চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্ধ হলো টাকা কামানোর ‘ফাঁদ’

ভেস্তে যাচ্ছে প্রা. শিক্ষা অফিসের বায়োমেট্রিক হাজিরা ‘বাণিজ্য’

ইমরান বিন ছবুর

২৭ জুলাই, ২০১৯ | ২:০২ পূর্বাহ্ণ

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে। স্ব স্ব স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের টাকায় বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালকের নির্দেশে বিভিন্ন স্কুলে ৩২ হাজার ৯৪৫ টাকার বিল পাঠানো হয়েছে। যেখানে বাজারে একেকটি বায়োমেট্রিক মেশিনের দাম মানভেদে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল বা বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা অনুযায়ী স্ব স্ব স্কুল কর্তৃপক্ষ চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) এর আওতায় স্লিপ স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান ফান্ডের অর্থ দিয়ে এ বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনবে। কিন্তু থানা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে অনেক স্কুলে একটি ইনভয়েস স্লিপ পাঠানো হয়। ‘প্রত্যাশা কমিউনিকেশন এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাডে পাঠানো ইনভয়েস বিলে ৩২ হাজার ৯৪৫ টাকার বিল দেখানো হয়। যেখানে মেশিনের দাম দেখানো হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া মোবাইল সিমসহ অন্যান্য খাতে ৮ হাজার ৪৫০ টাকা দেখানো হয় এবং ২ হাজার ৯৯৫ টাকা ভ্যাট দেখানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয় ওই স্লিপে স্বাক্ষর করে টাকাটা পরিশোধ করে দিতে। কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান বিষয়টি নিয়ে থানা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে আপত্তি জানালে তারা জানান, এটা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের নির্দেশ। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলে এক পর্যায়ে এই কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ সম্পর্কে আনোয়ারা উপজেলার একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্ব স্ব বিদ্যালয়কে নিজ ফান্ড থেকে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বিভাগীয় উপ-পরিচালকের নির্দেশে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ের ভাউচার পাঠিয়ে তা স্বাক্ষর করে পুনরায় পাঠাতে বলা হয়। আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। যেখানে ৮-১০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মেশিন পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে তারা মেশিনের বিল দেখাচ্ছে ২১ হাজার ৫০০ টাকা। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চট্টগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিভাগীয় উপ-পরিচালক সুলতান মিয়ার সাথে অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরবর্তীতে ফোনে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহেদী শাহনেওয়াজ জলিল বলেন, আমরা এরকম বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা ছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের তহবিল থেকে টাকা দিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনবে। কিন্তু আমরা অভিযোগ পেয়েছি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মেশিন ক্রয়ের ভাউচার বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনা স্থগিত করেছে। কোন ব্রান্ডের মেশিন বা কত দামের মধ্যে কিনবে বিস্তারিত নতুন সিদ্ধান্তের মাধ্যেমে কিছু দিনের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত স্কুলে উপস্থিত থাকেন না কিংবা যথা সময়ে স্কুলে আসেন না। কিন্তু পরবর্তীতে হাজিরা খাতায় তাদের স্বাক্ষর পাওয়া যায়। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে সনাতনী হাজিরা পদ্ধতি বাতিল করে বায়োমেট্রিকক হাজিরা পদ্ধতির উদ্যোগ নেয় সরকার। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিনিধি দল দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যান। এসময় নির্ধারিত সময়ের আগেই অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী শূন্য দেখা যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট