চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

প্রাণঘাতী হেপাটাইটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে চট্টগ্রামে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জুলাই, ২০১৯ | ২:৩১ পূর্বাহ্ণ

প্রাণঘাতী হেপাটাইটিস ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮ থেকে ১০ শতাংশ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। পার্শ^বর্তী মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে এই ভাইরাস আরও বেশি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা। গতকাল (শনিবার) দুপুরে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য ওঠে আসে। এছাড়া দেশের মোট জনসংখ্যার পাঁচ দশমিক এক শতাংশ জনগোষ্ঠী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশ। সে হিসেবে দেশের ৫৭ লাখ পুরুষ ও ২৮ লাখ নারী এ রোগে আক্রান্ত। তবে এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা সময়মতো চিকিৎসা সেবা না পেলে মৃত্যুর আশংকা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে সকলকেই সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। এদিকে প্রাণঘাতী ‘হেপাটাইটিস ভাইরাস’ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে আজ (রবিবার) পালিত হবে ‘বিশ^ হেপাটাইটিস দিবস-২০১৯’। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। এই বছর দিবসটির থিম বা মূলবার্তা হল, ‘হেপাটাইটিস নির্মূলকরণে বিনিয়োগ করুন’। হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রায় ৫০ শতাংশ, যা আগে ছিল ২৭

শতাংশ। এসবের মধ্যে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রজননক্ষম ১৮ লাখ নারী হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত। অথচ মায়ের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি এ রোগ ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৫ লাখ চাকরিপ্রার্থী ও কর্মক্ষম তরুণ চাকরি পান না । চট্টগ্রামেও দিনদিন এ রোগের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৬৯১ জন। কিন্তু ২০১৭ সালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৫৬ জন রোগী। এর আগে এ সংখ্যা আরও কম ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এতথ্য বলছে, চট্টগ্রামে দিনদিন হেপাটাইটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. অশোক কুমার দত্ত বলেন, হেপাটাইটিস রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। পরিবারে কেউ হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসে আক্রান্ত থাকলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সচেতন হতে হবে। আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের সাথে সাথে পরিবারের অন্য সদস্যকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক সম্পর্ক, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, টুথপিক, টুথব্রাশ ব্যবহারের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে।
এদিকে, সারাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের রোগী অধিকাংশ থাকলেও চট্টগ্রামে সি ভাইরাসের রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেপোটলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, পাশর্^বর্তী মিয়ানমারে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অধিক হওয়ায় চট্টগ্রামে এর বিস্তার ঘটছে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। এই ভাইরাসটি এক ধরনের নীরব ঘাতক। শরীরে ভাইরাস থাকলেও সহজে এর কোন উপসর্গ থাকে না। তাই সবারই উচিত নিজে সচেতন হয়ে রক্ত পরীক্ষা করে নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিজেকেই নিশ্চিত করা।
এদিকে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিস ভাইরাস (হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ ও ‘ই’) দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৩ দশমিক ৪ লাখ মানুষ মারা যায়। সারাবিশ্বে প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি লোক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। যারমধ্যে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ তার রোগ সম্পর্কে অবগত নন।
নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল বুমবার্গের হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করেন এবং এই ভাইরাসের জন্য টিকাকরণ শুরু করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় তাঁর এই অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে ২৮ জুলাই তাঁর জন্মদিনে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশে^ পাঁচশ’ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হেপাটাইটিস বিষয়ে সচেতনতামূলক পোস্টার প্রদর্শনসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে সকাল সাড়ে আটটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে র‌্যালি ও আলোচনার সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট