চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জনপ্রিয়তা ও ভূমি বিরোধকে খুনের কারণ হিসেবে দেখছে স্বজনরা

লামায় আওয়ামী লীগ নেতা খুন

নিজস্ব সংবাদদাতা হ লামা

২৫ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৩ পূর্বাহ্ণ

খামার বাড়ি হতে বাড়িতে ফেরার পথে উৎপেতে থাকা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে লামা আওয়ামীলীগ নেতা মো. আলমগীর সিকদার (৪২) কে। অধিক জনপ্রিয়তা ও ভূমি বিরোধকে এই ঘটনার নেপথ্যের কারণ হিসেবে দেখছেন নিহতের ছোট ভাই মো. দস্তগীর সিকদার মানিক।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমার বড় ভাই এলাকায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছিলেন। আগামী ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করার কথা ছিল। এছাড়া সরই আলাদা উপজেলা হলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার আশা ব্যক্ত করেছিলেন। তাকে সরিয়ে দিতে পারলে অনেকের রাস্তা পরিস্কার হবে এই ধারণা থেকে হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। অপরদিকে আমাদের বিশাল ভূ-সম্পত্তি বিষয়ে কয়েকজনের সাথে বিরোধ রয়েছে। সেটাও খুনের কারণ হতে পারে। আমাদের ধারণা খুনিরা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ছিল। তবে এই হত্যাকা-ের পিছনে অনেক রাঘোববোয়ালরা জড়িত থাকতে পারে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই ও খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় সরই ইউনিয়নের পূর্ব হাসনাভিটা এলাকার ফাতেমা দরগাহ নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মো. আলমগীর সিকদার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সরই ইউনিয়নের সাবেক ৩ বারের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী সিকদারের বড় ছেলে। খুনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে।
এদিকে বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লামা-আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাইফ শামীম পিএসসি ও বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলী হোসেন (ডিএসবি)। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লোকালয়ের পাশে এমন হত্যাকা- ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে। মো. আলমগীর সিকদার কেন খুন হলেন তা এখনো বুঝা যায়নি। খুনের কিছু মোটিভ ও ধারণা আমরা পেয়েছি। শীঘ্রই আমরা দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পারব। এই ঘটনায় সন্দেহজনক একজনকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের হাতে দিয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আটক ব্যক্তি একাধিক পরিচয় দেয়ায় তার আসল ঠিকানা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সে তার নাম মংচিং মার্মা আবার মংথোয়াই মার্মা বলে জানায়। আটক ব্যক্তি জানান তার বাড়ি আলীকদম উপজেলায়।
নিহতের স্ত্রী পারভীন আক্তার মুন্নি কান্নারত অবস্থায় বলেন, এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। আমার ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে যারা এতিম করেছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে। এমন সময় খুনিরা আমার স্বামীকে খুন করল যখন আমার শ^শুর-শাশুড়ি হজ পালনে দেশের বাহিরে আছেন। আমার স্বামীরা ২ ভাই ও ২ বোন।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আহমদ বলেন, রাত সাড়ে ৯টায় আমরা তিনজন ব্যক্তিকে মোটর সাইকেল নিয়ে রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। তাদের মধ্যে দুইজনের মাথায় হেলমেট ও অন্ধকার থাকায় কাউকে চিনতে পারিনি। অতি জনপ্রিয়তা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও ভূমি বিরোধ তার জন্য কাল হয়েছে।
সরই ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম বলেন, গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় লাশ বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতাল হতে ময়নাতদন্ত শেষ করে নিজ বাড়িতে আনা হয়েছে। তার নিজ বাড়ি পাশর্^বর্তী লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের নয়া বাজার এলাকায়। বিকাল ৫টায় গৌরস্থান উচ্চ বিদ্যালয়ে তার জানাজা নামাজ শেষে বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে কবর দেয়া হবে। মাথার পিছনে ঘাড়ে কোপ দিয়ে তাকে খুন করা হয়। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে দা দিয়ে জবাই করা হয়েছে। এছাড়া মাথার উপরের অংশে আরো ৩টি দায়ের কোপ রয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সরই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) মো. কাসেম আলী বিশ^াস বলেন, ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা নিহত মো. আলমগীরের মোটর সাইকেল ও খুনের কাজে ব্যবহৃত আরেকটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে আমরা হেফাজতে রেখেছি। ঘটনাস্থলে পাওয়া খুনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি দা আমরা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছি।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ. লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল বলেন, রাতেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহতের পরিবারকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।
লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, খুনের প্রত্যেকটি আলামত ও মোটিভ মাথায় রেখে আমরা তদন্ত করছি। আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হব। এঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট