চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ২:১০ অপরাহ্ণ

কিছুদিন আগেও সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক যানবাহন চালানো অনেক দূরের ভবিষ্যৎ বলে মনে হতো। কিন্তু এখন এটি বাস্তবতা। দিন দিন কমে আসছে বৈদ্যুতিক গাড়ির সব ধরনের খরচ। তার ওপর এর সঙ্গে রয়েছে ‘পরিবেশবান্ধব’ ট্যাগ। তাই আধুনিক বৈশিষ্ট্যের এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সচেতন নাগরিকদের। বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির কারখানা নির্মাণ হচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষায় উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হয় এমন যানবাহনের সংখ্যা কমানোর চিন্তা শুরু করেছে। বড় বড় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো নতুন নতুন মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে ছাড়ছে। চাহিদাও বেড়ে চলেছে এই উন্নত প্রযুক্তির। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধা-অসুবিধা নিয়েও জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি : বৈদ্যুতিক গাড়ির একটি বড় সুবিধা হল, এটি গ্যাস ও তেলচালিত গাড়ির তুলনায় পরিবেশের অনেক কম ক্ষতি করে। এই গাড়ি থেকে পরিবেশে কার্বন ও ধোঁয়া নির্গমন হয় অনেক কম। এছাড়া পেট্রল নিষ্কাশন ও পরিশোধন করতে যে ব্যাপক পরিবেশ দূষণ হয়, সেটিও এড়িয়ে চলে বৈদ্যুতিক গাড়ি।
দূরযাত্রা : বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এক দশক আগেও যেখানে বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো একবার চার্জে মাত্র ৭০ মাইল দূরত্ব চলতে পারত, এখন বেশিরভাগ গাড়ি ২০০ মাইলেরও বেশি চলতে পারে। বড় বড় কোম্পানিগুলো বছর বছর বের করছে নিত্যনতুন মডেল। বৈশিষ্ট্যভেদে দামেও রয়েছে বেশ তারতম্য।
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম : গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যাসচালিত যানবাহনের তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় অর্ধেক।
উচ্চমূল্য : কনজিউমার রিপোর্টের বিশ্লেষণ অনুসারে, গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। যদিও গতানুগতিক গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির অন্য সব খরচ সীমিত ও এটি পরিবেশবান্ধব, তবে এর এককালীন ক্রয়মূল্য কিছুটা বেশি।
বিক্রয়মূল্য কম : গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির দ্রুত মূল্য হারাতে থাকে। অর্থাৎ, দ্বিতীয়বার বিক্রির সময় প্রচলিত গাড়ির চেয়ে হাইব্রিড বা ব্যাটারিচালিত গাড়ির মূল্য অনেক কমে যায়। তবে এটি গাড়ি বিক্রেতাদের জন্য দুঃসংবাদ হলেও, ক্রেতাদের জন্য সুসংবাদ। ব্যবহৃত গ্যাস-চালিত গাড়ির তুলনায় যৌক্তিক মূল্যে ক্রেতারা বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে পারবে। জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হওয়ার ফলে জ্বালানি খরচ কমলেও ব্যাটারি চার্জ হতে সময় লাগবে অন্তত ৮ থেকে ১৪ ঘণ্টা। বড় গাড়ির ক্ষেত্রে সময় লাগবে ২৪ ঘণ্টার বেশি। তাছাড়া, গাড়ির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চার্জিংয়ের সময়ও বাড়তে থাকবে। বাসায় গাড়ি চার্জ দেওয়ার জন্য ফাস্ট-চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। সে হিসেবে বছরে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে।
নীতিমালা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান : ২০১৮ সালের নভেম্বরে ‘ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা’র খসড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়েছিল বিআরটিএ। পরের বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যালোচনা সভা হয়।
তখন বলা হয়, মোটরযান অধ্যাদেশের মাধ্যমেই নিবন্ধন দেওয়া সম্ভব। সেই নীতিমালাটি আবারও খতিয়ে দেখবে গঠিত এ-সংক্রান্ত নতুন কমিটি। একইসাথে আমদানিকৃত যানবাহনের জন্য চার্জিং নীতিমালা নিয়েও কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলছেন নীতিমালা চ‚ড়ান্ত হলেই মোটরযান আমদানি শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।
বিআরটিএ’র রোড সেফটি উইং সূত্র জানায়, তারা বুয়েটের সাথে আলোচনা করে একটি খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এখন মন্ত্রণালয় এই নীতিমালা নিয়ে কাজ করছে। ওটা তা চ‚ড়ান্ত করে তারাই ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবে। এরপর বিদ্যুৎচালিত সবধরণের যানবাহন চলাচলের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সারাবিশ্বেই কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমিয়ে বৈশি^ক উষ্ণায়ন রোধে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহ বাড়ছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের গাড়িকে নিবন্ধনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
খসড়ায় যা ছিলো : মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী খসড়া নীতিমালায় যানবাহনের নিবন্ধনের ওপর জোর দেয়া হয়েছিলো। এতে বলা হয় রিচার্জেবল ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুৎ শক্তির সাহায্যে চালিত মোটরযান, যেটি ব্যাটারি বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে রিচার্জ করা হয়, তাকেই ইলেকট্রিক মোটরযান বলা হবে। তবে বাইসাইকেল বা রিকশা এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।
খসড়া নীতিমালায় ইলেকট্রিক মোটরযানের জীবনকাল মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে দশ বছর, তিন চাকার যানবাহন নয় বছর ও হালকা, মধ্যম ও ভারী যানবাহনের জন্য ২০ বছর ধরা হয়েছে।
অনুমোদিত চার্জিং স্টেশন, নিজস্ব ব্যবস্থাপনা, সোলার প্যানেল বা নবায়নযোগ্য যে কোন জ্বালানি ব্যবহার করে রিচার্জ করা যাবে। তবে ইলেকট্রিক মোটরযানের নিবন্ধন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট দেয়ার প্রক্রিয়া প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে।
চার্জিং স্টেশন তৈরির উদ্যোগ : বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, দেশে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি আমদানির পর সেগুলোর চার্জিং স্টেশন কোথায় হবে বা কেমন হবে কিংবা ট্যারিফ কেমন হবে-এসব বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। এ সভায় অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রত্যেকটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিতে বৈদ্যুতিক যান চার্জিং বিষয়ক টিম রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক যানবাহনের চার্জিং নীতিমালা গ্রাহক বান্ধব হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন পরিবেশের ভারসাম্য রাখতে বৈদ্যুতিক গাড়ির উত্থান উত্তরোত্তর বাড়বে।
এ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভাতেই জানানো হয় যে পেট্রোল-চালিত যানবাহনের প্রতি এক হাজার কিলোমিটারের জন্য যেখানে ৫৩৭৫ টাকা খরচ হয়, সেখানে একই দূরত্বের জন্য বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্ষেত্রে খরচ হবে ১২৫০ টাকা। এছাড়া পেট্রোল চালিত যানবাহনের চেয়ে বিদ্যুৎ-চালিত যানবাহনের যান্ত্রিক দক্ষতাও বেশি এবং এটি পরিবেশ বান্ধব।
বিআরটিএ অবশ্য বলছে তারা রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করেছে যাতে করে নীতিমালা চ‚ড়ান্ত হলে গাড়ি আমদানি করে কাউকে বিপাকে না পড়তে হয়।
প্রসঙ্গত বিশ্বজুড়েই এখন বাড়ছে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০২০ সালে বিদ্যুৎ চালিত যানবাহনের বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশে এখনো বিদ্যুৎ চালিত কার বা মোটরযান চোখে না পড়লেও দেশজুড়ে অসংখ্য ইজিবাইক চলছে যেগুলোর ব্যাটারি বিদ্যুতে রিচার্জ করতে হয়। তবে অল্প কিছু ইলেকট্রিক কার ব্যক্তি উদ্যোগে এসেছে এবং সেগুলো নিবন্ধন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা।

লেখক :  নিজস্ব প্রতিবেদক, সূত্র : বিবিসি বাংলা, ইন্টারনেট, টিবিএস

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট