চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

ইমাম হোসাইন রাজু

২৬ জুলাই, ২০১৯ | ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

হ ১৫ দিনের ডেঙ্গু রোগীর
সংখ্যা বেড়ে চার গুণ
হ ড্রেনে ওষুধ ছিটিয়ে
এডিস মশা নিধন সম্ভব
নয় : সিভিল সার্জন

ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি মাসের শুরুতে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যায় কম হলেও বর্তমানে তা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন করে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মধ্যে দুই তৃতীয়ংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও বাকীরা এখনো চিকিৎসাধীন আছে।
সর্বশেষ গত দুইদিনে চট্টগ্রামে দশজন নতুন রোগী শনাক্ত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ছয়জন ডেঙ্গু রোগী। বাকি চারজনের মধ্যে নগরীর বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে দু’জন এবং ন্যাশনাল ও সিএসসিআর হাসপাতালে দু’জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪২জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শনাক্তের তালিকা এসেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।
চমেক হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন রোগী। এরমধ্যে সাত জন ছাড়পত্র পেলেও বাকী নয়জন এখানো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার ১৫ রোগীর মধ্যে আটজেনই নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া নগরীর বেসরকারি হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যেও বেশিরভাগ হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার।
এদিকে মরণব্যাধি এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আতংক দেখা দিয়েছে সবার মাঝে। যদিও আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরা বলছেন, ঢাকার মতো এখনো রূপ ধারণ করেনি। বরং চট্টগ্রামে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তা নরমাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। তবুও সবাইকে সকর্ত থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযাী, জুলাই মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র আটজন। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িছে ৩৯ জনে। এর মধ্যে গত ছয়দিনেই (২০ থেকে ২৫ জুলাই) চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩১জন। আর গত ছয়মাসে এ সংখ্যা ছিল মাত্র তিনজনের। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৪২জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর বাইরেও চট্টগ্রাম জেলা ও নগরীর অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক এবং ডাক্তারের চেম্বারে রোগীরা চিকিৎসা নিলেও সে হিসেব নেই সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। তবে চট্টগ্রামে দিনদিন ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। তবে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ রয়েছেন। আমরা সবসময় তাদের খোঁজ খরব রাখছি’।
এদিকে ঢাকায় ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করলেও নগরীতে যেন তা ধারণ না করতে পারে সেজন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্না সিদ্দিকী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের ড্রেনগুলোতে ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড, দশ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ছিটানো হচ্ছে। এ কাজে ১৬১ জন কর্মী কাজ করছে। এছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি’।
এ মুহূর্তে ড্রেনে ঔষধ না ছিটিয়ে বাসা-বাড়ি এবং প্রতিটি মার্কেটে ছিটানো দরকার বলে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বকোণকে বলেন, ‘ডেঙ্গু হয় এডিস মশা থেকে। আর এডিস মশা থাকে পরিস্কার পানি কিংবা পরিস্কার জায়গায়। ড্রেনের ময়লা পানিতে এডিস মশা থাকেনা। সেখানে সাধারণ মশাগুলোর বসবাস। এখন যেহেতু ডেঙ্গু হওয়ার সময়, তাই এসব ঔষধ ড্রেনে না ছিটিয়ে প্রতিটি বাসা-বাড়ি, অফিস, মার্কেট, কর্পোরেটের আঙ্গিনায় ছিটানো উচিত। তাহলে অন্তত এডিস মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট