চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ভারতে বসেই সাজ্জাদের চাঁদাবাজি চট্টগ্রামে!

নাজিম মুহাম্মদ

৫ আগস্ট, ২০২২ | ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

বায়েজিদের চালিতাতলি থেকে চান্দগাঁও শমসের পাড়া। বিশাল এলাকায় কেউ বাড়ি নির্মাণ, জমি বিক্রি কিংবা কল-কারখানা করলে চাঁদা দিতে হয় সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে। ইন্টারপোলের রেড এলার্টে থাকা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ভারতে বসেই চাঁদাবাজি করছে নগরীতে। উঠতি বয়সী তরুণদের চাঁদা তোলার কাজে ব্যবহার করছে সাজ্জাদ। চাঁদা না দিলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বাড়িঘর কিংবা ফ্যাক্টরিতে।

 

কথা অনুযায়ী চাঁদা না দেয়ায় গত ১৯ জুলাই চালিতাতলি পূর্ব মসজিদ এলাকায় একটি মেট্রেস ফ্যাক্টরিতে আগুনে জ্বালিয়ে দেয় সাজ্জাদের অনুসারীরা। ওই ঘটনায় বায়েজিদ থানা পুলিশ মোবারক ও জিসান নামে দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোবারক জানিয়েছে, ভারতে থাকা সন্ত্রাসী সাজ্জাদের নির্দেশে বায়েজিদ, চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদা তোলে সন্ত্রাসী ঢাকাইয়্যা আকবরের ভাই জালাল। জিসান সাজ্জাদের সহযোগী আজাদের ভাগিনা। সাজ্জাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ বায়েজিদের চালিতাতলি, ওয়াজেদিয়া, হাজিরপুল ও শমসের পাড়ার মানুষ। সাজ্জাদের চাঁদাবাজির এ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে তার ভাই ওসমান আলি সেগুন, আজাদ ও মুন্না।

 

গত ২১ জুলাই মেট্রেস ফ্যাক্টরির মালিক তানভীর আলম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন বায়েজিদ থানায়। তিনি বলেন, বায়েজিদ চালিতাতলি পূর্ব মসজিদ এলাকায় কমফোর্ট হোমটেক্স নামে একটি মেট্রেস ফ্যাক্টরি চালু করেন দুই মাস আগে। গত ১৭ জুলাই রাত সোয়া আটটায় সাজ্জাদ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ইন্টারনেটে (+৩১৩৯৯২৯ নম্বর হতে) ফোন করে চাঁদা দাবি করে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চাঁদা দেয়ার কথা বলেছে, তবে কত টাকা দিতে হবে তা বলেনি। পরের দিন (১৮ জুলাই) অজ্ঞাতনামা একব্যক্তি ফোন করে মেট্রেস ফ্যাক্টরির মালিক তানভীরকে বলেন, সাজ্জাদ ভাই ফোন করে বলেছে, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে’। ২৪ ঘণ্টা থেকে ২৪ মিনিট দেরি হলে ফ্যাক্টরি ও গাড়ি আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেব।

 

মেট্রেস ফ্যাক্টরির মালিক তানভীর বলেন, ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় আমি ফ্যাক্টরি বন্ধ করে বাসায় আসি। রাত সাড়ে তিনটার সময় ফ্যাক্টরির পাশে থাকা গাড়িচালক জীবন ফোন করে জানান, ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছে। পরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় দেখা যায়, ফ্যাক্টরির ছাদের টিনের ফাঁক দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। আগুনে পুরো ফ্যাক্টরি পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

 

এর আগে গত ১২ এপ্রিল চাঁদা না পাওয়ায় বায়েজিদ ওয়াজেদিয়া এলাকায় ফিরোজ নামে বিদেশ ফেরত এক ব্যক্তির ঘরে রমজান মাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে। ওই ঘটনায় সাজ্জাদের ভাই ওসমান আলি সেগুন, সাজ্জাদ ও আজাদ নামে তিনজনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন ফিরোজ।

 

বায়েজিদ থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানান, সাজ্জাদ ভারতে থাকেন এমনটি খবর রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রেড এলার্ট রয়েছে। তবে তার নাম দিয়ে একটি গ্রুপ চাঁদাবাজি করছে। সম্প্রতি চালিতাতলিতে চাঁদা না পেয়ে একটি মেট্রেস ফ্যাক্টরি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। ওই ঘটনায় আমরা দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা জানিয়েছে, চাঁদা না পেয়ে সাজ্জাদের নির্দেশে তারা ওই ফ্যাক্টরিতে আগুন দিয়েছে। গ্রেপ্তার মোবারক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

 

মোবারক যা বলেছে : পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মোবারক হোসেন (১৯) জানায়, সে সন্ত্রাসী সাজ্জাদের অনুসারী। সন্ত্রাসী ঢাকাইয়্যা আকবরের ভাই জালাল সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ। জালাল মোবারকের পূর্ব পরিচিত। গত ১৮ জুলাই জালাল ৫’শ টাকা দিয়ে মোবারককে বলেছে, সাজ্জাদ পূর্ব মসজিদ মেট্রেস ফ্যাক্টরিতে চাঁদা চেয়েছে। চাঁদা আনতে যেতে হবে। চাঁদা না দিলে আগুন লাগিয়ে ফ্যাক্টরি জ্বালিয়ে দিতে হবে। এটা সাজ্জাদের নির্দেশ।

 

মোবারক জানায়, তার মুঠোফোন দিয়ে জালাল মেট্রেস ফ্যাক্টরির মালিককে ফোন দিয়ে সাজ্জাদের কথা বলে চাঁদা দাবি করে। এরপর ফোন থেকে সিমটি খুলে রাখে। পরদিন (১৯ জুলাই) রাত একটার সময় মোবারক, জিসান, সুমন প্রকাশ কুলু ও জালাল একটি সিএনজি ট্যাক্সিতে আতুরার ডিপোর নওশাদের চা দোকানে বসে। ওই সময় জালাল জানায়, মেট্রেস ফ্যাক্টরির মালিক চাঁদা দেয়নি। সাজ্জাদ ভাই বলেছে, ফ্যাক্টরি জ্বালিয়ে দিতে। সেই লক্ষ্যে রাত দু’টার সময় তারা হাজিরপুল ইলিয়াস কলোনির সামনে পৌঁছে। জালাল একটি বোতলে অকটেন নিয়ে আসে। জালালসহ তারা চারজনে রাত আড়াইটার সময় পূর্ব মসজিদ এলাকায় মেট্রেস ফ্যাক্টরির পেছনে যায়। জালাল ও মোবারক ফ্যাক্টরির পেছনে একতলা ভবনের ছাদে উঠে। সুমন প্রকাশ কালু ও জিসান আশেপাশে খেয়াল রাখছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ মোবারক জানায়, সে ও জালাল ফ্যাক্টরির ছাদের টিনের ফাঁক দিয়ে ভেতরে অকটেন ঢেলে দেয়। ম্যাচের কাঠি দিয়ে দুই বার আগুন জালানোর চেষ্টা করে। আগুন না ধরায় পুনরায় একটি টিসু পেপারে আগুন ধরিয়ে ভেতরে ফেলে দিলে ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরে যায়।

 

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট