চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বাড়ছে রোগী, গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে আসছে না কেউ

২৫ মে, ২০২২ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ

ইমাম হোসাইন রাজু 

হালিশহর ও তৎসন্নিহিত এলাকাজুড়ে ডায়রিয়া নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও মাথা ব্যাথা নেই কোন দায়িত্বশীল সংস্থারই। আশপাশের হাসপাতালগুলোতেও দিনদিন রোগী বাড়লেও এখনও বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি নীরব কর্তৃপক্ষ। খোদ স্বাস্থ্য সেবার সাথে যারা জড়িত, বিষয়টি নিয়ে তারাও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কর্তৃপক্ষকে আলোচনা এবং ভাবার জন্য আহ্বান জানালেও কিন্তু সর্বশেষ তথ্য পর্যন্ত কোন ধরনের পদক্ষেপের কথা জানা যায়নি। সর্বশেষ তথ্য অনুসারী, চট্টগ্রামের বৃহৎ দুই হাসপাতালে গেল একদিনেই প্রায় অর্ধশত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে হালিশহর ও তার তৎসন্নিহিত এলাকার বাসিন্দারা। রোগী বাড়ায় খোদ হাসপাতালে সেবা দেওয়ার সঙ্গে জড়িতরা ‘স্পেশাল ওয়ার্কফোর্স’ দরকার বলে উল্লেখ করলেও দায়িত্বশীল সংস্থাই বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। যদিও বিষয়টি নিয়ে তারা নজর দিবেন বলে জানিয়েছে তদারকি স্বাস্থ্য বিভাগ।
চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে ডিহাইড্রেশান (পানি শূন্যতা) এবং হাইপোভলিউমিক শক নিয়ে রোগী বেশি আসছেন। প্রস্রাব কম আর কিডনি বিকল হওয়া রোগীর পরিমাণ বেশি। এরমধ্যে কলেরার জীবাণুও পাওয়া যাচ্ছে বেশিরভাগ রোগীর মধ্যে। ভর্তি হওয়া বেশিরভাগই বিপর্যস্ত অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন। যার কারণে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে তাদের। এসব রোগীদের সাধারণ কোন ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। যার কারণে ব্যবহার করতে হচ্ছে এন্টিবায়েটিক। 
হালিশহর ও তৎসন্নিহিত এলাকাজুড়ে ডায়রিয়া রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকদের শঙ্কা, ‘দূষিত পানির’ কারণে পানিবাহিত এ রোগের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া খাবারেরও সমস্যা থাকতে পারে। কেননা রোগীদের মধ্যেও স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দেওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের।
গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘ঠান্ডা গরমের এ সময়ে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগী বাড়ে। কিন্তু এরপরও যদি অতিরিক্ত হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিন্তার বিষয়। নির্দিষ্ট কোন এলাকায় যদি বাড়তি রোগী থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা নজর দিব। তবে নগরীর নির্দিষ্ট কোন এলাকাতে এখনও ওই পরিমাণের রোগী নেই। যা আছে- তা স্বাভাবিক। তবুও এ বিষয়ে অবশ্যই খবর নেওয়া হবে।’
এদিকে এমন অবস্থার মধ্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালে নতুন করে আরও ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া মা ও শিশু হাসপাতালেও পূর্বের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে গতকাল রাতেই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. রজত শংকর রায় বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি তার লেখাতে হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টারের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন, যে পরিমাণ রোগী বাড়ছে, তাতে ওয়ার্কফোর্স দরকার। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে পানি পার আর খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা এবং পানি সরবরাহে পরিচ্ছন্নতা জরুরি বলেও উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, বিআইটিআইডি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ২৮ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ৪৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। নতুন করে এদিন ৫ জনের শরীরে কলেরার জীবানু পাওয়া গেছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের অধিকাংশই হালিশহরের বাসিন্দা।’
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে গেল কয়েকদিন ধরেই ডায়রিয়ার রোগী বেড়েছে। দুই দিন আগেও ৫০ জনের নিচে রোগী ভর্তি ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ৭৫ জন রোগী ভর্তি ছিল। তাদের মধ্যে ১৭ জনই বয়স্ক রোগী। ভর্তি হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই হালিশহর, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা-ইপিজেডের বাসিন্দা।’

পূর্বকোণ/এস 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট