চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নির্মাণের ২ বছরেও চালু হয়নি চুয়েটের টিএসসি

জাহেদুল আলম, রাউজান

৩০ মে, ২০২২ | ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) টিচার্স-স্টুডেন্টস সেন্টার (টিএসসি) নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। এরপর নানান জটিলতা, বাজেট সংকট, টিএসসির যাবতীয় সরঞ্জামাদি এবং আসবাবপত্রের ব্যবস্থা না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু হয়নি।

এরপর ২য় প্রতিবন্ধকতায় করোনা মহামারীতে প্রায় দেড়বছর কেটে গেছে। ধাপে ধাপে আসবাবপত্র এবং স্থগিত ও অসম্পূর্ণ কাজগুলোর কার্যক্রম চললেও অদ্যাবধি চালু হয়নি প্রতিষ্ঠানটি। ছাত্র সংগঠনগুলো ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে টিএসসি উন্মুক্তের জন্য বার বার আবেদন করা হলেও প্রতিবার আশ্বাসেই সময় পার করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

করোনা মহামারীর মাঝামাঝি সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাদ রেখেই ছোট পরিসরে টিএসসি উদ্বোধনের খবর থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরুই হয়নি। বিগত ২ বছরে টিএসসিতে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম আয়োজনের তালিকায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম এবং কয়েকটি সভা-সমাবেশ এবং চলতি বছরে সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভবনটি এখন তালাবদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রমতে, চুয়েটের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৭ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণের জন্য প্রথম ধাপে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই অর্থ দিয়ে ভবনের ভিত্তি কাঠামোটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এরপর প্রকল্পের জন্য আর কোন বরাদ্দ না আসায় নির্মাণকাজ আর এগোয়নি। এরপর কয়েক বছর কাজ বন্ধ থাকে। পর্যাপ্ত বাজেট এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে টিএসসির নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি সে-সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। পরে আংশিক বাজেট এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন চুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশনের অর্থায়নে ভবনটির নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয়। ভবনটির নির্মাণকাজ একতলা পর্যন্ত সম্পন্ন করার জন্য সংগঠনটি প্রায় অর্ধ কোটির সমপরিমাণ টাকা অর্থায়ন করে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করলে সাংবাদিকদের জানানো হয়, প্রথম ধাপে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় প্রকল্পটি শুরু হয়। কিন্তু ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা পরিমাণ কাজ শেষ হওয়ার পর অধিদপ্তর থেকে আর কোন টাকা আসেনি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরকে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়। এরপর নানান জটিলতার পর টিএসসির নির্মাণকাজ শেষে ভবনটি কর্তৃপক্ষকে হস্তাস্তর করে চুয়েটের প্রকৌশল দপ্তর।

টিএসসি চালুতে বিলম্ব কেন: টিএসসি নির্মাণকাজ শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত পেরিয়েছে দীর্ঘ সময়। তবুও নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় ২ বছরের বেশি সময় আগে। কিন্তু এখনও তা চালু করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরাও জানেন না কেন চালু করা হচ্ছে না টিএসসির কার্যক্রম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজেট কম থাকায় টিএসসির নির্মাণকাজ শেষ হলেও এর কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। তবে ছাত্রকল্যাণ পরিষদে টিএসসি চালু প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম স্থাপনাটির কার্যক্রম খুব শীঘ্রই চালু করার বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন।

তিনি বলেন, ‘কারিগরি অনেক সমস্যা সমাধান করেছি আমরা। খুব শীঘ্রই টিএসসি চালু করা নিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কিছু নীতিমালা তৈরির কাজে আছি, সেটি শেষ হওয়ার পর আমরা পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য পদক্ষেপ নিব।’ এদিকে, কবে নাগাদ টিএসসি চালু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রকল্যাণ থেকে নীতিমালা তৈরির পর তা একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট সভা শেষে আমরা বলতে পারবো। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এ বিষয়ে।’

টিএসসিতে কি কি থাকছে: ১৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের এ ভবন নির্মাণে মোট ব্যয় হয় প্রায় ১১ কোটি টাকা। পূর্ব পাশের তিনতলা অংশের ১ম তলায় শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাফেটরিয়া, ২য় তলায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ক্যাফেটরিয়া ও ৩য় তলায় কনফারেন্স কর্নার। পশ্চিম পাশের চার তলা অংশে নিচতলায় থাকবে স্টেশনারি দোকানপাট। ২য় তলা বরাদ্দ হয়েছে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নতুন কার্যালয়ের জন্য। ৩য় তলার কক্ষগুলোতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের অফিস হিসেবে বরাদ্দের প্রস্তুতি চলছে। ৪র্থ তলায় থাকছে চুয়েট মেডিকেল সহায়তা কেন্দ্র এবং এলামনাই এসোসিয়েশন চুয়েটের দপ্তর।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট