চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুঁজিবাজার হতে পারে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর অর্থায়নের প্রধান উৎস

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১:১৭ অপরাহ্ণ

সাইফুল আলম

বর্তমানে বাংলাদেশের সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা সাত কোটি ৮০ লাখ টন। আর ২০৩০-৩৫ সালে কোম্পানিগুলোর বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা হতে হবে ২১ কোটি থেকে ২৪ কোটি টন। এতে দশ হাজার থেকে বারো হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। এ বৃহৎ পুঁজি সংগ্রহের প্রধান মাধ্যম হবে পুঁজিবাজার। এ সুযোগটাই পুরোপুরি কাজে লাগাবে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলো। কারণ বাজারের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আছে। ফলে সহজে রাইট শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে।
বিশ্বে বাংলাদেশ ৪০তম বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদনকারী দেশ। আর দেশের মোট ১২৫টি সিমেন্ট কারখানা থাকলেও ৩৩টি সিমেন্ট কোম্পানি সক্রিয় ভূমিকা পালনে আছে। সবার সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা সাত কোটি ৮০ লক্ষ মেট্রিক টন। এরমধ্যে চার কোটি এক লক্ষ মেট্রিক টন হল কার্যকরী ক্ষমতা। তবে দেশের সিমেন্টের বাজারে ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আছে আবুল খায়ের গ্রুপের শাহ্ সিমেন্ট, বসুন্ধরা গ্রুপের মেঘনা ও বসুন্ধরা সিমেন্ট, সেভেন রিংস ব্র্যান্ডের সিমেন্ট, মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ সিমেন্ট, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, ক্রাউন ব্র্যান্ডের এম আই সিমেন্ট, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, হোলসিম সিমেন্ট ইত্যাদি। এছাড়া বাকি ২০ শতাংশ দখলে রেখেছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের সিমেন্ট খাতের মোট সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। এরমধ্যে বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট খাতের প্রথম কোম্পানি হিসেবে ১৯৮৯ সালের তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালের কনফিডেন্স সিমেন্ট ও বসুন্ধরা গ্রুপের মেঘনা সিমেন্ট তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে আরামিট সিমেন্ট, ২০০৩ সালে লাফার্জ, ২০১১ সালের এম আই সিমেন্ট এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালের প্রিমিয়ার সিমেন্ট তালিকাভুক্ত হয়। মাত্র সাতটি কোম্পানি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত। বাকিগুলো অ-তালিকাভুক্ত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। এসব কোম্পানিগুলো ব্যবসায় বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণে প্রাথমিক অবস্থায় নিজস্ব অর্থ ও ব্যাংক নির্ভর। যদিও ব্যাংক উৎস থেকে সহজে ঋণ পাওয়া গেলেও থাকে নিয়মিত পাওনা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা। অপরদিকে বিনিয়োগকারীদের বছরে সীমিত লভ্যাংশ দিলেও হয়। আসলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সুফল মানে একটা কোম্পানির জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো ব্রান্ডিং হয়। যা ব্যবসা সম্প্রসারণে ভূমিকা পালন করে। আর উত্তোলনকৃত টাকায় কারখানা সম্প্রাসারণ, লোন পরিশোধ কিংবা নতুন প্রযুক্তি স্থাপন করতে পারে। যা কোম্পানির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যা একই সাথে ব্যাংকের উত্তম বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এছাড়া তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান হার ২.৫ শতাংশ। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ২.৫ শতাংশ কম কর দেয়। এ করের ব্যবধান আরও বাড়ানো ভালো পারফরম্যান্সের কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহ পাবে। আরো কিছু সুবিধা তো আছে। অথচ পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ থাকলেও অনাগ্রহের কারণে পুঁজিবাজারমুখি হচ্ছে না। এতে বহুমাত্রিক সুবিধা ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে সিমেন্ট খাতের উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ টন। এছাড়া বাংলাদেশে মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার ১২৫ কিলোগ্রাম বা কেজি। ভারতে মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার ২২৫ কেজি। পাকিস্তানে ১২৯ কেজি। মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। দেশটিতে মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহার প্রায় ১ হাজার ৭০০ কেজি। আর সারা বিশ্বে সিমেন্টের মাথাপিছু গড় ব্যবহার ৫০০ কেজি। ফলে বাংলাদেশের এ খাতের প্রবৃদ্ধির অনেক সুযোগ আছে। ফলে বাড়াতে হবে উৎপাদন সক্ষমতা। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে কোম্পানিগুলো তাদের কারখানা সম্প্রসারণ করেছে। এতে বিদ্যামান কোম্পানিগুলোকে আগামী দশকে বিনিয়োগ আরো তিন থেকে চার গুণ বাড়াতে প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ ২০৩০-৩৫ সালে কোম্পানিগুলোর বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা হতে হবে ২১ কোটি থেকে ২৪ কোটি টন। আর এতে বিনিয়োগ করতে হবে দশ হাজার কোটি টাকাও বেশি। এ বৃহৎ পুঁিজ সংগ্রহের প্রধান মাধ্যমে হবে পুঁজিবাজার। এ সুযোগটাই পুরোপুরি কাজে লাগাবো পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। কারণ বাজারের বড় বড় প্লেয়াররা পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আছে। ফলে সহজে রাইট শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে।
বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে পাল্লা দিয়ে প্রতিয়োগিতা সক্ষমতা বাড়াবে। এতে কোম্পানিগুলো নতুন প্রযুক্তি স্থাপন করার মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কমাবে। বিপরীতে উৎপাদন বাড়াবে। বাজারের সিজের শক্তিশীল অবস। তা আরো শক্ত করবে। বিপরীতে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো ব্যবসা হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পথে আছে। আবার কোনো কোনো ছোট কোম্পানি আড়ালে বড় কোম্পানির সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছে। মূলত করপোরেট পুঁজির চাপে তারা বিলীন হওয়ার শঙ্কা আছে। এ সংকট কাটাতে কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্ঠা করতে পারে। তবে সাসটেইন হবে না।

লেখক : সাংবাদিক

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট