চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে প্রথম জার্মান প্রযুক্তির ভিআরএম সিমেন্ট কারখানা সেভেন রিংস

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১:৪৩ অপরাহ্ণ

এ.বি.এম. ইফতেখার আলম সিদ্দীকী

বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে একটি শীর্ষস্থানীয় সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেভেন রিংস সিমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটি ২০০১ সাল থেকে অত্যন্ত উচ্চমানের সিমেন্ট উৎপাদন করে আসছে। বাংলাদেশে আরও কিছু সিমেন্ট কারখানার মতো সেভেন রিংস সিমেন্ট ভার্টিকেল রোলার মিল (আরএম) প্রযুক্তিতে সিমেন্ট উৎপাদন করে। জার্মান প্রযুক্তির ভিআরএম সিমেন্ট কারখানা, চট্টগ্রামে প্রথম প্রতিষ্ঠা করে সেভেন রিংস সিমেন্ট। চট্টগ্রামের শিকলবাহায় স্থাপিত সর্বাধুনিক জার্মান প্রযুক্তির এ কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন টন।
অর্থনীতিতে ভৌগলিকভাবে ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে নানাবিধ উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও মেগা প্রকল্পের মতো বহু প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট, নৌঘাটি, কক্সবাজার ও টেকনাফকে ঘিরে সামুদ্রিক পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্ণফুলী টানেল, আন্তর্জাতিক মানের গভীর সমুদ্র বন্দর ইত্যাদি প্রকল্পের গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কাজ চলমান।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে শুন শিং সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্থাপিত চট্টগ্রামের প্রথম ভিআরএম সিমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহকৃত সিমেন্ট দিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী কংক্রিটের কাঠামো নির্মাণ তা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান করা হচ্ছে। দেশ নন্দিত এ ব্র্যান্ডটির আছে নিজস্ব সিমেন্ট ব্যাগ তৈরির কারখানাও। দেশজুড়ে নৌ ও সড়কপথে পণ্য পরিবহণ করাসহ সেভেন রিংস সিমেন্টের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনাও সর্বাধুনিক।
বাংলাদেশের সিমেন্ট খাতে বিদেশি কোম্পানিমোট চারটি হলেও তারমধ্যে মার্কেট শেয়ার বেশি হংকংয়ের শুন শিং গ্রুপের সেভেন রিংস সিমেন্টের। শুন শিং গ্রুপ ১৯৮৮ সালে হংকংয়ে প্রতিষ্ঠিত। উৎপাদনশীল খাতে প্রথম বিনিয়োগের জন্য গ্রুপটি বাংলাদেশকেই বেছে নেয়। ১৯৯৯ সালে তারা সেভেন সার্কেল বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে এবং সেভেন রিংস সিমেন্ট নামে ব্র্যান্ড তৈরি করে।
প্রথম কারখানা রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে, শীতলক্ষা নদীর তীরে অবস্থিত। ওই কারখানার উৎপাদনক্ষমতা এখন বছরে ১৯ লাখ টন। এরপর সেভেন রিংস সিমেন্ট আরেকটি কারখানা করে ২০১৪ সালে। খুলনা নগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে খুলনায় রূপসা নদীর তীরে কেডিএ শিল্প এলাকায়। শুন শিং সিমেন্ট মিলস লিমিটেড নামে স্থাপিত সেভেন রিংস সিমেন্টের বার্ষিক ১.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় কারখানা। এ দুই কারখানা মিলে সেভেন রিংসের মোট উৎপাদনক্ষমতা বছরে ৩৫ লাখ টন। সেভেন রিংস সিমেন্ট উৎপাদনক্ষমতায় দেশের শীর্ষ সিমেন্ট উৎপাদকদের একটি। অন্যদিকে মানের দিক দিয়েও সেরাদের মধ্যে রয়েছে। অত্যন্ত উঁচু ও বিশ্বমানের সিমেন্ট উৎপাদন এবং তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে দুটি কারখানাই অনন্য।
সিমেন্ট কারখানার ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ লিকেজ সাপোর্ট হিসেবে শুন শিং গ্রুপ নিজস্ব ডব্লিউপিপি ব্যাগ উৎপাদন কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট, সড়ক পরিবহন বিভাগ এবং জলপথ পরিবহন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর বাইরেও অভ্যন্তরীণ কোস্টাল ভেসেল নির্মাণ ব্যবস্থা এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ¯িøপওয়ে ডক ইয়ার্ড নির্মাণ করেছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা পরিচালনার জন্য ‘সেমকোয়া লিমিটেড’ নামে শুন শিং গ্রুপ একটি নতুন কোম্পানির সূচনা করে। শুন শিং গ্রুপ বাংলাদেশের বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের জাবেল আলী শিল্প এলাকায় সেখানকার স্থানীয় চাহিদা পূরণ ও রপ্তানির লক্ষ্যে বার্ষিক ১.৫ মিলিয়ন টন ক্ষমতাসম্পন্ন “গ্রিনসেম এলএলসি, দুবাই” নামে আর একটি সিমেন্ট কারখানা স্থাপন করে। বাজারে ক্রেতাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও পছন্দের কারণে শুন শিং গ্রুপ তাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা সর্বাধুনিক ভিআরএম প্রযুক্তির মাধ্যমে আর ৫ মিলিয়ন টন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার প্রেক্ষিতে গাজীপুরের কালীগঞ্জে ৩৫ মিলিয়ন টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন জার্মান প্রযুক্তির একটি ভিআরএম প্লান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে সেভেন রিংস সিমেন্ট আইএসও ৯০০১ : ২০১৫ সার্টিফিকেটধারী প্রথম সারির ও শীর্ষস্থানীয় সিমেন্ট ব্র্যান্ড। ২০০১ সালে যাত্রার শুরু থেকে সেভেন রিংস সিমেন্ট একটি বৈচিত্র্যময় ও বিশ^স্ত ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। যা তার গ্রাহকদের সময়মত, সর্বোচ্চমানের সেবা দিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শুন শিং গ্রুপ , ক্লিংকার, জিপসাম, লাইমস্টোন, রক ফসফেট, আকরিক লোহা ইত্যাদির আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পকে প্রসারিত করতে এবং আরও উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে শুন শিং গ্রুপ শিল্প পর্যায়ে তাদের প্রথম বিনিয়োগ করে। ধারাবাহিক গুণগত মানের সাথে দীর্ঘস্থায়িত্ব, আধুনিক উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি, এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা পরিষদ এই ব্র্যান্ডটিকে একটি শীর্ষস্থানীয় সিমেন্ট ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।
দেশের প্রায় সবকটি মেগা প্রকল্পে ব্যবহার হয়েছে সেভেন রিংস সিমেন্ট : বাংলাদেশের সরকারি যত বড় প্রকল্প রয়েছে, সব কটিতেই সিমেন্ট সরবরাহ করেছে এবং করে যচ্ছে সেভেন রিংস্। মূলত প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী সিমেন্ট সরবরাহ করা এবং নির্ধারিতগুণগত মান রক্ষা করা, পাশাপাশি এর ধারাবাহিকতা রাখার কারণে সবার আস্থা অর্জন করে সেভেন রিংস। বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহারের আগে প্রতিটি ব্যাচের পণ্যের মান পরীক্ষায় ঠিক থাকলে অর্থাৎ যারা প্রকল্পের সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়, তারাই প্রকল্পে পণ্য সরবরাহে যোগ্য হয়। শুরু থেকেই সেভেন রিংস সিমেন্ট এসব স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করে আসছে। যার কারণে সকল প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে সেভেন রিংস সিমেন্ট।
উল্লেখ্যযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প, ঢাকা মেট্রো রেল প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপেসওয়ে, বিআরটি প্রকল্প, হাতিরঝিল প্রকল্প, পূর্বাচল ব্রিজ, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্প, সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প, কুড়িল ফ্লাইওভার প্রকল্প, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার প্রকল্প, খিলগাঁও ফ্লাইওভার লুপ প্রকল্প, দ্বিতীয় শীতলক্ষা ব্রিজ, সুরমা ব্রিজ, তিস্তা ব্রিজ, মিরপুর-বনানী ফ্লাইওভার প্রকল্প, যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার প্রকল্প, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, খিলগাঁও ফ্লাইওভার, কুমিল্লার পদুয়া বাজারের ফ্লাইওভার, ১৩২০ মেগা ওয়াট রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ প্রকল্প, ভেড়ামারা, গাজীপুরের ১০০ মেগাওয়াট, সায়দাবাদ বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ প্রায় অর্ধশতের বেশি প্রকল্পে সরবরাহ করছে সেভেন রিংস সিমেন্ট।
যে সব উল্লেখযোগ্যসুবিধা রয়েছে সেভেন রিংস সিমেন্টে : দেশের অন্যতম বৃহৎ সিমেন্ট উৎপাদনকারী সেভেন রিংস সিমেন্টের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম সর্বাধুনিক প্রযুক্তির, বিশে^র সবচেয়ে জনপ্রিয় জার্মানভিত্তিক লোশে ভিআরএম (ভার্টিকাল রোলার মিল), সিমেন্ট কারখানা ধারাবাহিক গুণগতমান সাথে অতিসূ² সিমেন্ট পার্টিকেল যা ৪০০০ এর অধিক ব্লেইন দিতে সক্ষম কংক্রিটের কাঠামোকে দীর্ঘ মেয়াদী শক্তি ও স্থায়ীত্ব দিতে সক্ষম, নিজস্ব বৃহৎ পরিসরের পরিবহন ব্যবস্থার (ট্রাক, বাল্ক কেরিয়ার, ওয়াটার ভেসেল) মাধ্যমে সবখানে, সঠিক সময়ে পণ্য পরিবহনের নিশ্চয়তা, দৈনিক ৪০০০ (চার হাজার) মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা, ৩০০০০ (ত্রিশ হাজার) মেট্রিক টনের সাইলো যা দিয়ে গ্রাহকদের ত্বরিৎ, বিপুল চাহিদাপূরণে সক্ষম, যেকোন ধরণের চাহিদা পূরণে আলাদাভাবে সাইলো প্রদানের ক্ষমতা, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদীর তীরে সিমেন্ট কারখানার অবস্থান, মাটি, পানি ও বায়ুতে থাকা ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদন থেকে কাঠামোকে সুরক্ষা দেওয়ার নিশ্চয়তা, কংক্রিট কাঠামোর অভ্যন্তরে থাকা রডকে মরিচার হাত রক্ষা দেওয়ার নিশ্চয়তা, স্থাপনাকে অত্যন্ত মজবুত ও মসৃণ অবয়ব দিতে সক্ষমসহ পণ্যের গুণগতমান পরীক্ষাকরণের ক্ষেত্রে উৎসাহ এবং আমাদের বিশ্বমানের সিমেন্ট উৎপাদনের প্রযুক্তি পরিদর্শনের আহ্বান করে থাকি।

লেখক : জেনারেল ম্যানেজার- বিপণন, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, সেভেন রিংস সিমেন্ট

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট