চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিরিয়াল পেতেই এক মাস!

ইমাম হোসাইন রাজু

২৩ জুন, ২০২২ | ১২:৫৩ অপরাহ্ণ

মাঝে মধ্যে বুকে তীব্র ব্যথা ওঠা পঞ্চাশোর্ধ্ব আহমেদুর রহমানের (ছদ্মনাম) ধমনিতে ব্লক থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে চিকিৎসক পরামর্শ দেন এনজিওগ্রামের। কিন্তু বেসরকারি ল্যাবে এ পরীক্ষা করাতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তা কষ্টসাধ্য এ দিনমজুরের। বেসরকারির চেয়ে কয়েকগুণ কম মূল্যে এ পরীক্ষা করা যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। যার ফলে হাসপাতালে আসেন আহমেদুর রহমান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করলে জানানো হয় এনজিওগ্রাম করতে তাকে অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে এক মাস!
সংশ্লিষ্টরা কারণ হিসেবে বলছেন, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্যে একটি অকেজো থাকায় অন্য মেশিনের মাধ্যমেই কাজ করতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এছাড়া রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় সিরিয়াল পেতেই মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের সেবা দিতে হয় একই মেশিনে। তাতে করেই অতিরিক্ত চাপ থাকায় অপেক্ষা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ত্রুটি দেখা যায় হৃদরোগ বিভাগের একটি ক্যাথল্যাব মেশিনের। ওই সময়ে প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়া হলেও মেশিনটির ত্রুটি সারাতে আসা প্রকৌশলীরা জানান, মেশিনটির একটি টিউব নষ্ট। পাশাপাশি আরও কিছু ত্রুটিও ধরা পড়ে ওই সময়ে। যে কারণে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেড় কোটি টাকারও বেশি একটি খরচের তালিকা দেয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তরের কেন্দ্রীয় রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের মতামত না পাওয়ায় প্রায় দশ মাস পার হলেও ত্রুটি সারানো যায়নি।
যদিও ইতোমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে নতুন আরও একটি ক্যাথল্যাব মেশিনের চাহিদা এবং ত্রুটিপূর্ণ মেশিনটি দ্রুত সচল করতে সিএমএসডিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত ১৫ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান মেশিনটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে চিঠি পাঠান।
এদিকে, চিকিৎসকরা জানান, ক্যাথল্যাব বা কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেনশনের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি, ভাল্ব (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদযন্ত্রের রক্তের চাপ বুঝতে রোগীকে ক্যাথল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ত্রুটি ধরা পড়লে প্রয়োজন মতো রক্তনালীতে স্টেন্ট বা রিং পরানো, পেসমেকার বসানো, সংকুচিত ভাল্বকে ফোলানোসহ অস্ত্রোপচার করা হয়। হৃদরোগ বিভাগে মাত্র একটি ক্যাথল্যাবের উপর অতিরিক্ত চাপের কারণে সেটিও বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়বে। এতে করে সেটিও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পুরো বিভাগের এনজিওগ্রাম আর এনজিওপ্লাস্টি এবং পেসমেকার বসানোর কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ কারণে রোগীরাও সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে পূর্বকোণকে বলেন, ‘হৃদরোগ বিভাগে দুটি ক্যাথল্যাব মেশিন দিয়েই রোগীদের সেবা দেয়া হয়। কিন্তু একটি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় অন্যটি দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। এতে করে সেবাদানের ক্ষেত্রেও আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া একটি মেশিনের উপর যে পরিমাণ চাপ যাচ্ছে, তাতে আরও আতঙ্কে থাকতে হয়। যদি এটিও কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আর কাজ করাও যাবে না। তাই যত দ্রুত আরেকটি মেশিন চালু করা না যায়, ততই ভালো হয়।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘ত্রুটি থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাথল্যাবটি বন্ধ আছে। যদিও এটি সক্রিয় করতে প্রকৌশলীরা এসে দেখে গেছেন। বেশ চাহিদাও দিয়েছেন তারা। তবে আমরা কেন্দ্রীয় বিভাগের কাছে নতুন মেশিনের চাহিদার পাশাপাশি, এ মেশিনটিও সচল করতে চিঠি দিয়েছি। কেন্দ্রীয়ভাবে সাড়া পাওয়া গেলেই সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে।’

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট