চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাহাড়খেকোর চোখ এবার মাঝেরঘোনায়

১১ জুন, ২০২২ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

নাজিম মুহাম্মদ

 

বায়েজিদ আরেফিন নগর বাজারের পাশ ঘেঁষে বাম পাশে সরু পথ দিয়ে যেতেই চোখে পড়বে সারি সারি পাহাড়। ঘন সবুজ প্রকৃতির নয়নাভিরাম এ পাহাড় ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে পাহাড় খেকোদের কোদাল আর খুন্তির কোপে। বর্ষা মৌসুম এলেই কেটে দেয়া হয় পাহাড়ের ঢালু অংশ ও পাদদেশ। অঝোর ধারায় যখন বৃষ্টি পড়ে তখন ধসে পড়ে পাহাড়ের মাটি। পরে প্লট আকারে বিক্রি করা হয়। আয়তনভেদে একেকটি প্লটের দাম পড়ে ৩০ হাজার টাকা থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। অবৈধভাবে প্লট তৈরি করে লাখ লাখ টাকায় কেনাবেচা চলছে কয়েক মাস ধরে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, আরেফিন নগর মাঝেরঘোনা এলাকায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। কোন পাহাড়ের পাদদেশে, আবার কোন পাহাড়ের বুক চিরে মাটি কেটে প্লট তৈরি করা হয়েছে। ঘরের আশপাশে রোপণ করা হয়েছে কলাগাছ। স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহজাহান বাদশা ওরফে লাল বাদশা আর আজিজুল হক নামে এক ব্যক্তি প্লটগুলো বিক্রি করেছে। উচ্ছেদ ঠেকাতে পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি করা হয়েছে একাধিক মন্দির। পাহাড় কেটে ৩০ হাজার টাকায় আনুমানিক দুই কাঠার একেকটি প্লট বিক্রি করেছে বাদশার ভাই কামাল। তাদের পাশাপাশি প্লটগুলো বিক্রি করা হচ্ছে মনিকা নামের এক মহিলার মাধ্যমে। আরেফিন নগর বাজার থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধা থাকার কারণে মাঝেরঘোনা পাহাড়ি এলাকাটি দখল করেছে পাহাড়খেকোরা। দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে কেটে তৈরি করা হয়েছে সরু রাস্তা। একটু সামনে যেতেই দেখা গেলো পাশাপাশি কয়েকটি পাহাড়ের পাদদেশ কেটে তৈরি করা হয়েছে প্লট। চারপাশে লাগানো হয়েছে কলাগাছ। দেখেই বোঝা যায় সেখানে কয়দিন পর তৈরি করা হবে বসতঘর। এলাকার পাহাড়গুলো বাদশার নিয়ন্ত্রণে। তিনিই পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে ভাই ও মনিকা নামের মহিলার মাধ্যমে বিক্রি করেন। মন্দিরের জমিও দিয়েছেন বাদশা।
বায়েজিদ থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানান, বাদশা আর আরিফ নামে দুই ব্যক্তি সেখানে পাহাড় দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিছুদিন আগে মাঝেরঘোনা সমাজ কল্যাণ হাউজিং সোসাইটি নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বেশ কিছু সরকারি পাহাড় দখল করা হয়েছিল। পরে লাল বাদশা ও জনৈক আজিজ বঙ্গবন্ধু হজ প্রশিক্ষণ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জমিটি দখল করে। সেটিও উচ্ছেদ করা হয়। এরমধ্যে বাদশা তার লোকজন দিয়ে ফের সেখানে পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করছে।
ওসি বলেন, বাদশা ছাড়া আরিফ নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। দুজনেই পাহাড় দখল-বেদখলের সাথে জড়িত। বাদশার বিরুদ্ধে বায়েজিদ ও সীতাকুণ্ড থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে, আরিফের বিরুদ্ধে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী, ডবলমুরিং ও ভুজপুর থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আরিফ জানান, মাঝেরঘোনা এলাকায় সমিতির নামে যে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল সেটি তার পৈতৃক জমি। তিনি সরকারি পাহাড় দখল করেননি। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে সবই মিথ্যা।
পরিবেশ দপ্তরের অভিযান, মামলা : এদিকে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত আরেফিন নগরের মাঝের এলাকায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও বায়েজিদ থানা পুলিশ।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মতিন বাদী হয়ে বায়েজিদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনসহ আটজনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, মাঝেরঘোনার মৃত দুধ মিয়ার ছেলে শাহজাহান বাদশা প্রকাশ লাল বাদশা, মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মো. আরিফ, আরেফিন নগরের মৃত বজল আহমদের ছেলে আজিজুল হক, খাগড়াছড়ির মৃত রূপায়ন চাকমার ছেলে জ্ঞান জ্যোতি ভিক্ষু, বাঁশখালীর গন্ডামারার মোজাহেরের ছেলে বেলাল উদ্দিন মিজান, পুঁইছড়ির মৃত কবির আহমদের ছেলে সারোয়ার আলম, কালুরঘাট সিএন্ডবি এলাকার মৃত নাছিমুদ্দিনের ছেলে নুরুল আমিন ও খাগড়াছড়ির গুইমারার মৃত কংলাশো মার্মার ছেলে অংশি মার্মা। তাদের সবার বিরুদ্ধে পাহাড় কেটে বাড়ি তৈরি, প্লট আকারে বিক্রি ও মন্দির তৈরি করে পাহাড় দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট