চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সবুজ পোশাক কারখানা: বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১:৪০ অপরাহ্ণ

মিজানুর রহমান

 

সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশি ক্রেতাদের কাছে আস্থা সঙ্কটে পড়েছিল তৈরি পোশাক খাত। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পোশাক কারখানার মালিকরা একে একে গড়ে তোলেন পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা। বিশ্বে এখন বাংলাদেশেই তৈরি পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি সবুজ কারখানা রয়েছে। সবুজ কারখানা স্থাপনে বিশ্বকে পথও দেখাচ্ছে বাংলাদেশ।

পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনার মধ্য দিয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ঘটছে সবুজ বিপ্লব। এর ফলে দেশের পোশাক শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। সবুজ কারখানার মাধ্যমে কর্মসংস্থান হচ্ছে লাখ লাখ মানুষের। আর শ্রমিকরা পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা। সুবিধা পাওয়াতে পিছিয়ে নেই সবুজ কারখানা স্থাপনকারী শিল্প উদ্যোক্তারাও।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়- বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫৫টি সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এলইইডি সার্টিফিকেশন পেয়েছে এই ১৫৫টি কারখানা। এদের মধ্যে ৪৬টি কারখানা প্লাটিনাম, ৯৫টি কারখানা গোল্ড, ১০টি কারখানা সিলভার এবং ৪টি কারখানা রয়েছে সার্টিফায়েড ক্যাটাগরিতে।

তৈরি পোশাক রপ্তানির সূতিকাগার চট্টগ্রামে সবুজ কারখানা রয়েছে ১৮টি। এরমধ্যে গোল্ড ক্যাটাগরিতে রয়েছে- আইডিএলসি চিটাগং ব্রাঞ্চ, প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড, জিন্স ২০০০ লিমিটেড, রিজেন্সি গার্মেন্টস লিমিটেড- ইউনিট-৩, ইউনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড, ক্যানপার্ক-২, হেলা ক্লথিং বাংলাদেশ লিমিটেড, ভালটেক্স ইন্টারন্যাশনাল বিডি লিমিটেড।

এছাড়া জিবি বাংলাদেশ লিমিটেড, ক্যানপার্ক-৩, ক্যানপার্ক-৫, রিজেন্সি গার্মেন্টস লিমিটেড- ইউনিট-১, এনএইচটি ফ্যাশন্স লিমিটেড, ক্যানপার্ক-৬ ও ইনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড গোল্ড ক্যাটাগরিতে সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে। ইউনিভোগ গার্মেন্টস লিমিটেড সিলভার ক্যাটাগরিতে এবং ক্যানপার্ক-২ প্ল্যাটিনাম ক্যাটাগরিতে সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে।

সবুজ কারখানার সুবিধা কি?

উদ্যোক্তারা বলছেন- পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানায় বিদ্যুৎ ও পানির খরচ কম হয়। কার্বন নিঃসরণও কম। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ ও ৪০ শতাংশ পানির ব্যবহার কমানো সম্ভব। পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়।

সবুজ কারখানায় আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে যে পরিমাণ জমির ওপর কারখানা হবে তার অর্ধেকটাই ছেড়ে দিতে হয় সবুজায়নের জন্য। সেখানে সবুজ বাগান থাকে। কারখানার চারপাশে খোলা জায়গা রাখতে হয়। ভেতরেও থাকতে হয় খোলা জায়গা। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ থাকে সুন্দর। এক শ্রমিক থেকে অন্য শ্রমিকের দূরত্বও থাকবে বেশ।

এ ধরনের কারখানায় সবকিছুই হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। এছাড়া পরিবেশবান্ধব সোলার প্যানেল, এলইডি লাইট রাখা হয়। পানি রিসাইক্লিং ব্যবস্থা থাকতে হয়। পরিবেশের দূষণ কম করে। সর্বোপরি- সবুজ কারখানায় শ্রমিকদের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত হয়। এ কারণে বিদেশি ক্রেতারা সবুজ কারখানাকে গুরুত্ব দেন বেশি।

 

সবুজ কারখানার শুরুর কথা:

বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো লিডারশিপ ইন এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় ৩টি। ২০১৫ সালে হয় ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ এবং ২৪টি।

২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরো ৪৮টি কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে। আর এভাবেই সব মিলিয়ে দেশে মোট পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ১৫৫টিতে দাঁড়িয়েছে। সবুজ পোশাক কারখানায় বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ।

 

প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী ব্রান্ডিং:

উদ্যোক্তারা বলছেন- পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যার দিক দিয়ে অন্য প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশের ধারে কাছেও নেই। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা পরিবেশবান্ধব কারখানার ব্র্যান্ডিং করলেও সামগ্রিকভাবে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে না। অথচ সেটি করা গেলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হতো। তাতে পুরো পোশাক খাতই উপকৃত হতো।

লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক পূর্বকোণ

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট