চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে মাসে জমা পড়ে উত্ত্যক্তের ২৫ অভিযোগ

নাজিম মুহাম্মদ

১৩ জুন, ২০২২ | ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে নারীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা রয়েছে। অনেক সময় এ নিয়ে ঘটে মারামারি আর নানা ঘটনা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নারী উত্ত্যক্তের ধরণ পরিবর্তন হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নারী উত্ত্যক্তের ঘটনা বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়।

প্রতিমাসে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেন্দ্রিক নারী উত্ত্যক্ত সংক্রান্ত অভিযোগ আসছে ২০ থেকে ২৫টি। এরমধ্যে স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ বেশি। তবে অধিকাংশ লোক মান সম্মানের কথা বিবেচনা করে মামলা করতে আগ্রহী হয় না।

 

কাউন্টার টেরোরিজমের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক উল হক জানান, চলতি পথে কোন নারী উত্ত্যক্ত হলে মান সম্মানের ভয়ে কাউকে বলতো না। এখন সচেতনতা বেড়েছে। থানা কিংবা সাইবার ট্রাইবুনাল হয়ে আমাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ প্রায় সময় আসছে। এতে মেয়েরা আইনগত সহায়তা পাচ্ছে।

ডিসি ফারুকুল হক বলেন, কাউন্টার টেরোরিজমে সরাসরি মামলা রেকর্ড হয় না। থানা কিংবা সাইবার ট্রাইবুনাল ছাড়া অনেক মেয়ে পুলিশ কমিশনারের নিয়ন্ত্রণে থাকা হ্যালো সিএমপি কিংবা পুলিশ হেল্প লাইন অ্যাপসে অভিযোগ করছেন। অ্যাপসে আসা অনেক অভিযোগ আমরা তদন্ত করে আইনগত সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করছি।

 

কেস স্টাডি-১ : সুমাইয়ার (ছদ্মনাম) বাসা নগরীর শুলকবহর এলাকায়। পরিচয়ের সুবাধে খালাতো ভাইয়ের বন্ধু আরিফ উদ্দিনের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিছুদিন পর সুমাইয়ার বাগদান হয়। বিষয়টি জানার পর সুমাইয়ার সাথে সম্পর্ককালীন বিভিন্ন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। সুমাইয়ার আত্মীয় স্বজন ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের মুঠোফোনে হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে ছবি পাঠাতে থাকে। এরমধ্যে ফারাহ কামাল নামে একটি ফেসবুক আইডি খুলে অশালিন ক্যাপশান লিখে সুমাইয়ার পরিবারের ছবি আপলোড দেয়া শুরু করে। নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করে সুমাইয়া। গ্রেপ্তার করা হলে আরিফ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফেসবুকে, ম্যাসেঞ্জারে সুমাইয়াকে উত্ত্যক্ত করার কথা স্বীকার করেন।

কেস স্টাডি-২ : নগর গোয়েন্দা পুলিশকে জিইসি মোডে কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তি জানান, দীর্ঘদিন যাবত একব্যক্তি জিইসির মোড়সহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মার্কেটে আসা স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী, মহিলা অভিভাবক ও মার্কেটে আসা বিভিন্ন মহিলার সংবেদনশীল অঙ্গের স্থিরচিত্র ও ভিডিও তাদের অগোছরে তুলে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ‘টপ ফান আড্ডা’ ও পিটার রামপার নামক পেজে আপলোড করে। এতে মেয়েদের ব্যক্তিগত ও পারিববারিকভাবে সম্মানহানি হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তথ্য সীতাকুণ্ড থেকে গোলাম মোক্তাদির (২৩) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। মোক্তাদির ‘টপ ফান আড্ডা’ ও ‘পিটার রাম্পার’ নামক ফেসবুক আইডিতে বেশ কিছুদিন ধরে এসব ভিডিও পোস্ট করার কথা স্বীকার করে। তার দুটি মুঠোফোনে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী ও মহিলা অভিভাবকদের ২৪টি ভিডিও পাওয়া যায়। যা দুটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছে।

কেসস্টাডি-৩ : কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী রুমানা (ছদ্মনাম) কাউন্টার টেরোরিজমের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেন, কে বা কারা তাদের বাসায় পোশাক পরিবর্তনের স্পর্শকাতর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকের একটি ফেক আইডির মাধ্যমে আপলোড করে টাকা দাবি করছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্টার টেরোরিজমের সদস্যরা কোতোয়ালী থানার কাজী নজরুল ইসলাম রোডের মৃত টিংকু সেন শর্মার ছেলে অভিষেক সেন (২১) কে আটক করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইলে মেয়েদের নগ্ন ভিডিও উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফেক ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারী কোতোয়ালী থানার মিহম হেরিটেজ এলাকার সমর বড়ুয়ার ছেলে সুতনু সব্যসাচী ওরফে আদিত্য (১৮) কে নন্দনকান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুইজন পুলিশকে জানান, তারা অভিযোগকারীর বাসার জানালার ফাঁক দিয়ে কৌশলে ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করে মেয়েদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে।

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট