চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার সরাসরি পণ্য গেল যুক্তরাজ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ মে, ২০২২ | ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ

প্রথমবারের মতো উত্তর ইউরোপের বন্দরের সাথে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলো চট্টগ্রাম বন্দর। এবার ১৮২ একক রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার নিয়ে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে মঙ্গোলিয়া পতাকাবাহী জাহাজ এএমও। গতকাল (শুক্রবার) দুপুর দেড়টায় দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-১ জেটি থেকে জাহাজটি রওনা দেয়।
জাহাজটি লিভারপুল বন্দরে ৫৭ একক কনটেইনার নামিয়ে বাকি ১২৫ একক কনটেইনার নিয়ে যাবে নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দরে।
এর আগে জাহাজটি চায়নার হুমেন বন্দর থেকে ৫৬২ একক খালি কনটেইনার নিয়ে গত ৬ মে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। খালি কনটেইনার নিয়ে জাহাজটি ১৯ মে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে। জাহাজটির কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে ছিল সাইফ পাওয়ারটেক। জাহাজটির ৫৬২ একক খালি কনটেইনার নামিয়ে ১৮২ একক রপ্তানি কনটেইনার লোড করার কাজ শেষ হয় গতকাল দুপুরে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং ও শিপিং কোম্পানি অলসিজ গ্লোবাল লজিস্টিকস কোম্পানি উত্তর ইউরোপের সাথে সরাসরি এই সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। যার বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফনিক্স শিপিং লিমিটেড।
চট্টগ্রাম বন্দরের অনুমতি পাওয়ার পর এই রুটে তিনটি জাহাজ চালু করছে অলসিজ গ্লোবাল লজিস্টিকস কোম্পানি। এরমধ্যে রপ্তানি পণ্য নিয়ে মঙ্গোলিয়া পতাকাবাহী জাহাজ এএমও তার প্রথম যাত্রা শুরু করলো। এছাড়া ৩০ মে আসার কথা রয়েছে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ স্যান আলফনসো এবং আগামী ৯ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে এনিটগুয়া বারবুডা পতাকাবাহী জাহাজ বিবিসি ফিনল্যান্ড। এই তিনটি জাহাজ সরাসরি উত্তর ইউরোপের যুক্তরাজ্য ও নেদ্যারলেন্ডে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্য পরিবহন করবে।
এ প্রসঙ্গে ফনিক্স শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত পূর্বকোণকে বলেন, এই রুটে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২২ দিনের মধ্যে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ রুটে ৩টি জাহাজ নিয়মিত চলাচল করলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর জ্যামে পড়তে হবে না রপ্তনি পণ্য। ফলে খরচ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হবে। উপকৃত হবে দেশিয় রপ্তানিকারকেরা।
সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগই হলো তৈরি পোশাক শিল্পের। তাই এর সুবিধাভোগী হবেন গার্মেন্টস সংশ্লিষ্টরা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বায়ারদের অর্ডার পাওয়ার পর একটা বড় চিন্তা থাকে সময় মতো পণ্য পৌঁছে দেওয়ার। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট এড়িয়ে এমন সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু হওয়ায় রপ্তানি পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে দেওয়ার একটা নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়ে যাবে।
এই সার্ভিস প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালুকে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ উৎসাহি করে আসছে। সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং এর মতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর জাহাজ জট দেশিয় রপ্তানিকারকদের প্রচুর ভোগাচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর সব বিদেশি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহি করছে সরাসরি জাহাজ চালুর। আর এই কাজে প্রায়োরেটিও দেওয়া হচ্ছে। ফলে স্বল্প সময়ে অনেকগুলো সরাসরি জাহাজ চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে প্রথমবার ইউরোপের ইতালিতে সরাসরি কনটেইনার জাহাজে পণ্য পরিবহনে সেবা চালু হয়। ইতালির ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান রিফ লাইন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন এই সেবা চালু করে। প্রতিষ্ঠানটি দুটি জাহাজে এ পর্যন্ত পাঁচবার আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া করেছে, সময় লেগেছে ১৮ থেকে ২০ দিন। এরপর ইউরোপের আরও দুই গন্তব্যে আগামী মাসে সরাসরি জাহাজ সেবা চালুর ঘোষণা দেয় সুইজারল্যান্ডের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কমোডিটি সাপ্লাইস এজি। তারা চট্টগ্রাম থেকে স্পেন ও নেদারল্যান্ডসে সরাসরি কনটেইনার পণ্য পরিবহনের জন্য তিনটি জাহাজ নামাচ্ছে। 
সরাসরি জাহাজ সেবা চালুর উদ্যোগে নীতিগত সহযোগিতা করছে চট্টগ্রাম বন্দর। সেজন্য একের পর এক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তাতে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দর হয়ে রপ্তানিতে নির্ভরশীলতা কমবে। কারণ বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ-আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার প্রথমে ছোট আকারের কনটেইনার জাহাজে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও তানজুং পেলাপাস বন্দরে নেওয়া হয়। এই চারটি বন্দরে নামানোর পর বুকিং পেলে ইউরোপ-আমেরিকামুখী বড় জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। এভাবে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কার বন্দর ঘুরে ইউরোপের দেশে কনটেইনার পণ্য পরিবহনে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে ২৪-২৮ দিন। তবে করোনার পর থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কায় বড় জাহাজে বুকিং পেতে দেরি হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সময় লাগছে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের বেশি।

পূর্বকোণ/এস 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট