চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেসরকারি খাতে দেশে সর্বপ্রথম সিমেন্ট কোম্পানি কনফিডেন্স

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১:৪৭ অপরাহ্ণ

মো. জহির উদ্দিন আহমেদ

৯০ এর দশককে বলা যায় বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে শিল্পায়নের স্বর্ণযুগের সূচনা। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনালগ্নে দেশে ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়, ঠিক সেই সময়ে কয়েকজন তরুণ বন্ধু যারা বুয়েটে একসাথে পড়েছেন তারা এবং তাদের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী বন্ধু মিলে নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ছোটখাটো কিছু ব্যবসা শুরু করেন, তা থেকে ব্যবসাও ভালই হচ্ছিল। কিন্তু কেউই তৃপ্ত হতে পারছিলেন না, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন এমন কিছু করবেন, যা হবে বাংলাদেশে একেবারেই নতুন কিন্তু সম্ভাবনাময়। অনেক ভাবনার পর সবাই মিলে সিদ্বান্ত নিলেন সিমেন্ট কারখানা করবেন। কিন্তু এর প্রযুক্তি সম্পর্কে কারোই কোন ধারণা ছিল না। সাধারণত কাঁচামাল আমদানি নির্ভর সিমেন্ট কারখানার অবস্থান অবশ্যই নদীর পাশে হওয়া অত্যাবশ্যক।
সে কারণেই কনফিডেন্স সিমেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডে মাদাম বিবির হাটে। ইঞ্জিনিয়ার কাজী শহীদুল ইসলামকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং গ্রুপ রিটায়ার্ড শামসুল আলম বীর উত্তমকে চেয়ারম্যান করে ১৯৯৪ সালে মাত্র ৬০০ টন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে যাত্রা শুরু কনফিডেন্স সিমেন্ট কারখানার। বেসরকারি খাতে কনফিডেন্স সিমেন্ট কারখানাই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সিমেন্ট কোম্পানি। পাশাপাশি কনফিডেন্স সিমেন্টই প্রথম পাবলিক লিস্টেড সিমেন্ট কোম্পানি। যা ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ল্যান্ডলক সিমেন্ট কারখানা হিসাবে শুরুতেই কনফিডেন্স সিমেন্ট হোঁচট খায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করার কাজে, পরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্যের কারণে বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তখন পরিচালক রূপম কিশোর বডুয়া, ইঞ্জিনিয়ার খুরশিদ আনোয়ার, শাহ মুহাম্মদ হাসান বিশেষ ভূমিকা রাখেন এবং এই রকম দুঃসময়ে প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কাজী শহীদুল ইসলাম হঠাৎ করে কোম্পানি ছেড়ে গেলে ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করে নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু হয়। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০০ সনে পূর্বের ৬০০ টন উৎপাদন ক্ষমতার সাথে যুক্ত হয় আরও ২০০০ টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন কারখানা। এর মধ্য দিয়ে কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবসায় ব্যাপক সম্বৃদ্ধি লাভ করে।
গত দুই দশকে কনফিডেন্স সিমেন্ট ব্র্যান্ড হিসাবে বাংলাদেশে সিমেন্ট সেক্টরে অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড হিসাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের প্রথম মেগা প্রকল্প যমুনা ব্রিজের মুল কাঠামো তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্ট, এছাড়াও চট্টগ্রামে প্রায় সব প্রকল্প যেমন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আান্তর্জাতিক বিমান বন্দর, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনসহ সব মেগা প্রকল্পে কনফিডেন্স সিমেন্ট ব্যাবহার হয়েছে এবং হচ্ছে। কনফিডেন্সে সিমেন্ট ব্যবসায় ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ২০১৮ সালে দৈনিক আরও ২০০০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন আরও একটি নতুন ইউনিট চালু করে। যা নিয়ে কনফিডেন্স সিমেন্টের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা দাড়িয়েছে বাৎসরিক ১২ লক্ষ মেট্রিক টন।
কনফিডেন্স সিমেন্টই প্রথম ২০০০ সালে বিদ্যুৎ সমস্যার কথা মাথায় রেখে ক্যাপটিভ পাওয়ার এর মাধ্যমে নিজস্ব বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে আসছে। ভবিষ্যত ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা মাথায় রেখে কনফিডেন্স সিমেন্ট অন্যান্য ব্যাবসায় বিনিয়োগের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যার অংশ হিসাবে ভারতের এশিয়ান পেইন্টস এর সাথে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে কারখানা স্থাপন করে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা মথায় রেখে যৌথ উদ্যোগে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে, ব্যাটারি উৎপাদন এবং ট্রান্সফরমার উৎপাদনে ও কনফিডেন্স সিমেন্টের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। কনফিডেন্স সিমেন্ট বর্তমানে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত অন্যতম বল্ক-চিপ কোম্পানি।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কনফিডেন্স সিমেন্ট

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট