চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দু’শ টাকা কমে বাড়লো তিনশ টাকা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৭ জুন, ২০২২ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আউশ ধানের পুরো ক্ষেতই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। মার খেয়েছে বোরো চাষেও। সিলেটে আউশ ও বোরো ধানের ক্ষতির প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। গত দু’দিনে চালের দাম বস্তাপ্রতি ২-৩শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে, চালের ভরা মৌসুমে দাম বেড়ে যাওয়ায় চাল আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সরকার।

তবে ব্যবসায়ীরা জানান, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের আমদানি মূল্যও বেড়ে যাবে। আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ করা হলে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলে জানান আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম পূর্বকোণকে বলেন, ‘সিলেটে বন্যায় আউশ ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এর আগে বোরো ধানের ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।’

 

গত মাসে বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়েছিল। বড় মিলার ও শিল্প গ্রুপের মজুতদারির কারণে বস্তাপ্রতি ৩-৪শ টাকা বেড়েছিল বলে জানান ব্যবসায়ীরা। চালের বড় মৌসুমে দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার মজুতদারির বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপ করে। ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালায় চালের গুদামে। এরফলে ১০-১৫ দিন আগে চালের দাম বস্তাপ্রতি প্রায় দু’শ টাকা কমেছিল। কিন্তু সিলেটে বন্যার অজুহাতে দু-একদিনেই ফের আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

চালের বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ধান-চাল নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো। এখন উল্টো সেখানে চাল সরবরাহ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারের ধান-চাল কর্মসূচিও চলছে। এসব কারণে বাজারে চালের সংকট দেখা দিয়েছে। এরফলে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।’

তবে চাল আমদানি শুরু হলে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, বস্তাপ্রতি সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি প্রায় তিনশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩১শ টাকা থেকে তিন হাজার ৩৫০ টাকা দরে। নূরজাহান সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৩শ টাকা। মিনিকেট আতপ বিক্রি হচ্ছে ২৬-২৭শ টাকা। কাটারিভোগ ৩৩শ-৩৪৫০ টাকায়। মিনিকেট সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৪শ টাকায়। মোটা আতপ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়। গুঁটি সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৩শ টাকায়। মোটা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে ২১শ টাকায়। নূরজাহান সিদ্ধ ২৩শ টাকা, স্বর্ণাসিদ্ধ ২১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাল আমদানিতে শুল্ক হার ছিল ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ। চালের ভরা মৌসুমে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তা বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখবে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত বলেন, ‘বড় মিলার ও গ্রুপগুলোর কাছে প্রচুর পরিমাণ ধান-চাল মজুত রয়েছে। এখন বন্যার কারণে সুযোগ নিচ্ছেন তারা। আশা করছি, চাল আমদানির পর বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করছে সরকার। মিলারদের কাছ থেকে সরকার আতপ চাল কিনছে ৩৯ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৪০ টাকা দরে। ধান কিনছে কৃষকদের কাছ থেকে। সরকারের এ কর্মসূচির কারণে বাজারে ধানের দামও কিছুটা বাড়তি।

মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত বলেন, ধানের দাম বাড়তি থাকায় চালের দামও বাড়িয়েছেন মিলার ও ব্যবসায়ীরা।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘চাল আমদানির শুল্ক কমানোর ঘোষণায় মজুতদারিদের লাগাম টেনে ধরা যাবে। একই সঙ্গে বড় মোকাম ও শিল্প গ্রুপের গুদামে অভিযান পরিচালনা করা হলেই দাম কমে আসবে।’

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট