চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরিষা বীজের আড়ালে পপি বীজ আমদানি : টিপুকে খুঁজছে সিআইডি

২৬ মে, ২০২২ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

নাজিম মুহাম্মদ 

চট্টগ্রাম বন্দরে আটক হওয়া নিষিদ্ধ পপি বীজের গন্তব্যস্থল জানা যায়নি। সরিষা বীজের আড়ালে পপি বীজ আমদানির সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তিনজনই গত ১৭ মে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, টিপু নামে এক ব্যক্তি সরিষা বীজের কথা বলে তাদেরকে আমদানির কাগজ দিয়েছিল। তবে টিপুর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা তারা জানে না। টিপুর পক্ষ থেকে মোস্তাফিজ নামে এক লোক বন্দরে সব দেখভাল করেছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন, সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক পাঁচলাইশ হামজারবাগের মৃত জন রিবেরুর ছেলে ফিলিপ রিবেরু প্রকাশ লিটন, হালিশহর নাথ পাড়ার উত্তর দত্ত ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার এনসান উদ্দিন আকন্দের ছেলে নজরুল ইসলাম প্রকাশ আল আমিন। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও টিপু আর মোস্তাফিজের এখনো খোঁজ মেলেনি। নগরীর চকবাজারের আকবর নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। যিনি ঘটনার পর থেকে ভারতে চলে গেছেন। তাকে পাওয়া গেলে পপি বীজ আমদানির রহস্য জানা যাবে এমনটি ধারণা করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মুহাম্মদ শরীফ জানান, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পপি বীজ আমদানির ঘটনায় ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

জবানবন্দিতে যা বলেছে তিনজন : হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফিলিপ রিবেরু প্রকাশ লিটন গত ১৭ মে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, তারা পাঁচজন মিলে সিএন্ডএফের ব্যবসা শুরু করেন। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে তার পূর্ব পরিচিত উত্তর দত্ত রুবেল ও নজরুল ইসলাম প্রকাশ আল আমিন তাদের কাছে থাকা সরিষা বীজ আমদানির একটি ডকুমেন্ট ক্লিয়ারিং করে মালামালগুলো খালাস করতে বলেন। তাদেরকে হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনারের এসাইকুডা সিস্টেমের পাসওয়ার্ড দেন লিটন। তারা সরীষা বীজ আমদানির বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল দুটি কন্টেইনারে আসা মালামালগুলো আটকে যায়। কাস্টম অফিস থেকে জানানো হয় সরিষা বীজের আড়ালে পপি বীজ আনা হয়েছে। বীজগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
একই দিন আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে উত্তম দত্ত রুবেল জানান, তিনি এমকে ট্রেডিং কর্পোরেশনের সহকারী জেটি সরকার। ফিলিপ রিবেরু প্রকাশ লিটনের হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সিএন্ডএফ এজেন্টস প্রতিষ্ঠান রয়েছে। টাকার বিনিময়ে ওই সিএন্ডএফ এজেন্টের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ডয়ের পাসওয়ার্ড নিয়ে মাঝে মাঝে কাজ করতেন। বরিশাল এজেন্সির নামে আরেকটি সিএন্ডএফে কর্মরত নজরুল ইসলাম প্রকাশ আল আমিন তার পূর্ব পরিচিত। নজরুল টিপু নামে এক ব্যক্তির সাথে উত্তমের পরিচয় করে দেন। তবে টিপুকে তিনি চিনেন না। আল আমিন ও উত্তমকে সরিষা বীজ আমদানির একটি কাগজ দেয় টিপু। তারা হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনালের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সরীষা বীজ আামদানির বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কথা ছিল, সরিষা বীজ আমদানির কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য টিপু তাদের ৩৫ হাজার টাকা দিবে। অগ্রিম ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকী টাকা ১৫ দিন পর দিবে বলেছিল টিপু।
জবানবন্দিতে উত্তম বলেন, বন্দরে যখন কন্টেইনার খোলা হয় তখন সরীষা বীজ পাওয়া যায়। দুইদিন পর ডেলিভারি নিতে গিয়ে তারা জানতে পারেন আমদানিকারক সরিষা বীজের কথা বলে পপি বীজ এনেছে। টিপুর পক্ষ থেকে মোস্তাফিজ নামে এক লোক ছিল। যিনি কন্টেইনার খোলা, ফিজিক্যাল এক্সাম সব কাজ করেছেন।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে নজরুল ইসলাম প্রকাশ আল আমিন জানান, ২২ বছর ধরে তিনি একটি সিএন্ডএফ এজেন্টস প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কাজের সুবাদে টিপু নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানি না। গত বছরের (২০২১ সাল) এপ্রিল মাসে টিপু নজরুলকে বলেন, তার কাছে সরিষা বীজের একটি ডকুমেন্ট আছে। কিন্তু সে কখনো আমদানির কাজ করেনি। নজরুল ও উত্তম টিপুর কাছ থেকে আমদানির কাগজের ফটোকপি নেয়। উত্তম কাগজগুলো নিয়ে হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফিলিপ রিবেরুর কাছে যান। তার মাধ্যমেই সরিষা বীজগুলো বন্দর থেকে ছাড়ানোর কথা হয়।

পূর্বকোণ/এস 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট