চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

জিআইএস পদ্ধতিতে দেশে প্রথমবার হচ্ছে জনশুমারি

১৩ জুন, ২০২২ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ

ইফতেখারুল ইসলাম

দেশে প্রথমবারের মত হচ্ছে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) পদ্ধতির জনশুমারি ও গৃহগণনা। এর মাধ্যমে দ্রুত, সহজ ও নির্ভুলভাবে জনশুমারি পরিচালনা করা হবে। চাওয়া হবে ৩৫টি তথ্য। এবার কোন লিখিত ফরম থাকছে না। তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি মাঠকর্মীর হাতে থাকবে একটি করে ট্যাব। যার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য সরাসরি ডাটাবেইজে চলে যাবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশের ৬ষ্ঠ এ জনশুমারি আগামী ১৫ জুন থেকে শুরু হয়ে চলবে ২১ জুন পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার প্রথমবারের মত জিআইএস বা ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ভৌগলিক উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনে জনশুমারি জরিপ করা হবে। ইতোমধ্যে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশের সবগুলো জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের শুমারি ব্লক-গণনা এলাকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাছাড়া তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হবে কম্পিউটার এসিসটেড পারসনাল ইন্টারভিউং (সিএপিআই) পদ্ধতিতে। চট্টগ্রামে জনশুমারির তথ্য সংগ্রহে আছেন ৭ জন জেলা শুমারি সমন্বয়কারী, ৩০ জন উপজেলা শুমারি সমন্বয়কারী, ১৮৮ জন জোনাল অফিসার এবং ১৭ হাজার ৫০৫ জন মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহকারী।

এবারের জনশুমারিতে ৩৫টি তথ্য সংগ্রহ করা হবে। খানা বা ঘরের ক্রমিক নম্বর, ঠিকানা, বস্তি/ভাসমান, খানার ধরন, খানার প্রধান গৃহের প্রকার, খানায় ঘরের সংখ্যা, বাসস্থানের মালিকানা, খাবার পানির উৎস, টয়লেটের সুবিধা, টয়লেট ব্যবহারের ধরন, বিদ্যুৎ সুবিধার প্রধান উৎস, খানাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কিনা ? কৃষি বহির্ভুত কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আছে কি? খানার মোট সদস্য সংখ্যা, সদস্যের ক্রমিক নম্বর, সদস্যের নাম, বয়স, খানা প্রধানের সাথে সম্পর্ক, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, প্রতিব›দ্বী হলে তার ধরন, পড়তে ও লিখতে পারেন কি, বর্তমানে শিক্ষার্থী কিনা, সর্বোচ্চ শ্রেণি পাশ, পাশের ক্ষেত্র, গত ৭ দিনে কর্মরত ছিলেন কি? কর্মরত হলে কাজের ক্ষেত্র, গত ৩০ দিনে কাজ খুঁজেছেন কি? নিজ ব্যবহারের মোবাইল ফোন আছে কি? গত ৩ মাসে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন কি? বাংলাদেশি কিনা? বাংলাদেশি হলে নিজ জেলা এবং বিদেশি হলে দেশের নাম? খানা প্রধানের এনআইডি নম্বর।

চট্টগ্রাম জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান বলেন, প্রথমবারের মত ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে জনশুমারি করা হবে। শতভাগ নির্ভুলভাবে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ইতোমধ্যে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। একেকজন মাঠকর্মীকে নির্দিষ্ট এলাকার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ওই সুনির্দিষ্ট এলাকার তথ্য সংগ্রহ করবেন। তথ্যসমূহ তারা তাদের হাতে থাকা ট্যাবের মাধ্যমে সরাসরি ডাটাবেইজে সেভ করবে। এজন্য তাদেরকে জিআইএস পদ্ধতিতে এলাকাভিত্তিক ব্লক করে দেয়া হয়েছে। যাতে তারা তাদের কাজের সীমানা সহজেই বুঝতে পারে। শুমারি শুরু হওয়ার আগেই মাঠ কর্মীদেরকে তাদের জন্য নির্ধারিত এলাকা আগেই পরিদর্শন করানো হচ্ছে। তাছাড়া চলছে বিজ্ঞাপন, মাইকিং, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা।

এবারের জনশুমারির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব নিরুপণ, গৃহ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সরবরাহ, জাতীয় সম্পদের বণ্টন (বাজেট), নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ ও সরকারি চাকরিতে কোটা নির্ধারণ। তাছাড়া, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তথ্য সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশসমূহের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে জনশুমারিতে অন্তর্ভুক্তির প্রত্যয়নপত্রটি সহায়ক হবে।

তিনি জানান, এবার সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি করা হচ্ছে সম্পূর্ণ দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরিকল্পনায়। এখানে বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠানের কনসালটেন্সি নেয়া হয়নি। এমনকি মাঠ কর্মীরা যে ট্যাব ব্যবহার করবেন তাও ওয়ালটন থেকে কেনা।

উল্লেখ্য, স্বাধীন দেশে প্রথম জনশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। তখন দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৭১ লাখ এবং মহিলা ৩ কোটি ৭৪ লাখ। দ্বিতীয় জনশুমারি হয় ১৯৮১ সালে। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৯৯ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬৩ লাখ এবং মহিলা ৪ কোটি ৩৬ লাখ। তৃতীয় জনশুমারি হয় ১৯৯১ সালে। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১১ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৭৩ লাখ এবং মহিলা ৫ কোটি ৪২ লাখ। চতুর্থ জনশুমারি হয় ২০০১ সালে। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭৭ লাখ এবং মহিলা ৬ কোটি ২৮ লাখ। পঞ্চম জনশুমারি হয় ২০১১ সালে। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৭ কোটি ৫০ লাখ এবং মহিলা ৭ কোটি ৪৮ লাখ।

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট