চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে একদিনেই ৩৬ রোগী

তথ্য সেল নেই : চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ আগস্ট, ২০১৯ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সেল থাকলেও চট্টগ্রামে এ ধরণের কোনো তথ্যসেল না থাকায় এক ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তথ্য বিভ্রান্তির কারণে সেবা প্রদানে সমন্বয়ের অভাবের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মুখে শোনা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয় না থাকার কারণেই এ ধরণের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
গত বুধবার পর্যন্ত এ তিন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৯২ জনের কথা বলা হয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার হঠাৎ তিন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে অমিল দেখা যায়। চট্টগ্রামে গত একমাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২৪৫ জন। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রামে গত একমাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তিনশ’ ছাড়িয়ে গেছে। যার হিসেব এই তিন সংস্থার কারও কাছেই নেই। এছাড়া গত ২০ জুলাই নগরীর রয়েল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১১ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হলেও সে হিসেবেও নেই সংস্থাগুলোর কাছে। যদিও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুষছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সকল হাসপাতালে তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এখন তারা যদি আমাদের তথ্য না দেয়, সে হিসেব আমরা কিভাবে নিবো। বিষয়টি জানার পরও কেন হিসেবে রাখা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আলাদা একটি কন্ট্রোল রুম রয়েছে, তারাই এ বিষয়টি দেখছেন। তারাই বলতে পারবে’।
এ দিকে এসবের মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ৩৬ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মাধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৮ জন, ইউএসটিসি হাসপাতালে ১ জন, বেসরকারি মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ৫ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ১ জন, ম্যাক্স হাসপাতালে ১ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ২ জন পটিয়া উপজেলায় ২জন এবং সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে ৪ জন রোগী শনাক্ত করা হয়।
তথ্য মতে, জুলাই মাসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিল ১৩০ জন রোগী। তারমধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৫ জন রোগী ছাড় পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকি ৭৫ জন রোগী হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসাধীন। আর চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের আওতায় নগরীর বেসরকারি ও উপজেলাগুলোতে এ রোগে আক্রান্তে সংখ্যা ছিল ১০৪ জন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে তারা পেয়েছেন ১১ জন রোগী। সংশ্লিষ্ট এ তিন স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব মতে, শেষ হওয়া জুলাইমাসেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪৫ জনের। এর বাইরে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতার কর্তৃপক্ষ ৬জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেন। তাদের দেয়া হিসেব অনুযায়ী, এই বছরেই ২৫১ জন ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়ে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য কাগজে কলমে ও বাস্তাবে একেক রকম পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ একধরণের তথ্য দিলেও ডেঙ্গু কর্ণার বা ওয়ার্ড কর্তৃক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে অন্যরকম তথ্য। তাদের মধ্যেই রয়েছে তথ্য সমন্বয়হীনতা। যা নিয়ে স্বয়ং সংবাদকর্মীরাও মাঝেমধ্যে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
একাধিক সংবাদকর্মী এ বিষয়ে পূর্বকোণকে বলেন, ‘হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কাগজে কলমে যে হিসেব আমাদের দেয়, কিন্তু ওয়ার্ডে গিয়ে তথ্য পাওয়া যায় অন্যরকম। ওয়ার্ড ও প্রশাসনের তথ্যে মিল নেই। তাছাড়া যথাসময়ে তাদের কাছ থেকে তথ্যও পাওয়া যায় না’।
এ বিষয়ে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর পূর্বকোণকে বলেন, ‘সমন্বয় নেই তা নয়। মূল কথা হচ্ছে তিনটি বিষয়ে আলাদাভাবে তারা কাজ করছেন। সিটি কর্পোরেশন আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। শুধুমাত্র সিভিল সার্জন কার্যালয় থাকলেও চমেক হাসপাতাল আবার সরাসরি মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখছে। তাই এমন হচ্ছে। তবে আগে সিভিল সার্জন কার্যালয় নিজেই এসব তথ্য সংগ্রহ করলেও, চমেক হাসপাতালের হিসেব নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ায়, গত সপ্তাহ থেকে আলাদা করেই তথ্য দিতে বলা হয়েছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট