চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হিজড়া আর চশমা খাল পাড়ের বাসিন্দারা এবারের বর্ষায় ডুববে

২৭ মে, ২০২২ | ১২:৫২ অপরাহ্ণ

ইমরান বিন ছবুর 

বিগত বছরের ন্যায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হবে নগরীর ১০ এলাকার বাসিন্দাদের। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নগরীর হিজড়া ও চশমা খালের অধিকাংশ জায়গায় কাজ করতে পারেনি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা। ফলে এ দু’টি খালের বিভিন্ন অংশে প্রশস্ততা কমে এসেছে। কোনো কোনো জায়গায় প্রয়োজনের তুলনায় খালে জায়গা রয়েছে এক তৃতীয়াংশ। একারণে এ দু’টি খালের ১০টি এলাকায় জলাবদ্ধতা হতে পারে এমন আভাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। 
যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হতে পারে সেগুলো হলো হিজড়া খালের পাঁচলাইশ, কাপাসগোলা, চকবাজার ও কাতালগঞ্জের বিভিন্ন অংশে। একইভাবে চশমা খালের দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, শুলকবহর, পূর্ব ষোলশহর ও পশ্চিম ষোলশহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। সম্প্রতি দেখা যায়, ভারী বর্ষণের পর নগরীর বিভিন্ন এলাকার পানি সরে গেলেও হিজড়া ও চশমা খাল সংশ্লিষ্ট কিছু এলাকায় পানি দীর্ঘক্ষণ জমে ছিল। যার ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। ওই সময়ে খালে বাঁধ থাকার পাশাপাশি খালের প্রশস্ত কমে যাওয়ায় দ্রুত পানি সরে যেতে পারেনি বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেড প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকার কারণে আমরা হিজড়া ও চশমা খালের বেশ কিছু অংশে কাজ করতে পারিনি। ফলে এ দু’টি খালের বিভিন্ন অংশে প্রশস্ততা কমে এসেছে। বৃষ্টির সময় এ খালের বিভিন্ন অংশে পানির প্রবাহ কমে গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। যেমন- চশমা খালের প্রশস্ত ২৬ ফিট হিসেব করে আমরা কাজ করছি। তবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সামনে ও কিছু এলাকায় খালের প্রশস্ত কমে পাঁচ ফিট হয়ে গেছে। একইভাবে হিজড়া খালের প্রশস্ত হওয়া উচিত ছিল ৬ মিটার বা প্রায় ২০ ফিট। কিন্তু এই খালের প্রশস্ত কোথাও কোথাও হচ্ছে মাত্র দেড় মিটার। সেখানে খালের জায়গা নেই। নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। চশমা খালের গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, হিজড়া খালের মত আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল হচ্ছে চশমা খাল। নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই চশমা খাল যেটি আট মিটার প্রশস্ত থাকার কথা, বর্তমানে সেখানে প্রশস্ত রয়েছে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মিটার। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এই খালে কাজ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া, মুরাদপুরের কালভার্ট যদি সম্প্রসারণ করা না হয়, তাহলে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। এরফলে দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, ষোলশহর, নাসিরাবাদ ও এর আশপাশের পানি দ্রুত সময়ের মধ্যে সরতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং এই ভোগান্তি বর্ষা মৌসুমেও থাকতে পারে। 
তিনি আরো বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে হলে দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণ না হলে সেসব এলাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। এই বছরের মধ্যে যদি ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা যায়, তাহলে এই এলাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে। 
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। সম্প্রতি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন ও ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকার করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট