চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

জীবনহানির হুমকি দিয়ে এসআইয়ের লাখ টাকা আদায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, কক্সবাজার

২৮ জুলাই, ২০১৯ | ৫:৫১ অপরাহ্ণ

‘লাখ টাকার কম আদায় না করা’ কক্সবাজার সদর থানার বহু বিতর্কিত এসআই আনছারুল হকের বিরুদ্ধে এবার স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

নিজের মা ও বউয়ের স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল নুরুল আলম নামে একজন রাজমিস্ত্রিকে। ষড়যন্ত্র থেকে নিজের স্বামীকে রক্ষা করতে এসব টাকা দিয়েছিল নুরুল আলমের বউ। নুরুল আলম কক্সবাজার শহরের পূর্ব লাইট হাউজস্থ ফাতের ঘোনা এলাকার মৃত সোলতান আহমদের ছেলে।

স্থানীয় দালাল আবুল কাশেম সর্দ্দারের মাধ্যমে এসআই আনছারুল হক এসব টাকা আদায় করেছিল ২৩ মে (১৯ রমজান)। টাকা নিয়েও এই রাজমিস্ত্রিকে কারাগারে পাঠিয়েছিল এসআই আনছারুল। দোকান থেকে ধরে নিয়ে পরের দিন ৩০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে চালান দেয়া হয়েছিল নুরুল আলমকে। চালান দেয়ার আগে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন এসআই আনছারুল হক। তবে এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হলে এসব তথ্য ফাঁস করেন নুরুল আলম।

নুরুল আলম বলেন, আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এর মধ্যে বছরখানেক আগে লাইট হাউজ মাদ্রাসা মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে রংয়ের ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু গত ১৮ রমজান (২৬ মে) মাগরিবের পর সদর থানার এসআই আনছারুল হক এসে আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর আমি ইয়াবা ব্যবসায়ী, আমাকে ক্রাসফায়ার দেয়া হবে বলে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে ফাতের ঘোনার আবুল কাশেম ওরফে কাশেম খলিফা এসআই আনছারুলের পক্ষ হয়ে আমার বউয়ের সাথে টাকার কথা বলে।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে প্রায় ৫ লাখ টাকা দাবিও করেন। ২৬ মে বিকাল থেকে রাতভর টাকার জন্য বাকবিতণ্ডার পরে ৩৪ ধারায় ( জামিন যোগ্য) চালান দেয়ার চুক্তি হয়। ৩৪ ধারায় আদালতে চালান দেয়ার কথা বলে ২৭ মে সকালে দালাল কাশেমের মাধ্যমে থানায় গিয়ে আমার স্ত্রী ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন এসআই আনছারুলকে। ওইদিন দুপুরের পর ৩০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আমাকে চালান দেয়া হয় আদালতে। তবে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেন তিনি। প্রায় ৪৬ দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে বের হয়।

নুরুল আলম আরো বলেন, আমার নামে কোনো অভিযোগ ছিল না। মামলাও ছিল না। দালাল কাশেমের কথায় আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। এরপর ইয়াবা দিয়ে চালান দেন। কিন্তু আমার স্ত্রী থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। এর বেশির ভাগ টাকা আমার মা ও বউয়ের স্বর্ণ বন্ধক দেয়ার টাকা। টাকা না থাকায় স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে টাকা দিতে হয়েছিল পুলিশকে। এসব বিষয়ে আমি এখন লিখিত অভিযোগ জানাবো। পুলিশকে ব্যবহার করে দালাল কাশেম এলাকার মানুষকে বেশি হয়রানি করছে। দালাল কাশেম  পুলিশ দিয়ে এলাকার লোকজনকে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে নিয়মিত। এসআই আনছারুল হকও তার কথায় এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে এসে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে।

এ বিষয়ে ফাতের ঘোনার আবুল কাশেম ওরফে কাশেম খলিফা বলেন, আমার সাথে থানার কয়েকজন পুলিশের সাথে ভালো সর্ম্পক রয়েছে। তার মধ্যে এসআই আনছারুল হকের সাথেও ভালো সর্ম্পক রয়েছে ।

নুরুল আলমের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোন টাকার লেনদেন করিনি। নুরুল আলমের বউ আমার কাছে আসছিল, তার সাথে আমি থানায় গিয়েছিলাম। টাকার বিষয়ে আমি জানি না।

সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের ৫ দিন পর লাইট হাউজ ফাতের ঘোনা এলাকার হোসেন আহমদ নামে এক যুবককে আটক করেছিল এসআই আনছারুল হক। আটকের পর দিন ২৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে হোসেনকে আদালতে চালান দেন বলে জানা গেছে। তবে তার কাছ থেকেও এক লাখ টাকা নেন এসআই আনছারুল হক। ৩৪ ধারায় (জামিন যোগ্য) আদালতে চালান দেয়ার কথা বলে এসব টাকা নেন এই এসআই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর থানার এসআই আনছারুল হক বলেন, ফাতের ঘোনার কাশেম নামে কারো সাথে আমার পরিচিত নেই। হয়তবা দেখলে চিনতে পারি।

নুরুল আলমের বিষয়ে তিনি বলেন, আমিত অনেকজনকে আটক করেছি। মনে পড়ছে না কোন নুরুল আলম। বিষয়টি কয়েক মাস আগের হয়ত তাই মনে পড়ছে না। তবে টাকা আদায়ের বিষয়টি সত্য নয়।

পূর্বকোণ/ময়মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট