চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চসিকের এলইডি বাতি, জিআই পোল স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম

ইফতেখারুল ইসলাম

৬ জুলাই, ২০২২ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক মান (আইইসি ৬০০৬০-১) অনুযায়ী ক্যাবলের ইনসুলেশন রেসিসটেন্স থাকতে হবে ২ গিগাওম বা ২০০০ কিলোওম। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এলইডি বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপনে ঠিকাদার যে ক্যাবল ব্যবহার করেছে তার ইনসুলেশন রেসিসটেন্স পাওয়া গেছে মাত্র ১০০.৬ কিলোওম। যা আন্তর্জাতিক মানের ২০ ভাগের এক ভাগ। হাই ভোল্টেজ টেস্ট এর প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, স্থাপিত তারের বিভিন্ন স্থানে স্পার্ক সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ তারের গুণগত মান সঠিক নয়। জাইকার প্রায় ৫০ কোটি টাকা অর্থায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৮০ কিলোমিটার এলইডি বাতি ও পোল স্থাপন কাজে এই অনিয়ম উদঘাটন করেছে তদন্ত কমিটি।
এই প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় চসিকের সাধারণ সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন সিটি মেয়র। চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন। তিন সদস্যের কমিটি সিটি মেয়রের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিটির সদস্যরা কনসালটেন্ট, চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, ঠিকাদারের উপস্থিতিতে সাইট পরিদর্শন করেন। স্টেশন রোড, কদমতলী রোড, পলোগ্রাউন্ড রোড, আমবাগান রোড, উত্তর খুলশী আবাসিক এলাকাসহ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেন তারা। তাতে দেখা যায়, জিআই পোলসমূহ কোথাও রাস্তায় এবং অনেক স্থানে ফুটপাত ও মিডিয়ানে স্থাপন করা হয়েছে। যেসব জিআই পোল রাস্তায় স্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে কিছু কিছুর ফাউন্ডেশনে ফাটল এবং পোল হেলানো রয়েছে। স্পেসিফিকেশনে যে বেইজ ধরা হয়েছে সেই বেইজ এর পোল রাস্তায় স্থাপন করা সমীচিন হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। চকবাজার মোড়ে অলিখাঁ মসজিদের সাথে স্থাপিত পোলের উপরের অংশ বাঁকা পেয়েছে তদন্ত টিম। টাইগার পাস আমবাগান সড়কে স্থাপিত পোলের গোড়ায় ফাটল এবং কয়েকটি ঢালাই ভাঙা অবস্থায় পেয়েছে। ফলমীর নিকটস্থ একটি পোলের বাইরের অংশের জোড়া দেখা যায়। জিআই পোলে উলম্ব কোন জোড়া থাকে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া জোড়ার মধ্যে জং ধরেছে। যা পরবর্তীতে রং দেয়া হয়েছে। সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় স্থাপন করা অধিকাংশ পোলে এক বছরের মধ্যেই জং ধরে গেছে। পোলগুলি ফুটপাতের মিডিয়ান স্ট্রিপের মাঝে এবং ফুটপাতের পাশের দেয়ালে লাগানো হয়েছে। তবে পোলের কেমিকেল টেস্ট করাতে পারেনি তদন্ত দল।
তদন্ত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শনে দেখতে পায় রাতের বেলা সড়কের কিছু অংশে বাতি বন্ধ থাকে এবং দিনের বেলায় কিছু বাতি জ্বলে। এক্ষেত্রে তদারকি ও সিস্টেম আরো উন্নত করার পরামর্শ দেয় কমিটি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ উঠার পরপরই তিনি তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। চসিকের কাজের মান শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কেউ অনিয়ম দুর্নীতি করে পার পাবে না।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট