চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এখনো আলো ছড়াচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন আর্য্য সংগীত সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জুলাই, ২০১৯ | ১:১৬ পূর্বাহ্ণ

‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি/ আজ আমাদের ছুটি ও ভাই/ আজ আমাদের ছুটি/ কি করি আজ ভেবে না পাই/ পথ হারিয়ে কোন বনে যাই/ কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই / সকল ছেলের জুটি/আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি’
রবীন্দ্রসংগীতের সুরে তাল মিলিয়ে নৃত্য করছেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুম ভরা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ তাদের শিক্ষিকার দিকে। কি বলছেন ,আর কোন সুরে গান করে নাচ করছেন । তাঁর গানের সাথে তাল ধরে তারাও নাচ করছেন। দুই বাংলার প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যম-িত প্রতিষ্ঠান আর্য্য সঙ্গীত সমিতির সুরেন্দ্র সংগীত বিদ্যাপীঠে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসে নুপুরের নিক্কন। অবিভক্ত বাংলার ঐতিহাসিক এ সংগীত সমিতি ১৯০৬ সালে প্রথম যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রামের কাটা পাহাড় এলাকায়। সেই থেকে এখানে হাজারও শিক্ষার্থী তালিম নিয়ে দেশ-বিদেশে গান, নাচ ও আবৃত্তি করে আসছে সুনামের সাথে। এই বিদ্যাপীঠ থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে অনেক গুণী শিল্পীর জন্ম হয়েছে। উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষক অনুপ চৌধুরী রতন বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত এখান থেকে বাংলাদেশের অনেক খ্যাতিমান শিল্পী গান, নাচ ও আবৃত্তির তালিম নিয়েছেন।মিহির নন্দী, আইয়ুব বাচ্চু, শেফালী ঘোষ, রবি চৌধুরী, তপন চৌধুরী, জয়ন্তী লালা, মৃণাল ভট্টাচার্য্য, পার্থ বড়–য়াসহ আরো অনেকে। ভারতেরও অনেক শিল্পী এখান থেকে তালিম নিয়েছে। উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষক পংকজ সুত্র ধর বলেন, হৃদয়ে নির্মল ভাবের সৃষ্টি করে সংগীত । অপরাধ প্রবণতা দূর করে। তাই আগামী প্রজন্মকে অবশ্যই সংগীতপ্রেমী ও সংস্কৃতিমনা হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন ।কারণ সংগীত মানুষের মনে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। এর মোহনীয় শক্তি মানুষকে আন্তরিক ও মানবিক হতেও সাহায্য করে। কঠোর সাধনা করে এটি রপ্ত করতে হয়। বর্তমানে এখানে ১৫০০ জন শিক্ষার্থী ও ১৮ জন শিক্ষক আছে। আমাদের এখানে আট বছরের একটি শিক্ষা ব্যবস্থা আছে।
তিনি বলেন, এখানে নিয়মিত যেসব শিক্ষা কার্যক্রম হয় তা হলো উচ্চাঙ্গসংগীত, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, যন্ত্র সংগীত, তবলা, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঐশী পালের মা বলেন, এখানে আমার মেয়ে তিন বছর ধরে রবীন্দ্রসংগীত শিখছে। এখানের শিক্ষা কার্যক্রম অনেক ভালো। আবার এখান থেকে অনেক বিখ্যাত শিল্পীর জন্ম হয়েছে। সবাইতো চায় তাদের সন্তানকে একটি ভালো জায়গা থেকে শিক্ষা দিতে। তবে এমন গৌরবোজ্জ্বল ও প্রাচীনতম একটি প্রতিষ্ঠান হলেও এটি এখনো আদা পাকা টিন সেটের ঘরেই রয়ে গেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘরকে উপমহাদেশের সংগীতের বাতিঘরও বলা হয়। জরাজীর্ণ সেমিপাকা ভবনটি এখনো শিক্ষার্থীদের মাঝে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। তাই এটির উন্নয়নে নজর দেওয়া দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট