চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডাম্পিং সংকটে বিআরটিএ

বিআরটিএ’র জব্দ করা গাড়ি যায় সিএমপি’র ডাম্পিং স্টেশনে , আদালতের অধীনে ডাম্পিং জোন ও রেকার চান ম্যাজিস্ট্রেটরা

আল-আমিন সিকদার

২৯ জুলাই, ২০১৯ | ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

দেড় বছর ধরে ম্যাজিস্ট্রেট শূন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গত বছর যোগদান করেন তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যোগদানের পর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেন তাঁরা। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে যানবাহন বাজেয়াপ্ত করা থেকে শুরু করে চালকদের জেল-জরিমানা ও কাগজ জব্দ করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুরুর দিকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে অভিযান চালিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেসবিহীন প্রায় কয়েক’শ গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। বিএরটিএ’র নির্ধারিত কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় জব্দ করা গাড়িগুলো রাখা হয় কার্যালয়ের পিছনের অংশে। জব্দ করা গাড়িতে যা এখন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। জায়গা সংকটের কারণে ভ্রাম্যমাণ
আদালতের অভিযানে কমেছে ডাম্পিং জোনে গাড়ি পাঠানোর সংখ্যা। গত প্রায় দুই মাসের অভিযানে কেবল ৮টি গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠায় বিআরটিএ। শুধু তাই নয়, জায়গার অভাবে বিআরটিএ’ তে জব্দ হওয়া গাড়িগুলো পাঠানো হয় সিএমপি’র ডাম্পিং স্টেশনে। সমস্যা সমাধানে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের অধীনে ডাম্পিং স্টেশন ও রেকার চান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর।
বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত-১১ এর ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর বলেন, ‘নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে বিআরটিএ’র তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। যেখানে নেতৃত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেটরা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠায়। কিন্তু বিআরটিএ’র নির্ধারিত কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় জব্দ করা গাড়িগুলো রাখা হয় কার্যালয়ের পিছনের অংশে। সেখানে এমনও অনেক গাড়ি আছে যেগুলো পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। এতে করে নতুন ভাবে যেসব গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠানো হয় সেগুলো রাখতে অসুবিধায় পড়তে হয় আমাদের। জায়গার অভাবে বেশিরভাগ সময় ডাম্পিং করা গাড়িগুলো আমাদের পাঠাতে হয় সিএমপি’র ডাম্পিং স্টেশনে। সিএমপি’র ডাম্পিং স্টেশনে এক একটি গাড়ি পাঠাতে কাগজপত্র নিয়ে যেমন আমাদের ঝামেলায় পড়তে হয়, তেমনি চালকদেরও পড়তে হয়।’ গত দুই মাসে গাড়ি ডাম্পিং করার সংখ্যা আগের তুলনায় কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদের পর থেকে গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠানোর সংখ্যা একটু কমেছে। যেটা ঈদের আগেও অনেক বেশি ছিল। এর কারণ ডাম্পিং জোন না থাকা। এ সমস্যা সমাধানে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের অধীনে নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন ও রেকার খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীরের মত একই মন্তব্য করেছেন আদালত-১২ এর ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ’র নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন না থাকাতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এতে করে আমরা ফিটনেসবিহীন যানবাহনসমূহ জব্দ করতে পারছি না। বিশেষ করে বড় যানবাহনের ক্ষেত্রে আমরা এ সমস্যাটির সম্মুখিন হচ্ছি বেশি। সাধারণত আমরা ফিটনেসবিহীন কিংবা রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশকে হস্তান্তর করি। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ ট্রাফিক পুলিশ আমাদের মোবাইল কোর্টে জব্দ করা যানবাহন গ্রহণ করতে গড়িমসি করছে। এ বিষয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, মোবাইল কোর্ট কর্তৃক জব্দকৃত গাড়ি গ্রহণ করতে তাদের টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে। এতে করে আমরা প্রয়োজনের সময় বড় যানবাহন জব্দ করতে অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছি। যার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ব্যাহত হচ্ছে’।
বিআরটিএ’র অন্য দুই ম্যাজিস্ট্রেটের মত একই মন্তব্য করেছেন আদালত-১৩ এর ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘অভিযানে ডাম্পিং করা গাড়িগুলো রাখার জন্য বিআরটিএ’র নির্ধারিত কোনো স্টেশন নেই। তাই ডাম্পিং করা গাড়িগুলো বাধ্য হয়ে বিআরটিএ কার্যালয়ের পিছনে রাখা হয়। জব্দ করা এসব গাড়ির কারণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে বিআরটিএ কার্যালয়ের শেষ অংশটুকু। তাই জায়গা না থাকার কারণে অভিযানে নেমে গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠাই না। তবে বড় ধরনের কোন ত্রুটি পেলে সেক্ষেত্রে গাড়ি ডাম্পিং করে আমরা পুলিশের সহযোগিতা নেই। গত প্রায় দেড় মাসে আমি ৪টি গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠিয়েছে। যদি বিআরটিএ’র নির্ধারিত গাড়ি রাখার স্টেশন থাকতো তাহলে আরো বেশি গাড়ি ডাম্পিং এ পাঠানো হতো’। এ সমস্যা সমাধানে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের অধীনে একটি নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন থাকা খুবই প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল (রবিবার) চট্টগ্রামের বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পিছনের অংশে থাকা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পড়ে রয়েছে প্রায় শতাধিক যানবাহন। যেখানে রয়েছে প্রাইভেট কার, মিনি ট্রাক, চলাচলে নিষিদ্ধ হওয়া টেম্পো, ব্যাটারি চালিত রিকশা-টমটম, সিএনজি চালিত ট্যাক্সি ও বাস। জব্দ করা এসব গাড়ির কারণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে বিআরটিএ কার্যালয়ের শেষ অংশটুকু। দেখে মনে হবে পরিত্যক্ত একটি গাড়ির গ্যারেজ এ বিআরটিএ কার্যালয়। শুধু তাই নয়, পড়ে থাকা এসব যানবাহনের কারণে দূর থেকে দেখা যায় না বিআরটিএ কার্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা পুলিশ ফাঁড়িটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট