চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

৩০ হাজার টাকার জন্য গৃহবধূ রোকসানাকে খুন করে সোহেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩ মে, ২০১৯ | ৩:১০ পূর্বাহ্ণ

ব্যবসায়ীর স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত সোহেলকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। কোরবানিগঞ্জের ব্যবসায়ী আবুল কাশেমের স্ত্রী রোকসানা বেগমকে গত মঙ্গলবার দুপুরে বাসায় ঢুকে উপুর্যপুরী ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। একই সময়ে আহত হন তার কলেজ পড়–য়া ছেলে আবদুল আজিজ (২১) ও প্রতিবেশী আবদুস সোবহান।
ঘটনার পর পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঐ রাতেই (মঙ্গলবার) নগরীর কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে সোহেলকে গ্রেপ্তার করেছে।
ব্যবসায়ী কাশেম জানান, গ্রেপ্তার সোহেল তার বোন জামাইয়ের চাচাত বোনের ছেলে এবং ৩৫ নম্বর বক্সীর হাটের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী নুরুল হকের ভাগ্নে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল জানান, ব্যবসায় লোকসান দিয়ে হতাশ তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। বছর দুয়েক ধরে তিনি ইয়াবায় আসক্ত। বাকলিয়া মিয়াখান নগর এলাকায় ‘মদিনা ইলেক্ট্রিক এন্ড হার্ডওয়ার’ নামে একটি রিকশার যন্ত্রাংশের দোকান ছিল তার। লোকসানের পর মাস তিনেক আগে ৭০ হাজার টাকায় দোকানটি বিক্রি করে দেন। দোকান বিক্রির টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন তিনি। টাকার অভাবে তার ২৮ হাজার টাকা ঘর ভাড়াও বকেয়া হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে কোরবানিগঞ্জে রোকসানার বাসায় যাওয়ার আগে তিনটি ইয়াবা সেবনের কথাও পুলিশকে বলেছেন এই যুবক। নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, সোহেল টাকার লোভে আত্নীয় আবুল কাশেমের বাসায় যান। যাওয়ার সময় তিনি একটি ছুরি ও খেলনা পিস্তল নিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল কাশেম ব্যবসায়ী হওয়ায় তার বাসায় অনেক টাকা থাকবে। রোকসানাকে একা পেলে চাকু ও ছুরির ভয় দেখিয়ে বাসা থেকে টাকা কিংবা মূল্যবান কিছু নিয়ে আসবে।
মঙ্গলবার সকালে সোহেল মোটর সাইকেলে কাশেমের বাসায় গিয়ে রোকসানার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। রোকসানা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহেল ছুরি ও খেলনা পিস্তল দেখিয়ে তাকে ভয় দেখান। এতেও রোকসনা টাকা দিতে রাজী না হলে সোহেল তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।এসময় ঘরের আলমারি ভেঙ্গে বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার, তেলের ডিও, রোকসানার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে নেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বলেন, ওই সময় বাসার গৃহকর্মী ঢুকে পড়লে তাকে ছুরির ভয় দেখিয়ে একস্থানে বসিয়ে রেখেছিলেন সোহেল, তখন রোকসানার ছেলে আজিজকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ছুরি নিয়ে পালানোর সময় ভবনের নিচে এক প্রতিবেশী তাকে বাধা দেয়। তখন সোহেল তাকেও ছুরিকাঘাত করে। হত্যার আলামত নষ্ট করতে সোহেল বাসাটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভবনটিতে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থেকে পাওয়া ফুটেজ দেখে সোহেলকে শনাক্ত করা হয়। হত্যার দায় স্বীকার করে বুধবার বিকেলে মহানগর হাকিম খাইরুল আমীনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন সোহেল।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত)ে মো. কামরুজ্জামান জানান, হত্যাকা- ঘটিয়ে সোহেল তার মোটর সাইকেলটি রেখে ঘটনাস্থলের কাছে খাতুনগঞ্জ আমিন মার্কেট এলাকার নিউ পার্ক ভবনে অবস্থান করেছিলেন। সেখান থেকে এক যুবককে বাকলিয়া ময়দার মিল এলাকায় তার বাসায় পাঠিয়ে কাপড় চোপড় আনায়। কাপড় আনার পর তার পরনে থাকা গেঞ্জি, প্যান্ট, স্যান্ডেল ভবনের তৃতীয় তলার বাথরুমে রেখে জামা-কাপড় পাল্টে নেয়। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাযের পর সে ওই ভবন থেকে নেমে তার সাথে থাকা ব্যাগটি নিচে ফেলে দিয়ে ১০ টাকা দিয়ে একটি বাজারের ব্যাগ কিনে নেন। সেই ব্যাগে মালামালগুলো নিয়ে মইজ্জ্যারটেক এলাকায় চলে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, মইজ্জ্যারটেকের বাসাটি সোহেল আগেই ভাড়া নিয়েছি। ওই বাসায় গিয়ে সোহেল ফোন করে তার স্ত্রীকে ওই বাসায় যেতে বলেছিল। সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তার বাসা থেকে একটি ল্যাপটপ, সিম, স্বর্ণের ও ইমিটেশনের অলঙ্কার,সিটি গ্রুপের ১২টি ডিও উদ্ধার করা হয়। যেগুলো আবুল কাশের বাসা থেকে চুরি হয়েছিল। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে রাস্তা থেকে ছুরি, নিউ পার্ক বিল্ডিং থেকে কাপড়, খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট