চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

মামলায় প্রকল্প বাতিলের শঙ্কা

৪ জুন, ২০২২ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ আলী 

 

চট্টগ্রামে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি) নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভূমি সংক্রান্ত দুই দফা মামলার কারণে তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পটি ৮ বছরেও শুরু করা যায়নি। এ কারণে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি নির্মাণ প্রকল্পটি বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি’ প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য নগরীর বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর পাড়ে আড়াই একর ভূমি চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। এজন্য জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ সব টাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখাকে প্রদান করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে বাকলিয়ার জনৈক মোহাম্মদ ফোরকান আদালতে মামলা করলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায় প্রকল্পটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. হারুণ উর রশীদ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘জনৈক মোহাম্মদ ইউনুছের কাছ থেকে অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামায় জমি ক্রয় করেন মোহাম্মদ ফোরকান। জমি বিক্রয়ের কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করেন মোহাম্মদ ইউনুছ। পরে এ জায়গায় ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি প্রতিষ্ঠার জন্য চূড়ান্ত করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ভূমির মালিক মোহাম্মদ ফোরকান জেলা প্রশাসনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে জমির ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করেন। কিন্তু এ আবেদনে বাগড়া সাজে মোহাম্মদ ইউনুছের মেয়েরা। তারাও জমির মালিকানা দাবি করে জেলা প্রশাসনে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করেন। এ অবস্থায় মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা ক্ষতিপূরণ প্রদান বন্ধ রাখে। তাতে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আদালতে মামলা করেন মোহাম্মদ ফোরকান।’
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে সারাদেশে ৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) এবং চট্টগ্রামে ১টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। পুরো প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৬৬৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ৪০টি টিটিসি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে ৮ বছরেও শুরু করা যায়নি চট্টগ্রামে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি নির্মাণের কাজ। এটি নির্মাণে নগরীর বাকলিয়া এলাকায় আড়াই একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। কিন্তু ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার শঙ্কা মধ্যে পড়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় মেরিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য নগরীর বাকলিয়ায় কিছু খাস জায়গা অধিগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু একটি ছিন্নমূল সংগঠনের নেতারা জায়গার মালিকানা দাবি করে মামলা করলে প্রথম হোঁচট খায় প্রকল্পটি। এরপর দ্বিতীয়বার ভিন্ন জায়গা জমি চূড়ান্ত করার শেষ পর্যায়ে এসে আবারও মামলার শিকার হতে হলো। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি নির্মাণ বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল।’
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরে বন্দর থানা সংলগ্ন এলাকায় ১৯৫৮ সালে একটি মেরিন ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠে। এটির নাম- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (বিআইএমটি)। এখানে পড়াশোনা করেন ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। ১০ একর জমির ওপর এই ইনস্টিটিউট অবস্থিত, যার তিন দিকেই শীতলক্ষ্যা নদী এবং ত্রিবেনী খাল অবস্থিত। এটি হল একটি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, যেখানে মেরিন এবং শিপ বিল্ডিং প্রযুক্তিতে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয়। বিআইএমটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নের জন্য চারটি পৃথক কোর্সও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়াও একই বিষয়ে দুই বছর মেয়াদি ট্রেড কোর্স ও শর্ট কোর্স করা হয়। ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির জন্য মাধ্যমিক বা সমমান পাস হতে হয় এবং ট্রেড কোর্সে ভর্তির জন্য উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমান পাস হতে হয়। মূলত নারায়ণগঞ্জের আদলে চট্টগ্রামে ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি’ নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করে স্বল্প খরচে দেশে-বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার সুযোগও রয়েছে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, জাপান, ইংল্যান্ড, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইয়ে চাকরির সুযোগ থাকবে। এছাড়াও দেশি-বিদেশি জাহাজ, শিপ ইয়ার্ড ও ডক ইয়ার্ড, পাওয়ার প্লান্ট, ডিজাইন সেকশন, সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে খুব কম খরচে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের উদীয়মান জাহাজ নির্মাণ শিল্পে এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হতো বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট