চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ট্রাক থেকে পুলিশের চাঁদাবাজি

আসছে কোরবানির পশু ‘আজ থেকে আর হবে না’ ডিসি-ট্রাফিক

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৭ জুলাই, ২০১৯ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। অন্যান্য বছরের মতো এবারও পশুবাহী ট্রাক ঘিরে শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। চাঁদা দিয়েই নগরীতে ঢুকছে পশুবাহী ট্রাক। পুলিশের উপস্থিতিতে টেন্ডালদের সঙ্গে চুক্তি করে পরে মুক্তি মিলছে গরু বেপারিদের।
গতকাল শুক্রবার নগরীর জিইসি, এ কে খান গেট ও অংলকার মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির দৃশ্য দেখা যায়। তবে আজ থেকে আর হবে না বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা।
দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ দিকে এমইএস কলেজ থেকে গর্ণপূর্ত অধিদপ্তর গেট পর্যন্ত ৪-৫টি গরুবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পশুবাহী ট্রাকও। একজন লোক (টেন্ডল) ট্রাকগুলো দাঁড় করিয়ে রফাদফা করছেন। তার সঙ্গে রফাদফা শেষ করে ট্রাকগুলো জিইসি মোড় পার হচ্ছে। দুই ট্রাক চালক জানান, পুলিশের নামে ট্রাকভেদে ৫শ থেকে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। টেন্ডলরা সংকেত দিয়ে ট্রাক দাঁড় করান। দর-দাম করে টাকা পরিশোধ করা হলে মোড়ে থাকা টেন্ডল বা পুলিশকে তা অবহিত করা হয়। পুলিশকে টাকা দিয়ে জিইসি মোড় পার হতে হয়। আগ থেকে টেন্ডলের সঙ্গে রফাদফা শেষ না করলে জিইসি মোড়ে ট্রাক আটকে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। গাড়ি ডকুমেন্ট, লাইসেন্স কেড়ে নিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে। তখন টাকা বেশি গুনতে হয়।
১০টা ১০ মিনিটে জিইসি মোড়ে একটি গরুবাহী একটি ট্রাক টেন্ডলের সঙ্গে রফাদফা না করে মোড়ে আসলে পুলিশ তা আটকে দেয়। ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য চালকের মোবাইল থেকে কার সঙ্গে থা বলেন। তারপর ট্রাকটি ছেড়ে দেয়। মহিষবাহী একটি ট্রাক আটকে চালককে নামিয়ে পড়েন টেন্ডল। পরে ওই চালককে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর চালক কাগজপত্র হাতে নিয়ে পুলিশ বক্স থেকে বের হতে দেখা যায়।
গরুবাহী ট্রাক চালক ও গরু বেপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর কোরবানির আগে পশুবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের কথা বলেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু বাস্তবে তা মিল পাওয়া যায় না। প্রতি বছরই জিইসি মোড়ে চাঁদাবাজি করা হয়। এবারও কোরবানির চাঁদ উঠার আগেই পূর্বের ন্যায় একই পদ্ধতিতে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। পুলিশের নামে টেন্ডলরা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে আসছে। উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু নিয়ে আসা চালকেরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ বা মুখ খোলেন না। তাই আগেই দেনদরবারের মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করে জিইসি মোড় পার হতে বাধ্য হচ্ছেন।
নগর ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর) জোনের ডিসি হারুনুর রশিদ হাজারী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমি দুই দিন ছুটিতে ছিলাম। আজ (গতকাল শুক্রবার) সকালে যোগদান করেছি। আপনি যখন বলছেন, আজ থেকে আর হবে না।’
শুধু জিইসি মোড় নয়, একই দৃশ্য দেখা যায় সিটি গেট ও অলঙ্কার মোড়ে। পুলিশের উপস্থিতিতে চাঁদাবাজির করা হচ্ছে।
দেখা যায়, সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিটি গেট ও অলংকার মোড়ে টেন্ডলরা কোরবানির পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে দেন-দরবার করছেন। অদূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখায় টেন্ডলের সঙ্গে দফারফা করতে হয় ট্রাক চালকদের। তবে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা কয়েকটি ট্রাক টেন্ডলদের খপ্পর থেকে রক্ষা পায়। ত্রিপল দিয়ে ঢাকা থাকায় পুলিশ ও টেন্ডলরা খেয়াল না করায় রক্ষা পেয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা। না হলে টেন্ডলদের খপ্পড় থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই।
সিটি গেট মোড়ে গরুবাহী দুটি ট্রাক (চালকদের অনুরোধে নম্বর গোপন রাখা হল) ঢুকছিল নগরীতে। চেকপোস্টের অদূরে দুটি ট্রাক থামিয়ে এক হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয় বলে জানান চালকেরা। পরে দেনদরবার করে ৫শ টাকা করে দিয়ে রক্ষা হয় তাদের। তারা জানান, অদূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকায় টাকা দিতে হয়েছে। না হলে মামলার ভয় দেখানো হয়। অন্য জেলা থেকে গরু-মহিষ নিয়ে আসি। মামলা দেওয়া হলে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। তারচেয়ে নগদে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলা ভালো।
রাজশাহীর সিটি বাজার নিয়ে গরু নিয়ে আসা বোয়ালখালীর গোমদ-ী এলাকার দুই যুবক জানান, সকাল ৮ টায় অলংকার মোড় এলাকায় ট্রাক থামানো হয়। ৫শ টাকা দিয়ে পার হতে হয়। এরপর জিইসি মোড় এলাকায় একই খপ্পড়ে পড়তে হয়। গণপূর্ত বিভাগের গেট এলাকায় ট্রাক দাঁড় করান এক যুবক। তার হাতে টোকেন রয়েছে। সেই যুবকের হাতে ৫শ টাকা দিয়ে পার হতে হয়েছে। পুলিশের নামে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন ওই দুই যুবক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি গরুবাহী ট্রাক চট্টগ্রামে আসছে। প্রত্যেক ট্রাক থেকে পুলিশ চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট