চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জটিলতা কাটিয়ে বাস্তবায়নের পথে নগরীর দুই সরকারি স্কুল

৩১ মে, ২০২২ | ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ইমরান বিন ছবুর 

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের জটিলতা কেটেছে। ২০১৮ সালে এসব স্কুল স্থাপনের প্রকল্প নেওয়া হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল কাজ। এখন ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা কেটে যাওয়ায় শীঘ্রই স্কুল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে ৫৫ বছর পর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে নতুন সরকারি বিদ্যালয় স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি স্থাপন করা হচ্ছে পূর্ব পতেঙ্গার বিজয় নগর এলাকায়। এই এলাকার শূন্য দশমিক ৮১৯৫ একর জমিতে বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এই জায়গা অধিগ্রহণ শেষে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
গত ৫ এপ্রিল ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক কাজী সাখাওয়াত হোসেন, সিভিল এভিয়েশন প্রতিনিধি মো. মশিউর রহমান (সহকারী পরিচালক প্রশাসন), জেলা শিক্ষা অফিসার প্রতিনিধি মো. আলমগীর হোসেন, শিক্ষা প্রকৌশল প্রতিনিধি দিলীপ কুমার নাথ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রতিনিধিসহ সকলের উপস্থিতিতে এসব জমি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্য বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হচ্ছে উত্তর পতেঙ্গার স্টিল মিল এলাকার আম্বিয়া ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। এই এলাকার প্রায় দুই একর জমিতে স্থাপন করা হচ্ছে বিদ্যালয়টি। এই বিদ্যালয়ের জমি শীঘ্রই অধিগ্রহণ করে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল জানিয়েছেন।
মাসুদ কামাল জানান, দীর্ঘদিন খুঁজেও নগরীতে সরকারি বিদ্যালয়ের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে পূর্ব পতেঙ্গার বিজয় নগর এলাকায় একটি জায়গা সিভিল এভিয়েশন থেকে পেয়েছি। যেটি ভূমি অধিগ্রহণ শেষে আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দিয়েছি। উত্তর পতেঙ্গা এলাকায় অন্য জায়গাটির অধিগ্রহণের কাজ চলছে। শীঘ্রই অধিগ্রহণ শেষে সেটিও বুঝিয়ে দেয়া হবে।
মাউশি সূত্রে জানা যায়, এসব বিদ্যালয়ে থাকবে আধুনিক ভৌত অবকাঠামো সুবিধা ও যুগোপযোগী শিক্ষা সামগ্রী। ভবন হবে ১০ তলা বিশিষ্ট। থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি আইসিটি ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, মাল্টিপারপাস হল রুম। এছাড়া ইন্টারনেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, বই-পুস্তক, খেলাধুলার সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র থাকবে।
স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামে নতুন কোনো সরকারি বিদ্যালয় স্থাপন না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের শিক্ষানুরাগীরা। বেশ কয়েক বছর ধরে নগরীতে নতুন সরকারি স্কুল স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন মহল। এরপর ২০১৮ সালে সারাদেশে ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রাম নগরীতে দু’টি ১০ তলা ভবন বিশিষ্ট বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার।
সর্বশেষ ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম নগরীতে তিনটি সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর দীর্ঘ ৫৫ বছরেও চট্টগ্রামে সরাসরি কোন সরকারি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। তবে স্বাধীনতার পর বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা হওয়া দু’টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। এরমধ্যে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে ১৯৮৪ সালে জাতীয়করণ করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজকে ২০১৭ সালে জাতীয়করণ করা হয়।
নগরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও চাওয়া ছিল নগরীতে সরকারি বিদ্যালয় স্থাপনের। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর হলেও তা বাস্তবায়ন হওয়ায় খুশি বিভিন্ন মহল।
নয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক রায়হানা তসলিম বলেন, চট্টগ্রাম শহরে দু’টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্থাপনের কাজে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে পূর্ব পতেঙ্গা এলাকায় শূন্য দশমিক ৮১৯৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ শেষে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে সয়েল টেস্টসহ বিভিন্ন কাজ চলছে। উত্তর পতেঙ্গা এলাকায় ২ একর জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। অধিগ্রহণ শেষে এই জমিটিও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
কাজের অগ্রগতির কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, পূর্ব পতেঙ্গার জায়গাটিতে বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি আমরা টেন্ডারের অনুমতি পেয়েছি এবং কিছুদিনের মধ্যেই আমরা টেন্ডার আহবান করবো।
উল্লেখ্য, ৪৩৫ কোটি টাকায় ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট