চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাসা থেকে নিয়ে স্কুলছাত্র খুন, তিনজনের ফাঁসি

একজনের যাবজ্জীবন

আদালত প্রতিবেদক

২ আগস্ট, ২০১৯ | ২:২২ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অপহরণের পর জবাই করে ১৫ বছরের কিশোর সাকিব হত্যা মামলার রায়ে আদালত ৩ আসামির মৃত্যুদ- ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দিয়েছেন। মৃত্যুদ-াদেশ প্রাপ্ত একজন ও যাবজ্জীবন প্রাপ্ত এক আসামি পরস্পর আপন ভাই। গতকাল (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত ) মুন্সী আবদুল মজিদ এ রায় দেন।
মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, কাজী মো. সরওয়ার উদ্দিন (২৯)। তিনি জোরারগঞ্জ থানার উত্তর মোবারকঘোনার জনৈক মোস্তফা কামালের ছেলে। তিনি পলাতক রয়েছেন। একই এলাকার দক্ষিণ আলীনগরের জনৈক কামাল উদ্দিনের ছেলে শহীদুল ইসলাম (১৯) এবং জনৈক মৃত আবু তাহের ওরফে গুরা মিয়ার ছেলে মীর হোসেন (২৮)। একই রায়ে পৃথক ধারায় অপহরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসির আসামি সরওয়ারের ১০ বছর সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়। এছাড়া শহীদ ও মীর হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদ-ের আদেশ দেয়া হয়েছে। মৃতুদ-াদেশপ্রাপ্ত আসামি সরোয়ারের আপন ভাই হোসনে মোবারক রুবেলকে (২৪) যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন আদালত।
তিন আসামির উপস্থিতিতে আদালত রায় ঘোষণা করার পর আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়।
জোরারগঞ্জ জেবি স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র সাকিব ফারহানকে ২০১৫ সালের ৬ জুন বাড়ি থেকে ডেকে নেয় আসামি সরওয়ার। এরপর তাকে নয়াটিলায় নিয়ে হাত-পা বেঁেধ জবাই করে খুন করে।
জেলা পিপি এডভোকেট এ.কে.এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, তাই আদালত এ রায় দিয়েছেন।
মামলার বাদি ও ভুক্তভোগী সাকিবের বড়ভাই মো. শহীদুল ইসলাম রুবেল পূর্বকোণকে বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকলে আমার ছোটভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।
আদালতসূত্রে জানা যায়, আসামি সরওয়ার উদ্দিন ও ভুক্তভোগীরা একই এলাকার বাসিন্দা। সরওয়ারকে সাকিব কাকা ডাকতো। সরওয়ারদের একসময় আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলেও পরে ঋণগ্রস্ত হয়ে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়ে। তাই সরোয়ের ভাই ও অন্যরা মিলে সাকিবকে অপহরণ করে মুক্তিপণের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন সাকিবের ষান্মাসিক পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর বিকেল ৩ টার দিকে তার মুঠোফোনে একটি ফোন আসে। ফোন পেয়ে বের হওয়ার সময় তার মা ও বোন কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় সরওয়ার কাকা ফোন করেছে, তার সাথে দেখা করে ফিরে আসব। এরপর বাড়ির পূর্বপাশে সরওয়ারের সাথে দেখা হওয়ার পর সেখানে আগে থেকে রাখা একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয় সাকিবকে। বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে নয়াটিলা পাহাড়ে নিয়ে যায় আসামিরা। পাহাড়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখার পরে মুক্তিপণ দাবি করে বিপদে পড়ে যাবে বুঝতে পেরে আসামিরা নয়াটিলা পাহাড়ে সাকিবের হাত-পা ও চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তাকে ছুরি দিয়ে জবাই করে। জবাইয়ের পরও ভুক্তভোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাকে আসামিরা কোপায় বলে দুই আসামির আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে। এদিকে, সাকিব না ফেরায় তার আপন বড়ভাই জোরারগঞ্জ থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন ।
অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নয়াটিলা পাহাড় থেকে ঘটনার ৫ দিন পর ফারহান সাকিবের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এরপর মামলাটি অপহরণ ও হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তর হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ৪ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও খুনের অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দেয়। তম্মধ্যে একই ঘটনায় শহীদ নামের আরো এক আসামি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পৃথক চার্জশিট দেয়া হয়। শহীদের বিরুদ্ধে একই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল -৭ এ বিচার চলমান রয়েছে।
৪ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর চার্জগঠনের পর আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় আদালত এ রায় দেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট