় মোকাম চাক্তাই ও পাহাড়তলী চাল বাজারে দেখা যায়, দেশি উন্নতমানের বেতি আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৪শ টাকায়। মধ্যমানের বেতি ১৯শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকায়। ভারত থেকে আমদানি করা বেতি বস্তাপ্রতি ২৩শ টাকা। নূরজাহান সিদ্ধ (দেশি-গুটি সিদ্ধ) বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২৩শ টাকা। আমদানি করা নূরজাহান সিদ্ধ ২৫শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩৪৫০ টাকা থেকে ৩৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মধ্যমানের জিরাশাইল ৩৩৫০ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি আতপ ৩৭-৩৮শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল ৩৮শ-৩৯শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মধ্যমানের নাজিরশাইল ৩৬শ-৩৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চিনিগুঁড়া চালের দাম। মাসখানেক আগে তা বিক্রি হয়েছিল ৪২শ টাকা দরে। দফায় দফায় বেড়ে তা এখন মানভেদে ৪৯শ টাকা থেকে শুরু করে ৫৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুঁড়া ছাড়াও জিরাশাইল, নাজিরশাইল চালের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ১-২শ টাকা বেড়েছে।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভারত থেকে চাল আমদানির খবরে চালের দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উল্টো চালের দাম শুধু বেড়েই চলেছে।’

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট