চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

তাদের ভয়, এই বুঝি হারিয়ে গেল চোখের আলো

৯ জুন, ২০২২ | ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

ইমাম হোসাইন রাজু 

মো. সজীব। সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে পন্য খালাসের কাজ করতেন তিনি। গত শনিবার ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কবলে পড়েন সজীবও। এতে তার শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। যদিও সেই ক্ষত ধীরে ধীরেই শুকিয়ে আসছে। কিন্তু সজীবের ভয়-চোখ নিয়ে।
সজীব জানান, ঘটনার দিন তার কেমিক্যাল আর গ্লাসের গুঁড়ো পড়ায় চোখে এখন ঝাপসা দেখছেন। পাশাপাশি আলোর দিকে তাকাতেও সমস্যা হচ্ছে তার। যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তিনি।
সজীবের মতো চোখের ঝাপসা দেখা আর জ্বালাপোড়া এবং মাথা ব্যাথা রয়েছে একই ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত রাশেদ নামে আরও এক যুবকের। তিনিও বিএম কন্টেইনার ডিপোতে গত ৮ বছর ধরে অপারেটরের কাজ করে আসছেন। ঘটনার দিন তার শরীরের কিছু অংশ পুড়ে গেলেও চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান রাশেদ। কিন্তু চোখের সমস্যা গুরুতর হওয়ায় তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ধর্না দেন চমেক হাসপাতালে। একই সমস্যা নিয়ে বর্তমানে রাশেদ এবং সজীব দুই জনেই ভর্তি আছেন চমেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে।
শুধু রাশেদ আর সজীবের ক্ষেত্রেই নয়। চোখ নিয়ে মনে ভয় ঢুকেছে অগ্নিকাণ্ডের আহত হওয়া অনেকের মনেই। কেননা- হাসপাতালে ভর্তিরতদের মধ্যে এখনও অনেকেই চোখের সমস্যায় ভুগছেন। যাদের বেশিরভাগরই চোখে ঝাপসা দেখা, আলোতে তাকাতে না পারা, অনর্গল চোখ দিয়ে পানি পড়া, জ্বালাপোড়া, মাথা ব্যথাসহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার কারণে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যেই আছেন তারা।
এ যেমন দীর্ঘ সাত বছর ধরে বিএম ডিপোতে ক্রেন চালক হিসেবে কাজ করা সালাউদ্দিনের মনেও ভয় কাজ করছে। সালাউদ্দিন বলেন, ‘মনে হয় চোখে গ্লাসের গুঁড়ি পড়েছে। এখনও ঠিক মতো দেখতে পাই না। চোখ দিয়ে শুধু পানিই যাচ্ছে। সামনের কিছুই দেখা যায় না। সব কিছুই ঝাপসা দেখছি। খুব ভয় লাগছে, যদি চোখে না দেখতে পাই। তাহলে আমার পরিবারকে কে চালাবে? আমি কীভাবে গাড়ি চালাবো? এখনই মোবাইলে কিছু দেখি না। তাকাতেই পারছি না। আমার পরিবার আমার উপর নির্ভরশীল। আমি ছাড়া আর কেউই নেই। আমার সবকিছু শেষ।’
মনে ভয় থাকলেও যেকোনভাবে চোখের আলো ফিরে পেতে চান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম কাভার্ডভ্যান চালক ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, আমার উপরেই পরিবারের ভরসা। শরীরের যা হয়েছে, তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু চোখ যেন ভালো হয়ে যায়। তাতে যেনতেনভাবে হলেও সংসার চালাতে পারবো। কিন্তু আলো চলে গেলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমিতো এখন চোখে ঠিক মতো দেখছি না। ’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের অগ্নিদুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে সিংহভাগেরই চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৩ জনকে চিহ্নিতও করেছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা। চিহ্নিতের দুই দিন পর আরও দুইজন একই সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এছাড়া ৭ জনকে ইতোমধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা- এর বাইরেও আরও বহু মানুষের একই সমস্যা থাকতে পারে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন- দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা গ্রহণ করলে এবং উন্নত চিকিৎসা পেলে এসব রোগীরা সমস্যা থেকে বাঁচতে পারবে। তবে শঙ্কা রয়েছে- সঠিক চিকিৎসা না পেলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগবেন তারা।
দেশের প্রখ্যাত চক্ষু চিকিৎসক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চক্ষু চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, কেমিক্যাল ইনজুরির কারণে আহতদের চোখে সমস্যা হয়েছে। তবে উন্নত চিকিৎসা পেলে সবার সমস্যা দূর হবে বলে আশা করা যায়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এখন সঠিক করে কিছু বলা যাবে না। আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান ডা. তনুজা তানজিন বলেন, আগুন ও রাসায়নিক পদার্থের কারণেই সবার চোখে সমস্যা হয়েছে। তবে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভাল হয়ে যাবে। বাকি যারা আছে তাদের অবশ্যই কিছুদিন চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট