চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

থামছে না সরকারি চাল পাচার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৩০ জুন, ২০২২ | ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সরকারি খাদ্য গুদামের চাল কালো বাজারে পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝেমধ্যে কিছু চাল আটক করলেও অধরাই থেকে যায় বাঘব-বোয়ালরা। গত মঙ্গলবার বাকলিয়া থানা চাক্তাই চালপট্টি থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল জব্দ করেছে।
বাকলিয়া থানার ওসি মো. আবদুর রহিম পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকারি প্রকল্পের চাল অবৈধভাবে কালো বাজারে বিক্রি, সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে খালাস করার সময় আটক করা হয়।’ ট্রাকচালককে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি। খাদ্য বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার, গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট গিলে খাচ্ছে খাদ্য বিভাগকে। চাল ডিও ব্যবসার আড়ালে সরকারি গুদামের চাল কালো বাজারে চলে আসছে। এ পাচার চক্রের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন পাহাড়তলী বাজারের দুই সহোদর। তবে আটক করা চাল পাহাড়তলী বাজারের ফারুক ট্রেডার্সের নামে ডিও রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পার্বত্য জেলায় একচেটিয়া ডিও ব্যবসা রয়েছে ফারুকের। ২০২০ সালে ফারুকের গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মো. ফারুকের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়ার পরও লাইন কেটে দেন তিনি।
বাকলিয়া থানায় আটক করা চাল দেওয়ানহাট সিএসডি খাদ্য গুদাম থেকে রাঙামাটি সদর খাদ্য গুদামে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই চাল চলে যায় নগরীর চাক্তাই চাল বাজারে।
রাঙামাটি সদর গুদাম কর্মকর্তা পিনাকি দাশ বলেন, ‘চাল আটকের বিষয়টি শুনেছি কোন গুদামের চাল তা আমি বলতে পারব না। চাল ও ইনভয়েস আসলে আমরা বুঝি এগুলো আমাদের চাল।’
দেওয়ানহাট ও হালিশহর খাদ্য গুদাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি চাল পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি আমদানি করা চালও সরবরাহ করা হয় এই দুই গুদাম থেকে। এ দুটি গুদাম হচ্ছে চাল পাচার, দুর্নীতি ও অনিয়মের আঁতুড়ঘর।
দেওয়ানহাট সিএসডি গুদামের ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সব ধরনের নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে গুদাম থেকে চাল পাঠানো হয়। গুদাম থেকে বের হয়ে রাস্তায় কী ঘটে, তা আমরা তদারকি করতে পারি না। তার দায়-দায়িত্ব পুরোটায় পরিবহন ঠিকাদারের।’
সরকারি চাল কালো বাজারে পাচারের প্রধান নায়ক হচ্ছেন নগরীর অন্যতম বড় চাল বাজার পাহাড়তলী বাজারের দুই সহোদর ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময়ে তাদের গুদাম থেকে সরকারি চাল আটক ও মামলা হলেও বীরদর্পে চাল পাচার করে আসছেন। বাকলিয়া থানায় আটক করা চালও তাদের এক ভাইয়ের বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
২০১৭ সালে হালিশহর সিএসডি গুদাম থেকে চাল পাচারকালে বিপুল সংখ্যক চাল আটক করেছিল র‌্যাব। এসময় গুদাম ম্যানেজার প্রণয়ন চাকমা ও সহকারী ম্যানেজার ফখরুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই ঘটনায় খাদ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা, পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিন ও ট্রাকচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এখনো দাপটের সঙ্গে পুরোনো কায়দায় পাচার চলে আসছে। ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল পাহাড়তলী বাজার থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সরকারি ৭০ হাজার কেজি চাল জব্দ করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় চাল ব্যবসায়ী বাহার মিয়াকে। পরবর্তীতে বাহার মিয়ার গুদাম তল্লাশি করে প্রায় ২২শ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছিল। সরকারি আমদানি করা এসব চাল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নোয়াখালীর চরভাটা এলএসডি খাদ্য গুদামে যাওয়ার কথা ছিল। চাল পাচারের নেপথ্যে ছিল পরিবহন ব্যবসায়ী খোকন কান্তি দাশ। পরে খোকন দত্তকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শাহাব উদ্দিন ও বাহার মিয়া সহোদর। বর্তমানে বাজারে চালের দাম অস্থির। দাম বাড়তি হওয়ায় চাল পাচারকারীরাও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের ডিও’র বিপরীতে খাদ্যশস্য কম টাকায় কিনে বেশি টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অতিরিক্ত লাভের কারণে লাগামহীন হয়ে পড়েছেন পাচারকারী চক্র।
২০২০ সালের এপ্রিলে পাহাড়তলী বাজার থেকে ২১ বস্তা সরকারি ত্রাণের চাল আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চাল ব্যবসায়ী মেসার্স ফারুক ট্রেডার্স থেকে তা উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়াও ১৫শ খালি বস্তা ও ৯ হাজার চটের বস্তা উদ্ধার করা হয়। সরকারি চালের বস্তা পাল্টিয়ে নুরজাহান ব্যান্ডের বস্তায় ভরে বাজারজাত করার সময় জব্দ করেছিল পুলিশ। খাদ্য বিভাগের সরকারি চাল বার বার ধরা পড়ার পরও অদৃশ্য কারণে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে রাঘব-বোয়ালরা।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট