চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিপজ্জনক পণ্য অপসারণে ‘কঠোর অবস্থানে’ বন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জুন, ২০২২ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিপজ্জনক পণ্য থেকে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে থাকা প্রায় ২ হাজার ৬৪ একক বিপজ্জনক পণ্য দ্রুত সরাতে এবং বন্দরের দৈনন্দিন কাজে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহনের ঝুঁকি কমাতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত সপ্তাহে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক, শিপিং এজেন্টস, ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডর্সসহ সকল বন্দর স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠকে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে বিভিন্ন আলোচনা ও সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১৭ দফা সুপারিশ জারি করা হয়। যা সকল স্টেকহোল্ডারদের মেনে চলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

১৭ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনার ও কার্গো বন্দরে পৌঁছানোর তিন দিনের মধ্যে ডেলিভারি নিতে হবে। এছাড়া বন্দর স্টেকহোল্ডারদের আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস (আইএমডিজি) কোড মেনে চলার জন্য এবং আইজিএম’এ (ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট) বিপজ্জনক কনটেইনারগুলিকে সঠিকভাবে ঘোষণা করতে হবে। পাশপাশি বিপজ্জনক কার্গোকে যথাযথ লেবেল (স্টিকার) দিয়ে চিহ্নিত করে দিতে হবে।

যদি কোন বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনার যথাযথ চিহ্ন/লেভেল ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দরে আসে, তবে বন্দর ইয়ার্ডে আনলোড করার আগে বিপজ্জনক পণ্যের লেবেলগুলো অবশ্যই কনটেইনারের গায়ে লাগিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি বিপজ্জনক পণ্যের রপ্তানি কার্গোর স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং থাকতে হবে এবং বিপজ্জনক কার্গো আইন ১৯৫৩ এর সাথে সঙ্গতি রেখে প্যালেটাইজ করতে হবে।

কাস্টমসের কার্যক্রম প্রসঙে নির্দেশনায় বলা হয়, পণ্য দ্রুত খালাস নিশ্চিত করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনারগুলো পরীক্ষা করতে হবে। সমস্ত বিপজ্জনক কার্গো এবং পচনশীল পণ্যগুলি যদি সময়মতো ডেলিভারি না করা হয় তবে অবশ্যই নিলাম করতে হবে এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে পোর্ট ইয়ার্ডের জায়গা খালি করার জন্য স্পট বিডিং পরিচালনা করতে হবে।

আদেশে আরো বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে পি-শেড ও বাপেক্স ইয়ার্ডে মজুত থাকা বিপজ্জনক কার্গো আগামী সাত দিনের মধ্যে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করতে হবে।

কোনো আমদানিকারক যদি মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কার্গো নিয়ে আসে, তাহলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে কোনো পণ্য আনতে ওই আমদানিকারকদের নিষিদ্ধ করাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

জাহাজ থেকে কনটেইনার ইয়ার্ডে নামার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খালাস না হলে অতিরিক্ত সময়ের জন্য অর্থ আদায় করা হবে এবং সাধারণ স্টোরেজ চার্জের চেয়ে ১০ গুণ বেশি জরিমানা আদায় করতে পারবে।

ইতিমধ্যে ট্রাক ও ট্রেলারে ইস্পাতের কয়েল বহনকারী কিছু কনটেইনার শুল্ক বিলম্বের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বন্দরে আটকে আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসকে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কনটেইনার ছেড়ে দিতে এবং প্রযোজ্য শুল্কের বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে বলেছে। অন্যথায়, ট্রাক বা ট্রেলারগুলির জন্য স্বাভাবিক চার্জের চেয়ে ১০ গুণে পোর্ট স্টোরেজ চার্জ আদায় করবে বন্দর।

এসব নির্দেশনা প্রসঙ্গে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বিপজ্জনক পণ্য বন্দরের ইয়ার্ড থেকে দ্রুত খালাসের জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা পদেক্ষপ নিয়েছে। আমদানিকারকদের বার বার তাগাদাও দিয়েছে। কিন্তু অনেকে বিপজ্জনক ক্যাটাগরির পণ্য এনে বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে রাখে। এতে ঝুঁকিতে থাকে বন্দরের অভ্যন্তর। এখন কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে বন্দর। কারণ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক এটা বন্দর কর্তৃপক্ষ চায় না।

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট