চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি: বন্দর থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে চট্টগ্রাম

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ২:১৯ অপরাহ্ণ

এরশাদ উল্লাহ

 

আমাদের চট্টগ্রামের ফ্যাক্টরিগুলোর পোর্ট সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমরা উৎপাদনে পিছিয়ে গেছি। আমাদের চট্টগ্রামে দিন দিন ফ্যাক্টরি কমেছে এবং ঢাকার দিকে দিন দিন ফ্যাক্টরি বেড়েছে। রেডিসন ব্লু’র আগে চট্টগ্রামে কোনো ফাইভ স্টার হোটেল ছিল না। রেডিসন ব্লু তৈরি হওয়ার আগের সময়ে হোটেল আগ্রাবাদ ছাড়া আর কোনো ভালো হোটেলও ছিল না। বায়াররা বিলাসবহুল হোটেলে থাকতে পছন্দ করেন।

চট্টগ্রামে ভালো মানের কোনো হোটেল না থাকার কারণে বায়াররা রাজধানীতে থাকতেন। রাজধানীতে থাকার ফলে ঢাকার ফ্যাক্টরির মালিকদের সাথে বায়ারদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। অন্যদিকে, বায়াররা চট্টগ্রামে সকালে আসলে বিকেলে ঢাকায় ফিরে যেত। আগে এত ফ্লাইটও ছিল না। মূল কথা হচ্ছে- একজন বায়ারের ঢাকায় যেসব সুযোগ-সুবিধা ছিল চট্টগ্রামে তা ছিল না বলেই বায়াররা ঢাকামুখী ছিল। এসব কারণে ঢাকার ফ্যাক্টরিগুলো অর্ডারও বেশি পাচ্ছে এবং উৎপাদনও বেশি হচ্ছে।

লকডাউনের ফলে টোটাল ইকোনোমির উপর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে গার্মেন্টস সেক্টরেও বিশাল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। লকডাউনের ফলে শ্রমিকরা আসতে পারে না। শ্রমিকরা আসতে না পারলে কাক্সিক্ষত উৎপাদনও হবে না। উৎপাদন না হলে আমরা বায়ারদের নির্দিষ্ট সময়ে কিভাবে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিব? অর্ডার, উৎপাদন এবং ডেলিভারির কোনো জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি হলে এটা প্রতিটি জায়গায় প্রভাব ফেলবে। এরফলে ফ্যাক্টরির ক্ষতি হচ্ছে, ব্যাংকের ক্ষতি এবং একইভাবে দেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। এসব কারণে বায়ার হারানোরও শঙ্কা থাকে।

১৯৯০ সালের দিকে চট্টগ্রাম প্রায় ৭৫০টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছিল। কিন্তু এসব ফ্যাক্টরি কমতে কমতে এখন দুইশ থেকে আড়াইশতে নেমে এসেছে। অনেক ফ্যাক্টরি কমপ্লায়েন্স এর কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক ফ্যাক্টরি স্টক লেভেলের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান মিস ম্যানেজমেন্টের কারণেও বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংকের সহযোগিতা না পেয়েও কিন্তু অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ হতে বাধ্য হয়। ছোট ও মধ্যম ফ্যাক্টরিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উদ্যোক্তা গার্মেন্টস ব্যবসা ছেড়ে চাকরি বা অন্য ব্যবসায়ে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে, বড় বড় ফ্যাক্টরিগুলোর মধ্যে যেগুলো নিজস্ব বিল্ডিং বা নিজস্ব জায়াগার উপর করেছে সেগুলো কোনোভাবে ঠিকে আছে। যারা জায়গা বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফ্যাক্টরি করেছে তা বন্ধ হয়ে গেছে।

মিরসরাইয়ের ইকোনোমিক জোন বা বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেক জায়গা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এসব ফ্যাক্টরি যেকোনো ভাবে উন্নত করতে হবে। ভিয়েতনাম ও মিয়ারমার থেকে বেশকিছু অর্ডার আমাদের দেশে আসছে। অর্ডার আসছে ঠিকই কিন্তু মূল্য কম। প্রাইজ কম হওয়ায় ফ্যাক্টরি মালিকরা খুব একটা লাভবান হচ্ছেন না। আবার উৎপাদন বেশি না হওয়ায় ফ্যাক্টরি মালিকরা বেশি অর্ডারও নিতে পারছেন না। আমাদের দক্ষ শ্রমিকের খুব অভাব। নতুন ফ্যাক্টরি করতে গেলে ফ্রেশ ওয়ার্কার নিয়ে তাদের ধীরে ধীরে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হয়। এখানেও বেশ সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে গেলে দক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি আমাদের মেশিন বাড়াতে হবে, অবকাঠামো বাড়াতে হবে। আর এগুলো তো রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব না।

প্রতি বছর আমাদের বেশ কিছু কারখানা রুগ্ন হয়। কি কি কারণে এসব কারখানা রুগ্ন হয় তা নির্ণয় করতে হবে। অনেক সময় গার্মেন্টস মালিকদের কারণে ফ্যাক্টরি রুগ্ন হয়। ব্যাংকের কারণে ফ্যাক্টরি রুগ্ন হয় এবং সরকারের পলিসির কারণেও ফ্যাক্টরি রুগ্ন হতে পারে। কারণ নির্ণয় করে ফ্যাক্টরিকে রুগ্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। যেমন একটি দেশে যদি দীর্ঘদিন লকডাউন চলে, সেখানে অবশ্যই অনেক ফ্যাক্টরি রুগ্ন হয়ে যাবে।

কালুরঘাটে গার্মেন্টস পল্লী করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে আমাদের (বিজিএমইএ) একটি এমইউ স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জায়গা বরাদ্দ দিতে চেয়েছিল তা সঠিক ছিল না। সিটি কর্পোরেশন আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভবন তৈরি করতে চেয়েছিল। অন্যদিকে আবার দ্বিগুণ ভাড়াও চাচ্ছিল। এত বেশি ভাড়া দিয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিকরা ব্যবসা করতে পারবেন না। এসব কারণে কালুরঘাটের গার্মেন্টস পল্লী আর সফল হয়নি। মূলত সিটি কর্পোরেশন চেয়েছিল আমাদের টাকা দিয়ে বিল্ডিং করতে। আবার ভাড়াও চেয়েছে বেশি।

লেখক: সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি, বিজিএমইএ

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট