চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৪৮ ঘণ্টায় জাহাজের জেটি ত্যাগের নির্দেশনা শিথিল চায় বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ জুন, ২০২২ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

বিদ্যমান সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডেলিং ও দক্ষতা বাড়াতে ১৫শ একক এর কম বহনকারী কনটেইনার জাহাজকে ৪৮ঘণ্টার মধ্যে পণ্য উঠানামার কাজ শেষে করে জেটি ত্যাগের নির্দেশনা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরের এক বার্থিং মিটিংয়ে শিপিং এজেন্টসদের এই নিয়ম পালনের নির্দেশনা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
তবে এই নির্দেশনা মানতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের রপ্তানিকারকগণ। নির্ধারিত সময়ে জাহাজ ছাড়তে গিয়ে গত ১ জুন ‘এইচ আর আরি’ নামের জাহাজ ৫৪ একক এবং ৪ জুন ‘এইচ আর হেরা’ নামের আরেকটি জাহাজ ২২ একক বুকিংকৃত রপ্তানি কনটেইনার না নিয়ে জেটি ত্যাগ করে।
নির্দেশনা মানতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, করোনা পরবর্তী দেশের গার্মেন্টস শিল্প কারখানাগুলো দিন দিন বেশি পরিমাণে বিদেশি ক্রেতাদের রপ্তানি আদেশ পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় পোশাক রপ্তানিতে বর্তমান প্রবৃদ্ধি গেল এপ্রিলে ৩৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং মে মাসে ৩৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে (লিড টাইম) রপ্তানি পণ্য চালান জাহাজীকরণে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বন্দরের জাহাজকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জেটি ত্যাগ করার বাধ্যবাধকতায় কয়েকটি নির্দিষ্ট সমস্যার কারণে যথাসময়ে জাহাজীকরণ করা সম্ভব হবে না।
ওইসব সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি চালান জাহাজীকরণে ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ দূরবর্তী অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামস্থ প্রাইভেট আইসিডিসমূহে সড়ক যোগ আসে। ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রায়শঃ তীব্র যানজটের কারণে চট্টগ্রামস্থ প্রাইভেট আইসিডিসমূহে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পৌঁছানো সম্ভবপর হয়ে উঠে না। এছাড়া প্রাইভেট আইসিডিসমূহের অবকাঠামোগত সমস্যা, পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে জায়গার স্বল্পতা, ইক্যুপমেন্ট স্বল্পতা, কাস্টামস ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি সময়ের কারণে নির্ধারিত সময়ে বন্দরে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
তিনি আরো বলেন, জাহাজ বার্থে আসার পূর্বেই কনটেইনার সংরক্ষণের জন্য বন্দরে অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাইভেট আইসিডি থেকে কনটেইনার সরাসরি জাহাজের হুক পয়েন্টে পাঠাতে হচ্ছে। ফলে প্রাইভেট আইসিডির টেইলারগুলোর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে রপ্তানিবাহী কনটেইনার প্রেরণে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া বন্দর জিসিবি’র কার্গো বার্থে গ্যান্টি ক্রেন না থাকায় জাহাজের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং করা হয়। ফলে হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে উৎপাদনশীলতা কম। এক্ষেত্রে জিসিবি’র বার্থে থাকা জাহাজের হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে বেশি সময়ের প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় কমানোর জন্য জেটিতে জাহাজ থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য চালান দ্রুত লোডিং-আনলোডিং সম্পন্ন করে জাহাজ যথাসময়ে বন্দর জেটি ত্যাগ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কারণ চট্টগ্রাম বন্দরে গত কয়েক বছর ধরে নতুন জেটিতে জাহাজ না ভিড়লেও বিদ্যামান জেটিতেই পণ্য হ্যান্ডেলিং করে বছরে বছরে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো পণ্য হ্যান্ডেলিং বেড়েছে। ভবিষ্যতেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে হ্যান্ডেলিং বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। সে কারণে কিছু পদক্ষেপ দিতে হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
তিনি আরো বলেন, ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে বোঝা যায় বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটি আরো বাড়াতে হলে বন্দরের জেটিতে বেশি কনটেইনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো প্রয়োজন। এতে হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বাড়বে এবং ব্যবসায়ীদের খরচও কমবে। এজন্য বড় জাহাজ ভেড়ানোকে উৎসাহী করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য রপ্তানিকারকগণ কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হলে তা অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বন্দর।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট