চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুঁজি আটকা, সংকটে আড়তদাররা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৩ জুলাই, ২০২২ | ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

গত তিন বছর বড় ধাক্কা খেয়েছে চামড়াশিল্প। কারণ আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের বড় পুঁজি আটকে রয়েছে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। এখানকার আড়তদার-ব্যবসায়ীরা ধারদেনা ও ঋণের টাকায় টেনেটুনে চামড়ার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বেশির ভাগ আড়তদার পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। তবে এবার ভালো ব্যবসার আশা করছেন তারা।

রীফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক মোখলেছুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে চামড়ার চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানসহ কয়েকটি দেশ চামড়াজাতীয় পণ্যের দিকে ফের ঝুঁকে পড়েছে। কয়েক বছর আগে বড় কোম্পানিগুলো সিনথেটিক (কৃত্রিম) মেটেরিয়ালের ব্যবহার বাড়িয়েছে। সবমিলে এবার কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট হবে না বলে আশা করছি’।

আড়তদাররা জানালেন, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ঢাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা রয়েছে অন্তত ২০-২৫ কোটি টাকা। ট্যানারি মালিকেরা আশ্বাস দিলেও বকেয়া পরিশোধ করেননি। আড়তদারদের কোটি কোটি টাকার পুঁজি আটকে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় ব্যবসায় টিকে থাকতে পারেনি অনেক আড়তদার ও ব্যবসায়ী। এমনকি ঢাকার অনেক মাঝারি ও ছোট আকারের ট্যানারি দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ ধরনের মালিকদের খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। বকেয়া পাওনা নিয়ে অশ্চিয়তায় রয়েছেন আড়তদাররা। এতে পুঁজি হারিয়ে এখন দেউলিয়া হয়ে গেছেন।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তাদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘৫-৬ বছর ধরে ট্যানারি মালিকদের কাছে ২০-২৫ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পুঁজি আটকে থাকায় অনেক আড়তদার এখন দেউলিয়া হয়ে গেছেন’।

মুসলিম উদ্দিন বলেন, পুঁজি সংকট ও করোনা সংক্রমণের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে গত দুই বছর প্রত্যাশিত চামড়া কিনতে পারেননি আড়তদাররা। এতে নষ্ট হয়েছে আমাদের জাতীয় সম্পদ।

কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়তদার। গুদাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার, লোকবল নিয়োগ ও লবণ সংগ্রহ শুরু করেছেন। তবে লবণের দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

আড়তদার বলেন, গত রমজানে প্রতিবস্তা লবণের (৭০ কেজি) দাম ছিল ৬শ টাকা। দুই মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়াল এখন সাড়ে নয়শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। ফলে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে খরচ এবার বেশি পড়বে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যানারি মালিক সমিতি বৈঠক করে চামড়ার দর নির্ধারণ করে। এখনো দর ঘোষণা করা হয়নি।

ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা জানান, বিশ্ববাজারে চামড়ার বাজার ছোট হয়ে আসছে। চামড়ার বদলে সিনথেটিক (কৃত্রিম) উপাদানের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় চামড়ার বাজার ছোট হয়ে এসেছে। এতে চামড়াজাতীয় পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে।

এক সময়ে চট্টগ্রামে ৩০টি ট্যানারিশিল্প ছিল। স্বাধীনতার পরও ২২টি ট্যানারি টিকে ছিল। পর্যায়ক্রমে ট্যানারিশিল্প দেউলিয়া হতে হতে সর্বশেষ দুটিতে ঠেকেছিল। তারমধ্যে ইটিপি না থাকায় মদিনা ট্যানারি বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এখন শুধুমাত্র চালু রয়েছে রীফ লেদার লিমিটেড। এখানকার ট্যানারিশিল্প দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণে আড়তদাররা ঢাকার ট্যানারিনির্ভর হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রামে আড়তদার সমিতির সদস্য ছিলেন ১১২ জন। সদস্য ছাড়াও অন্তত ১৫০ জন ব্যবসায়ী চামড়া বেচাকেনায় জড়িত ছিলেন। এখন ধারদেনা ও ঋণে টিকে আছেন মাত্র ২৫-৩০ জন। পুঁজি হারিয়ে এখন তারাও সংকটে রয়েছেন।

২০১৯ ও ২০২০ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনায় বড় ধস নেমেছিল। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে না পারায় হাজার হাজার চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল। বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানায় সংগ্রহ করা চামড়াও বিক্রি করতে না পারায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল।

চামড়া ব্যবসাকে ফের চাঙা করা ও অভ্যন্তরীণ চামড়া সংরক্ষণে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন আড়তদাররা।

 

আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, সরকার সহজ শর্তে ঋণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে আড়তদাররা চাহিদা মতো চামড়া সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে চামড়া আর নষ্ট হবে না।

২০১৮ ও ১৯ সালে চার থেকে সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। করোনার কারণে দুই বছর ধরে ২০ শতাংশ হারে কোরবানির সংখ্যা কমে আসছে। চলতি বছর ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১ টি কোরবানির পশু জবেহ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আর দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয় কোরবানির পশু থেকে। মৌসুমি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এই চামড়া সংগ্রহ করেন। কোরবানির পশুর সংগৃহীত এসব চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের হাত ঘুরে যায় ট্যানারি মালিকদের কাছে।

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট