চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

হুমকিতে ৬৩ প্রজাতির উদ্ভিদ

২২ মে, ২০২২ | ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

মিজানুর রহমান 

নির্বিচারে পাহাড় নিধন, অপরিকল্পিত বসবাস, স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম শহরে ১৩ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এখনই সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে নিকট ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে আরও ৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ। উন্নয়ন সংস্থা- ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেইনিয়নের (ইকো) উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ১ বছর ধরে পরিচালিত এই গবেষণার সর্বশেষ ফল গত এপ্রিলে প্রকাশ করা হয়। এতে চট্টগ্রাম শহরের ২০টি এলাকায় ৬৪৫ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। এরমধ্যে ১৭৬ প্রজাতি বড় বৃক্ষ, ১০২ প্রজাতি গুল্ম জাতীয়, ২৯৩ প্রজাতি বীরৎ জাতীয়, ৫৯ প্রজাতি লতা জাতীয়, ১৫ প্রজাতি পরাশ্রয়ী। সিআরবিতেই পাওয়া গেছে ২২৩ প্রজাতির উদ্ভিদ।
শহরের ২০টি পাহাড়ি এলাকায় পাওয়া ৬৪৫ প্রজাতির মধ্যে ১৩ প্রজাতির উদ্ভিদ এখন বিপন্ন প্রায়। বিপন্ন প্রজাতির মধ্যে রয়েছে- হলদে বেত, ন্যাটা সাইকাস, শীতশাল, গর্জন, লম্বু, শ্বেত চন্দন, অশোক, ঢাকিজাম, দুধকুরুস, বাকা গুলঞ্ছ, সোনাতলা। এরমধ্যে সোনাতলা মানসিক রোগের, অশোক আমাশয়ের এবং ন্যাটা সাইকাস হাঁপানি রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এছাড়া মেঞ্জিয়াম, হারগোজা, টাইগার ফার্ন, কঞ্চি এলাচ, ছাতিম, বেত, বড় ডুমুর, যজ্ঞ ডমুর, কুরুজ, কুকুরা, পিটালি, হরিতকি, স্বর্পগন্ধা, বকুল, শিমুল, পিতরাজ, দুরন্তসহ ৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ এখনই সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে নিকট ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে। এসব প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়বে বলে গবেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
গবেষকরা বলছেন- নির্বিচারে পাহাড় নিধন, উদ্ভিদ কেটে অপরিকল্পিত বসবাস এবং স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ না করলে গবেষণায় পাওয়া ৬৪৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে অনেক উদ্ভিদ হারিয়ে যাবে। এতে পুরো চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশ বিনষ্ট হবে। তাই পাহাড় নিধন, উদ্ভিদ কেটে অপরিকল্পিত বসবাস এবং স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
এছাড়া সংরক্ষণের জন্য সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বিদেশি উদ্ভিদের পরিবর্তে দেশীয় ফলজ, বনজ ও ওষুধি উদ্ভিদ ব্যাপকহারে রোপণের জন্য জনগণকে সচেতন করা জরুরি। পাশাপাশি সরকারি সব সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই চট্টগ্রাম শহরের পাহাড় রক্ষা পাবে। রক্ষা পাবে পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যও।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাত সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীর সহায়তায় পরিচালিত পুরো গবেষণা কাজে নেতৃত্ব দেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, গবেষণায় পুরো চট্টগ্রাম শহরের উদ্ভিদরাজির চিত্র তুলে আনতে আমরা কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত ৬৪৫ প্রজাতির উদ্ভিদ পেয়েছি আমরা।
তিনি বলেন, পরিবেশ বাঁচাতে চট্টগ্রাম শহরকে পরিকল্পিত বনায়নের আওতায় আনা প্রয়োজন। বিপন্ন প্রায় হিসেবে চিহ্নিত প্রজাতি সংরক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে। ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে এমন প্রজাতি বাঁচাতে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এসব করা সম্ভব হলে চট্টগ্রাম শহরে উদ্ভিত প্রজাতির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। জীববৈচিত্র্য আরও সুরক্ষিত হবে।

পূর্বকোণ/এস 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট