চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তৈরি পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় বিপ্লব হতে পারে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকে

অনলাইন ডেস্ক

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

আবুল কাসেম হায়দার

 

কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ে অনেক ধরণের ফ্যাশনেবল পোশাক করা যায়। যা কটন কাপড়ে হয় না। সে কারণে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। সুযোগটা নিতে না পারলে আমরা ট্রেন মিস করব। চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত ইতিমধ্যে অনেক কিছু করে ফেলেছে। কৃত্রিম তন্তুর জন্য আমাদের সংযোগ শিল্পকে শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ করতে হবে। সে জন্য নীতি সহায়তা সরকারের পক্ষ থেকে খুব বেশি প্রয়োজন।

বিশ্বে খেলাধুলার পোশাক বা স্পোর্টসওয়্যার রেইনকোটসহ আউটারওয়্যারের শতভাগই এখন কৃত্রিম তন্তু নির্ভর। সব মিলিয়ে বিশ্বে তৈরি পোশাকের ৭৮ শতাংশ বেশি হচ্ছে কৃত্রিম তন্তু থেকে। করোনার কারণে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা আরও বেড়েছে। এ ধরণের পোশাক যেমন দ্রুত ঘাম চুষে নেয়, তেমনি আরামদায়কও।

তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও চীন এখন শতভাগই কৃত্রিম তন্তু নির্ভর। এ ধরনের সূতা তৈরিতে বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা অনেক কাজ করেছেন। তাই মানের দিক থেকে কৃত্রিম তন্তুর সূতায় অনেক বৈচিত্র্য আসবে। অন্য দিকে তুলার তৈরি সূতা যেহেতু প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি, তাই সেখানে বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ অনেক কম।

বিজ্ঞানীদের কথা:

১৮৯৪ সালে কৃত্রিম সিল্কের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। ফ্রান্সের বিজ্ঞানী প্রকৌশলী ও শিল্পপতি হিলাইরে দ্য চার্ডোনের উদ্ভাবিত কৃত্রিম তন্তুর একটি প্রতিষ্ঠান এটি শুরু করেছিল। প্রাকৃতিক তুলা বা কটনের তৈরি পোশাকের রাজত্বে বর্তমানে নতুন করে বিশাল জানান দিয়েছে ম্যানমেইড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক।

কৃত্রিম তন্তুর চাহিদা:

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প শতভাগ কটনের উপর নির্ভর। এখনও আমাদের রপ্তানির সিংহ ভাগই কটন নির্ভর সূতা থেকে। আমাদের দেশে শতভাগ কটন সূতা মিল গড়ে উঠেছে অনেক। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের চার ভাগের তিন ভাগই কটনের। তবে ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশের বাাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন।

২০১৯ সালে সারা বিশ্বে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ১৯ হাজার থেকে ২০ হাাজার কোটি ডলারের কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানি হয়। ২০২৫ সালে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৪০ হাজার কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চ এই ধরণের তথ্য দিয়েছে। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারার ফেডারেশনের (আইটিএমএফ) তথ্য অনুযায়ী মোট পোশাকের ৭৮ শতাংশই কৃত্রিম তন্তুর। বাকি ২২ শতাংশ তুলার তন্তুর ।

কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধির অনেক কারণ রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ক্রেতাদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুলা উৎপাদনে প্রচুর পরিরমাণ পানি ও জমি প্রয়োজন হয়। তারপর কাপড়ে রং কিংবা ধোঁয়া বা ওয়াশে প্রচুর পানির ব্যবহার হয়। এই কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহ কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি করা পোশাকের দিকে ঝুঁকছে। অন্য একটি বড় কারণ হলো দ্রুত ফ্যাশনের পরিবর্তন। নিত্য নতুন পোশাক তৈরিতে কৃত্রিম তন্তুর জুড়ি নেই। তাছাড়া এটি আরামদায়ক, টেকসই, দেখতে সুন্দর এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহজে করা যায়।

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প:

মূলত ১৯৭৬ সাল থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু। ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ বলতে গেলে সরাসরি তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু করে। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। প্রথম চীন এবং তৃতীয় ভিয়েতনাম। কিন্তু কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানিতে চীন তো দূরের কথা, ভিয়েতনামের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাকে ভিয়েতনাম বিশ্বের ১০ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৫ শতাংশেরও কম রপ্তানি করছে।

তবে দেরিতে হলেও ধীরে ধীরে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে আসছে। আগামীতে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক বড় বাজার দখল করবে। তাই তৈরি পোশাক শিল্প নতুন মাত্রা পাবে। ধীরে ধীরে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এই খাতে বিনিয়োগ করবে। বড় বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ব্যবসাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে কৃত্রিম ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত তন্তুর দিকে ঝুঁকছে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের শুধু সূতার তৈরি পোশাকের উপর নির্ভর করে থাকার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।

 

তুলা থেকে সূতা, কৃত্রিম তন্তু কেমন করে:

তুলা থেকে সূতা হয়। তা দিয়ে পোশাক তৈরি এবং রপ্তানি হয়। বাংলাদেশে তুলা উৎপাদন নেই বললেই চলে। সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর আমাদের দেশের স্পিনিং মিলসমূহ। তুলার মতো কৃত্রিম তন্তু ও গাছ, বাঁশ বা কাঠ থেকে হতে পারে। কৃত্রিম তন্তু দুই প্রকার। ন্যাচারাল পলিমার ও সিনথেটিক পলিমারত ফাইবার বা তন্তু। বিভিন্ন রকম গাছ, কাঠ বা বাঁশ অর্থাৎ উদ্ভিদজাত তন্তু মূলত ন্যাচারাল পলিমার ফাইবার। এ ধরণের তন্তুর মধ্যে ভিসকস, নেসিল, মোডাল বেশ জনপ্রিয়। এসব তন্তুর সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রায় তুলা র্মিশ্রণ করে সূতা উৎপাদন করা হয়। তবে উদ্ভিদজাত হওয়ায় অনেকে এটিকে কৃত্রিম তন্তু বলতে চাচ্ছে না।

অন্যদিকে পেট্রোক্যামিক্যাল থেকে সিনথেটিক পলিমার ফাইবার হয়। এ ক্ষেত্রে পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের বোতল বেশি ব্যবহার করা হয়। সিনথেটিক তন্তুর মধ্যে পলিয়েস্টার ও নাইলন বেশি জনপ্রিয়। এসব তন্তু থেকে সূতা তৈরি করে জ্যাকেট, রেইনকোট, স্পোর্টসওয়্যার, অন্তর্বাসসহ নানা ধরনের পোশাকের কাপড় উৎপাদিত হয়। তাছাড়া সিনথেটিক ফাইবারের সঙ্গে তুলার মিশ্রণ ঘটিয়ে টি-শার্ট, শার্ট, প্যান্টসহ বিভিন্ন ধরণের কাপড় তৈরি করা হয়।

দেশে কৃত্রিম তন্তুর আমদানি:

বিশ্বের সেরা তৈরি পোশাক আমদানি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার কারণে বাংলাদেশে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাকের উৎপাদন ও রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। দেশে মাত্র তিন চারটি বস্ত্রকল কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন করছেঅধিকাংশ স্পিনিং মিলসমূহ বিদেশ থেকে পলিয়েস্টার, স্ট্যাপল ফাইবাার, ভিসকস স্ট্যাপল ফাইবার, টেনসিল তন্তু আমদানি করে সূতা ও কাপড় উৎপাদন করছে।

বিটিএমএ’র তথ্য অনুযায়ী- ২০১৬ সালে ২৯ হাজার ১৪৬ টন ভিসকস স্ট্যাপল ফাইবার আমদানি হয়েছিল। ২০২০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩ হাজার ২৮৯ টনে উন্নীত হয়েছে, যার আমদানি মূল্য ৮৮৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার আমদানি হয়েছে ৭৮ হাজার ২০৮ টন। যা ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ৯৬ হাজার ৭৭ টন। এই পরিমাণ পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবারের মূল্য ৯২৭ কোটি টাকা।

এইখাতে নতুন বিনিয়োগ:

কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে দেশের বস্ত্র শিল্পের উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। করোনাকালেও বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। ডিবিএল ইতিমধ্যে ৫৬২ কোটি টাকা এইখাতে বিনিয়োগের ঘোষণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

এনজেড টেক্স গ্রুপ কৃত্রিম তন্তু আমদানি করে প্রথমে ভিসকস, টেনসিল ও মোডাল সূতা এবং তা দিয়ে কাপড় তৈরি করছে। প্রতি বছর এই গ্রুপের ব্যবসা ৩০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ভোলতায় প্রতিষ্ঠানটি ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্লাস্টিকের বোতল থেকে পলিয়েস্টার তন্তু উৎপাদন করবে।

ধীরে ধীরে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই তন্তু উৎপাদনে নতুন করে বিনিয়োগ করবে। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখা ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা থাকে। সেই অনুযায়ী আগামী বছরগুলোতে এইখাতে অনেক বেশি বিনিয়োগ আসবে।

 

ভারত কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে:

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারত বাংলাদেশ থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তবে কৃত্রিম তন্তু পোশাকের ব্যবসা ধরতে ভারতের নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারও বেশ সহযোগিতা করছে। বর্তমানে বছরে ১৬০ কোটি ডলার কৃত্রিম তন্তু পোশাক ভারত রপ্তানি করছে।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের রপপ্তানি শক্তিশালী করার জন্য ভারত তিন বছরে সাতটি বড় আকারের টেক্সটাইল পার্ক বা বস্ত্রপল্লী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। একেকটি বস্ত্র পল্লী এক হাজার একরের বেশি জমিতে গড়ে তোলা হবে। সেখানে বিশ্বমানের অবকাঠামো থাকবে। সেই সঙ্গে বস্ত্রখাতের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি রুপির প্রণোদনা স্কিমের পরিকল্পনা ভারত নিয়েছে।

বাংলাদেশের কী করণীয়:

দেশে কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে নতুন করে বিনিয়োগে বিটিএমএ ও বিজিএমইএ নানা প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিজিএমই তৈরি পোশাকের কৃত্রিম তন্তুর বাজার ধরতে বিগত বাজেট ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু সরকার বিষয়টির গভীরে গিয়ে চিন্তা করার সুযোগ পায়নি। বিজিএমই’র ধারণা ছিল- এই সহযোগিতা ফেলে তৈরি পোশাক শিল্পখাত অতিরিক্ত ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে সক্ষম হতো।

লিওটাইমের বাধ্যবাধকতার কারণে আমাদের দেশে উদ্যোক্তাদের অবশ্যই কৃত্রিম বা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত তন্তু, সূতা ও কাপড় উৎপাদনে নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে। এই জাতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে গেলে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই খাতে বিশেষ বিনিয়োগে এগিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।

দেশে বর্তমানে প্রায় ৮০টি বস্ত্রকল পলিয়েস্টার, ভিসকস, টেনসিল, মোডালসহ বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম তন্তু, সূতা ও কাপড় উৎপাদন করছে। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০টি। বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের শিল্প উদ্যোক্তাদের এইখাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা যায়। দেশে প্রতি বছর ৭০০-৮০০ কোটি ডলারের ওভেন কাপড় আমদানি করতে হয়। ওভেন কাপড়ের উৎপাদনে করমুক্ত ঘোষণা করলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। তখন কৃত্রিম তন্তু পোশাক রপ্তানিতে আমাদের অবদান সংহত হবে।

অন্যদিকে দেশের বাজারে কৃত্রিম তন্তুর সূতা বিক্রিতে ৬ টাকা এবং কাপড়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রয়োজন। তাতে এই খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। প্লাস্টিক বোতল থেকে যেহেতু এই সূতা তৈরি করতে হয়। এখন দেশে শত শত কেজি প্লাস্টিক বোাতল প্রয়োজন। কিন্তু দেশে পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত প্লাস্টিক বোতল আমদানির সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।  সরকারের নীতি সহযোগিতা এইক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ভ্যাট, কর এইখাত থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেয়া প্রয়োজন। তখন নতুন নতুন বিনিয়োগ এই খাতে সহজে করতে বিনিয়োগকারীগণ উৎসাহিত হবে।

বর্তমান সরকার ১০০টি বিশেষ রপ্তানি অঞ্চল তৈরি করছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রপ্তানিও শুরু করেছে। কৃত্রিম তন্তু তৈরি করার জন্য দেশি ও বিদেশিদের জন্য একটি বিশেষ রপ্তানি অঞ্চল নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। তাতে নানা সুবিধা থাকবে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ তাতে শিল্প স্থাপন করবে। তখন কৃত্রিম তন্তু দেশে উৎপাদন হলে তৈরি পোশাকশিল্পের মূল কাঁচামালের সংকট আর থাকবে না। তখন বিদেশি রপ্তানি আদেশও বেশ পাওয়া যাবে। লিডটাইম কমে যাবে। আমদানি কারকদের চাহিদা মোতাবেক তৈরি পোশাক রপ্তানি করা যাবে। দেশে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে বিদেশি মুদ্রা অর্জনও বেড়ে যাবে।

২০২০-২১ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে মাত্র ২ হাজার ৮৫৬ কোটি ডলার। কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারলে এই রপ্তানি অর্থ দ্বিগুণে পরিণত হবে। তাছাড়া ভারত, চীন, ভিয়েতনাম এই বাজার একবার দখল করে নিতে পারলে আমরা ফাঁকে পড়ে যাবো। আমাদের যে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খোলা উজ্জ্বল আলো দেখতে পাচ্ছি তা হারিয়ে ফেলতে পারি। সরকারকে নীতিগত সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষে এই খাতের উন্নতির জন্য ডিজাইন ফ্যাশন ও প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে একটি জাতীয় ভিত্তিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে ভারত, চীন, ভিয়েতনাম এগিয়ে। আমরা এখনও এই জাতীয় ইন্সটিটিউট স্থাপনের উদ্যোগও গ্রহণ করতে পারি নাই। বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিকেএমইএ সহ সকল ব্যবসায়ী সমিতিকে রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে রিচার্স ও ফ্যাশন ইনস্টিটিউট স্থাপনে দ্রুত এগিয়ে আসা প্রয়োজন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অর্জনের খাতায় ‘কৃত্রিম তন্তু তৈরি’ ও ‘তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শক্ত অবস্থানে পৌঁছার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শুরু হোক।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান- ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি,অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল  এবং  আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম। সাবেক সিনেট সদস্য- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট