চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও থামাতে পারেনি সংগীতের পিপাসা

১৪ মে, ২০২২ | ২:২১ অপরাহ্ণ

মিটু বিভাস

দক্ষিণ কাট্টলী হরিমন্দির এলাকায় একতলা একটি বাড়ি। শুক্রবার সকালে ঘরে প্রবেশ করতে দেখা গেল এক ঝাঁক শিশু কিশোর গানের তালিম নিচ্ছে। তাদের সংগীত গুরুর দিকে চোখ পড়তেই মনটা অন্যরকম হয়ে গেল। ৭০ বছর বয়সী পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত এ লোক ইশারায় শিষ্যদের তালিম দিচ্ছেন। অসুস্থতার কারণে হারমোনিয়ামের রিটও ঠিকমত চালাতে পারছেন না। তিনি মৃদুল কান্তি দাশ। এলাকার সবার কাছে সংগীত শিক্ষক মৃদুল দা নামেই পরিচিত। সংগীত নিয়ে কেটে গেছে যার সারা জীবন। বৃদ্ধ বয়সে এসে এখনও ছাড়তে পারছেন না সংগীতের সে মায়া।

এলাকার অভিভাবকরাও চান, তার শিশুটির শুরুটাও যেন এই সংগীত গুরুর কাছে তালিম দিয়ে হয়। তবে তিনি না পারলেও তার হাতে তালিম নেয়া শিক্ষার্থীদের পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গান শিখছে হাজারো শিশু। জন্মসূত্রেই সংগীতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। ১৯০৬ সালে চট্টগ্রামের প্রথম সংগীত শিক্ষা কেন্দ্র আর্য্য সঙ্গীত সমিতি, সুরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রখ্যাত জমিদার প্রানহরি দাশের পুত্র সুরেন্দ্র লাল দাশ। তারই পৌত্র মৃদুল কান্তির দাশের জন্ম ১৯৫২ সালে। শিশু বয়সে জেঠা প্রফুল্ল রঞ্জন দাশের কাছে হাতেখড়ি। তবে ৬ বছর বয়ে ওস্তাদ আদিত্য নারায়ন দাশের কাছে গিয়েছিলেন তবলায় তালিম নিতে। সেখানে মন টিকেনি। এরপর দীর্ঘদিন ওস্তাদ নিরোদ বরণ বড়ুয়ার কাছে শিখেছেন গান।

নেশার টানে ১৬ বছর বয়স থেকেই লেখাপড়া পাশাপাশি এলাকার ছোট শিশুদের গানের তালিম দিতে শুরু করেন। প্রথম দিকে শিক্ষার্থী কম থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। একসাথে সর্বাধিক ১৬টি টিউশনিও করেছেন। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর ১৯৮৪ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কাট্টলী পিএইচ আমিন একাডেমিতে প্রতিষ্ঠা করেন সুরাঙ্গন সংগীত বিদ্যা নিকেতন। এরপর সে সংগীত প্রতিষ্ঠানেই কাটিয়ে দিয়েছেন পুরো জীবন।

বর্তমানে হালিশহর থেকে কাট্টলী পর্যন্ত তাঁর শিক্ষার্থীদের হাতে গড়া সংগীত শিক্ষা কেন্দ্রও রয়েছে অনেকগুলো। এরমধ্যে হালিশহরে শিমুল দাশ পরিচালিত সুর পঞ্চম, গ্রিনভিউতে রীতা চৌধুরী পরিচালিত সৎসঙ্গ সঙ্গীত নিকেতন, কাট্টলীতে রতন কুমার দেবনাথ পরিচালিত ইমন সাংস্কৃতিক একাডেমি উল্লেখযোগ্য। জীবদ্দশায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে পেয়েছে অসংখ্য সম্মাননা। তবে আক্ষেপ একটাই, সন্তানদের কাউকে সংগীতাঙ্গনে স্থায়ী করতে পারেননি।

তিনি বলেন, আমার মেয়ে ভালো গান করলেও বিয়ের পর পারিবারিক কারণে গান ছাড়তে হয়। একমাত্র ছেলে চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত। ফলে আমার মৃত্যুর পর গানের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে পরিবার। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আমৃত্যু গান নিয়ে থাকতে চান তিনি।

এলাকার সংগঠক রূপন বলেন, ছোটবেলা থেকে আমরা গানের মানুষ হিসাবেই তাকে চিনি। যদিও এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর বাইরে বেরোতে পারেন না। তবে চট্টগ্রামের সংগীতপ্রেমী মানুষের কাছে তিনি এখনও অত্যন্ত জনপ্রিয়।

 

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট