চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ

সৌমিত্র চক্রবর্তী

৫ আগস্ট, ২০২২ | ১২:৪৫ অপরাহ্ণ

ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না বঙ্গোপসাগরের সীতাকুণ্ড সন্দ্বীপ চ্যানেলে। সাগরে ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধ রাখার পর অনেক আশা নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে অনেকটা খালি হাতে ফিরতে হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জেলেরা। এদিকে, উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর বলছে বৃষ্টি না থাকায় সাগরে মাছের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও বৃষ্টি হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা মিলবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলায় মোট ৩৮টি জেলে পল্লী আছে। এসব পল্লীতে বসবাসকারী অর্ধ লক্ষাধিক জেলের জীবন চলে সাগরে মাছ শিকার করে। সারাবছর বিভিন্ন প্রকার মাছ শিকার করলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে বর্ষায় ইলিশ শিকার। মূলত বর্ষায় এই ইলিশ শিকার ও বিক্রির টাকাতেই পুরো বছর সংসার চলে তাদের। বলাবাহুল্য প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে সীতাকুণ্ডের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। যা বিক্রি করে দুঃখ দূর করেন জেলেরা। জেলেদের এই ইলিশের মৌসুম ছিল মূলত জুন-জুলাই-আগস্ট।

 

প্রাচীনকাল থেকে এই তিন মাসে প্রচুর ইলিশ শিকার করতেন জেলেরা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার মে মাস থেকে জুলাই মাসের মোট ৬৫ দিন পর্যন্ত সাগরে মাছ শিকার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেন।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকার জেলে ভজলাল জলদাস জানান, সরকারি নির্দেশনা মেনে আমরা ২৩ জুলাই রাত ১২টার পর থেকে সাগরে যাই মাছ শিকারের আশায়। কিন্তু গভীর সাগরে গিয়ে জাল ফেলে চরম হতাশ হতে হয়েছে আমাদের। স্বাভাবিকভাবে আমরা একটি নৌকাতে ৫-৭ জন কিংবা বড় নৌকায় আরো বেশি জেলে একসাথে মাছ শিকারে যাই। এসব নৌকায় প্রতিবার জাল তুললে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকারও ইলিশ পেতাম আগে। কিন্তু এবার এত দূরে গিয়ে ২-৪ হাজার টাকার মাছ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। তাও আবার বেশিরভাগ ছোট সাইজের মাছ। বড় সাইজের মাছ নেই বললেই চলে।

 

তিনি আরো বলেন, ইলিশ শিকার শুরু হওয়ার পর একটি অমাবস্যার জোঁ গেছে। অতীতে এসব জোঁতে প্রচুর ইলিশ পেয়েছি আমরা। কিন্তু এবার জোঁতেও জাল ফাঁকা। এক নৌকায় আমরা ৬ জন গিয়ে জনপ্রতি ২-৩শ টাকাও পাইনি। এতটা খারাপ চিত্র এই চ্যানেলে সচরাচর দেখা যায়নি। সরেজমিনে সীতাকুণ্ডে ইলিশ আহরণের অন্যতম এলাকা বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া বোয়ালিয়াকূল, কুমিরা-সন্দ্বীপ ঘাট, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর সাগর উপকূলে ঘুরে উপকূলীয় জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে চরম হতাশা দেখা গেছে। তবে অনেক জেলে এখনো বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের আশা এখনো ভারী বৃষ্টি হতেও পারে। আর কেবল তা হলেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে তাদের। এদিকে, জেলেরা ইলিশ শিকারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানালেও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সীতাকুণ্ডে ইলিশ কম শিকার হলেও এখনো গড়ে প্রতিদিন ১০ টন আহরণ হচ্ছে। যদিও জেলেদের দাবি আরো অনেক কম।

উপজেলা মৎস্য অফিসার কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এবার বর্ষা কম হওয়ায় উজান থেকে পর্যাপ্ত মিঠা পানির স্রোত সন্দ্বীপ চ্যানেলে আসছে না। ফলে গভীর সাগর থেকেও চ্যানেলগুলোর দিকে ইলিশ কম আসছে। তাই ইলিশ ধরা কম পড়ছে। কিন্তু যারা গভীর সমুদ্রে জাল ফেলছে তাদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে দাবি করেন তিনি।

 

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট