চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রবাসী বাবার বিশ্বাস হচ্ছে না ছেলে কথা বলছে

৩১ মে, ২০২২ | ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ

ইমাম হোসাইন রাজু 

‘রিয়ানের বয়স বাড়ছে, কিন্তু তার হাসি আর কান্না ছাড়া মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছে না। অথচ তার সঙ্গের শিশুরা খেলছে, কথা বলছে, মাকে মা বলে ডাকছে। অন্যদের মা বলে ডাকা দেখে তখন খুবই কষ্ট লাগতো। কত জায়গায় গিয়েছি, তা বলার বাহিরে। যে যেভাবে বলেছিল, সেভাবে করেছি। কিন্তু কোন ফল দেখিনি। এক পর্যায়ে আশাও ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু ডিভাইসটি স্থাপনের পর প্রথম যেদিন রিয়ান মা বলে ডেকেছিল, তখন সব কষ্ট দূর হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস করতেও পারছিলাম না, রিয়ান কথা বলতে শুরু করছে।’
কথাগুলো বলেন, লোহাগাড়ার বাসিন্দা রিয়ান নামের এক শ্রবণ প্রতিবন্ধীর মা মেজবাহ জাহান। রিয়ান চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টারে সম্প্রতি কক্লিয়ার ডিভাইস স্থাপন করে কথা বলতে শুরু করেছে। ৭ বছর ২ মাস বয়সী এ শিশুর সফল অস্ত্রোপচার হয় সিএমএইচ হাসপাতালেই।
কক্লিয়ার ডিভাইসের সম্পর্কে জানতে চাইলে রিয়ানের মা বলেন, ‘আমি কখনই কল্পনা করিনি, রিয়ান কথা বলতে পারবে। তার বাবাও বিশ্বাস করতে পারছে না। রিয়ান সাত বছর পর তার বাবাকে বাবা বলে আর আমাকে মা বলে ডেকেছে। আসলে সাত বছর পর মা বলে ডাক শুনতে পেয়ে কী যেন অনুভূতি লাগছে, সেটি কাউকে বুঝাতে পারবো না। একসময়ে সে শুনতে পারতো না, কথা বলতে পারতো না, এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কথা বলতে শিখছে। পড়াশোনাও করানোর চেষ্টা চলছে। সপ্তাহে দুদিন তাকে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টারে নিয়ে আসা হয়, সেখানের চিকিৎসকরা তাকে সময় দিয়ে শেখাচ্ছেন। আল্লাহর রহমতে সে খুব দ্রুতই সবকিছু আয়ত্বে নিতে পারছে।’
আগে শতবার ডাকলেও আমার ছেলে একটুর জন্যও তাকাতো না। কিন্তু মেশিনটি যেদিন স্থাপন করা হয়, সেদিনের পর রিয়ান নাম বললেই সে আমার দিকে তাকায়। আমিও ইচ্ছে করে অন্য রুমে বা ওয়াশরুমে গিয়ে রিয়ান বলে তাকে ডাক দেই। তখন দেখি সে শুনে দৌড়ে আমার কাছে চলে আসছে।’
ছেলে কথা বলতে পারতো না, এ জন্য আশপাশে মানুষ কত কথা বলতো উল্লেখ করে কান্নাকণ্ঠে রিয়ানের মা মেজবাহ বলেন, যাদের এমন বাচ্চা আছে, তারাই বুঝে কেমন কষ্ট। পরিবার, সমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের কথা শুনতে হয়েছে। বোবা ছেলে জন্ম দিয়েছি, জীবনে কথা বলতে পারবে না, তবুও টাকা খরচ করছো এমন আজেবাজে কথাও শুনতে হয়েছিল।’
এ সেন্টারের খবর কীভাবে পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার এত পরিচিতজন একটা বিজ্ঞপ্তি আমাকে পাঠায়, সেখানে এ ঠিকানাটি ছিল। তখন আমি আরও খোঁজ নিয়ে যোগাযোগ করি। একটা খবরও পড়ি, প্রথমে একটু ভয় ছিল, অনেকেই বলেছি, অপারেশন করলে মুখ বাঁকা হয়ে যায়। নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, না এটিই এমন শিশুদের জন্য সঠিক চিকিৎসা। আমারও দেরি হয়ে গেছে, আরও আগে আসা উচিত ছিল।’
কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের বিষয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ক্লাসিফাইড ইএনটি বিশেষজ্ঞ, হেড-নেক ও কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জন ডা. লে. কর্নেল মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা বধির বলতে কিছুই নেই। মূলত মানুষের কানের তিনটি অংশের একটি অন্তঃকর্ণের ভেতর শামুকের মতো দেখতে যে নালিটি থাকে, সেখানে বালুকণার চেয়ে ছোট কিছু কোষ থাকে। আর এই কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষ আর শুনতে পায় না। কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট নামের এই যন্ত্রটি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মানুষ তার শ্রবণ ক্ষমতা ফিরে পেতে পারে। যা আমাদের এ সেন্টারে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম সিএমএইচ-এ যাত্রা শুরু হয় কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টারের সেবা কার্যক্রম। যেখানে সফল অস্ত্রোপচারের পর একশ’র কাছাকাছি শিশুর ইতোমধ্যে বসানো হয় কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস। ডিভাইস বসানো শিশুরা ইতোমধ্যে কথা বলতে শুরু করছে।

পূর্বকোণ/এস 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট