চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বে-টার্মিনালের পাশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান টার্মিনাল প্রয়োজন

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১:৪৭ অপরাহ্ণ

চৌধুরী জাফর আহমেদ

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ সংশোধনী প্রসঙ্গে : দেশের সড়ক পরিবহন শিল্পখাতের পণ্যপরিবহন মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয়ভিত্তিক বৃহত্তম সমিতি বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্যপরিবহন মালিক এসোসিয়েশন এবং পণ্যপরিবহন শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন। এই দুই সমিতির পক্ষ থেকে বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ওপর ২০২১ সালের ৫ মে সরকারের কাছে পেশ করা সংশোধনী প্রস্তাবসমূহ অবিলম্বে আইনের অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
মোটরযান মালিকদের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর বাতিল প্রসঙ্গে: মোটরযান মালিকদের ওপর আরোপিত ‘অগ্রিম আয়কর’ (AIT: অ্যাডভান্স ইন্কাম ট্যাক্স) এর ওপর মহামারী করোনাকালে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সম্প্রতি চাপিয়ে দেওয়া অতিরিক্ত বা বর্ধিত আয়কর অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ওজনের বিপরীতে অতিরিক্ত পণ্য লোড প্রসঙ্গে : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে রাস্তা ও ব্রিজের ক্ষয়ক্ষতি রোধকল্পে অংশীজনদের সহযোগিতায় বড় দারোগারহাট ও দাউদকান্দিতে “ওয়ে-স্কেল” স্থাপন করে। যা ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত ওজন বহনকারী মোটরযানকে মার্চ ২০১৮ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় হতে প্রদত্ত গেজেটের বাইরে অতিরিক্ত ওজন পরিবহনের জন্য জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়। কিছু অসাধু পরিবহন ব্যবসায়ী এবং স্কেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে বেশি ওজনবাহি গাড়িগুলো পার করে দিচ্ছে। এতে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় কোটি টাকার বেশি আয় থেকে। অপরদিকে বিনষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, আর আইন হচ্ছে ভূলুণ্ঠিত। এটা দেশদ্রোহিতার শামিল। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, প্রত্যেক লোডিং পয়েন্ট থেকে পণ্যের চালানের সাথে ওজন  স্লিপ প্রতিগাড়িকে সরবরাহ করতে হবে। ওজন স্লিপের সাথে পণ্যের বাস্তবিক ওজন তদারকির জন্য স্কেলগুলোতে হাইওয়ে পুলিশ ও আমাদের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে সার্বক্ষণিক যৌথ মনিটরিংয়ের উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে।
সমগ্র বাংলাদেশে একই পরিমাণ ওজন নির্ধারণ: সারাদেশের জন্য একই পরিমাণ ওজন নির্ধারণ করে অতিরিক্ত (ওভারলোড) পণ্যপরিবহন বন্ধে লোডিং পয়েন্ট তথা পণ্যপরিবহনের উৎসস্থলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ওজন নিশ্চিত করে পণ্যবাহী গাড়িগুলোতে মালামাল লোড করতে হবে। লোডকৃত গাড়িগুলোকে উৎসস্থলে পণ্যের ওজনস্লিপ প্রদান করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি কন্টেইনার অফডক এর কার্যক্রম : চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে গাড়ি লোডিং/আনলোডিং কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক অত্যাধুনিক ইক্যুইপমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে একদিকে সময়ের অপচয় কমবে এবং অন্যদিকে বন্দর কার্যক্রমে গতি বাড়বে। জেটির ভেতর ও বাইরে যানজট নিরসনকল্পে এমপিবি ও এনসিটি ইয়ার্ডের ওপর কনটেইনারের চাপ কমিয়ে আনতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি অফ-ডক (আইসিডি) এর ভেতর অথবা বাইরের নিকটবর্তী স্থানে লোডিং ও আনলোডিংয়ের জন্য অপেক্ষমাণ পণ্যপরিবহন যানের পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস প্রদান করতে হবে। বেসরকারি আইসিডি/সিএফএস নীতিমালা, ২০১৬ এর শর্ত কঠোরভাবে প্রতিপালনে আইসিডি মালিকদের বাধ্য করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রত্যেক জেটির আয়তন আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে মালামাল লোড/আনলোডের গতি সঞ্চার করতে হবে। পণ্যবাহী গাড়ি যে জেটিতে লোড হবে তার নিকটবর্তী গেইট দিয়ে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সময় বাঁচবে, যানজট নিরসন হবে।
ট্রান্সপোর্ট মালিক ও কর্মচারীদের স্মার্টকার্ড ও প্রতিনিধিদের অস্থায়ী গেট পাস : প্রতিদিন বন্দর থেকে যে পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা হয় তার প্রায় ৮০ ভাগ পণ্য ট্রাক কাভার্ডভ্যানে পরিবহন হয়। এসব পণ্য বন্দরে গাড়িতে লোডের পূর্বে প্যাকিং, ওজন ও পরিমাণ ইত্যাদি ট্রান্সপোর্ট কর্মচারীকে নিজ দায়িত্বে গণনা করে বুঝে নিতে হয়। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা হলে তা আমদানিকারককে অবহিত করতে হয়। নতুবা ট্রান্সপোর্ট মালিক ও গাড়ির মালিককে সমস্যায় পড়তে হয়। অথচ এই গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য ট্রান্সপোর্ট মালিক ও কর্মচারীদের বেসরকারি অফ ডক/প্রাইভেট কন্টেইনারগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া হলেও বন্দরে প্রবেশের পাশ দেয়া হয় না। অতীতে সিএন্ডএফ’র নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে ট্রান্সপোর্ট মালিক ও তার প্রতিনিধি বন্দরে প্রবেশ করতে পারলেও পরবর্তীতে সিএন্ডএফ এসোশিয়েশন পক্ষ থেকে এই সুবিধা প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়। একারণে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি।
ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও প্রাইমমুভারের জন্য টার্মিনাল নির্মাণ : চট্টগ্রাম বন্দর হতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি আসে। রপ্তানিপণ্য খালাস করে পুনরায় বন্দর হতে পণ্য লোড করার মধ্যবর্তী সময়ে গাড়ি রাখার কোন জায়গা নেই। বন্দরের আশপাশে গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। এতে বন্দর এলাকায় প্রচণ্ড যানজট হয়। বন্দরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যহত হয়। ফিরতি ভাড়া না পাওয়া পর্যন্ত শহরের মধ্যেও দাঁড়িয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সময়োপযোগী অনেক সিদ্ধান্ত নিলেও টার্মিনাল নির্মাণ করেনি। নিমতলায় যেটি আছে তাতে মাত্র ১০০ টি গাড়ি রাখা যায়। অথচ বন্দরে দৈনিক প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার গাড়ি প্রবেশ করে। এসব গাড়ির চালক/হেলপাররা এক অমানবিক পরিস্থিতির শিকার। গাড়ি রেখে নিজেদের প্রয়োজনীয় নৈমিত্তিক কর্ম সম্পাদনের কোন সুযোগ নেই। রাস্তায় গাড়ি পেলেই পুলিশ মামলা দিয়ে বসে। টোল রোড ও ওভারব্রিজে প্রচণ্ড রকমের জ্যামের কারণে গাড়িগুলো গচই/ঘঈঞ তে গমনাগমনে বাধা পায়। বে টার্মিনালের পাশে (জাইল্লা পাড়ায়) ট্রাক, কভার্ডভ্যানের জন্য দ্রুত আলাদা টার্মিনাল নির্মাণ করা প্রয়োজন।
বেসরকারি কন্টেইনার/অফ ডকে লেবার বকশিস আদায় : বেসরকারি প্রাইভেট কন্টেইনার/ অফ-ডকগুলোতে লেবার বকশিসের নামে জোরপূর্বক টাকা আদায় এবং হয়রানি করা হয়। প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয়। ২০১৮ সালের ৬ মার্চ বন্দর ভবনে ডিরেক্টর ট্রাফিকের কনফারন্স রুমে লেবার বখশিস না নেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেও তা বন্ধ হয়নি। বেসরকারি প্রাইভেট কন্টেইনার/অফ ডকের পাশাপাশি বন্দরে এমপিবি এবং সিসিটি যা বেসরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সেখানেও লেবার বকশিস আদায় হচ্ছে। আরেক সমস্যা হল পরিবহন চালকদের বন্দরের গেটপাশ নিতে দীর্ঘ অপেক্ষা। একারণে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। গেট পাশের নির্ধারিত সরকারি ফি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিলে ঝামেলা কমতো।
বেসরকারি কন্টেইনার অফডক ও বন্দর সংশ্লিষ্ট এলাকায় চাঁদাবাজি : আমদানি ও রপ্তানি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত পরিবহনগুলো বেসরকারি কন্টেইনার অফডক এসএপিএল এবং ইনকন্ট্রেডের পার্কিং ও রাস্তায় অবস্থানকালে নির্দিষ্ট পার্কিং ফি ৫৭.৫০/- প্রদান করলেও কিছু অসাধু চাঁদাবাজ রাতে প্রতি গাড়ি হতে ১০০ টাকা জোরপূর্বক আদায় করে।
প্রাইমমুভার ও ট্রেইলার রেজিস্ট্রেশন : প্রাইমমুভার ও ট্রেইলারকে একই রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
তাই পূর্বের রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রাইমমুভার ও ট্রেইলারগুলোকে সহজ শর্তে একই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা উচিত।
মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে চুরি রোধে জরুরি সভা : কিছু সংঘবদ্ধ অসাধু ব্যক্তির সমন্বয়ে কয়েকটি চক্রের দ্বারা মহাসড়কে পণ্য পরিবহন খাতে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য বিশেষ করে গার্মেন্টস পণ্যসহ দেশে উৎপাদিত পন্য চুরির ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে পোশাক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি, বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এতে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত আমাদের সংগঠনের সদস্যবৃন্দ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। চুরি রোধে ও বহির্বিশ্বে সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে চোর/ডাকাত চক্রকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
মহাসড়কে নির্মিত ফুটওভারব্রিজ : মহাসড়কে বেশকিছু জায়গায় পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটওভারব্রিজ স্থাপন করা হয়েছে। যার উচ্চতা প্রায় ১৮ ফুট। আমদানিকারক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মেশিনারি পণ্য পরিবহনের সময় গাড়ির উচ্চতা স্বাভাবিক হতে বৃদ্ধি পায়। আমাদের গাড়ির সর্বনিম্ন উচ্চতা ৪-৫ ফুট এবং কিছু মেশিনারিজ/বয়লারের উচ্চতা ১৫-১৬ ফুটের বেশি হয়। গাড়ি ও পণ্য উভয়ের উচ্চতা মিলিয়ে প্রায় ২০/২১ ফুট হয়ে যায়। এসব পণ্য পরিবহনে সমস্যায় পড়তে হয়। পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে নির্মিত ফুটওভারব্রিজগুলো উচ্চতা অন্তত ৩০ ফুট করা উচিত। ট্রেড লাইসেন্সের বার্ষিক ফি ন্যায়সংগত হারে হ্রাস করার দাবি : কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি পণ্য পরিবহন বা ট্রান্সপোর্ট মালিকদের জন্য ৫০০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ আমদানি-রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নবায়ন ফি মাত্র ২০০০ টাকা এবং আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ফি ২৫০০ টাকা। এটা শুধু বৈষম্যমূলক আচরণ নয়, অনৈতিকও বটে।
মোটরযানের ডকুমেন্ট হালনাগাদকরণ : মোটরযানের ডকুমেন্ট হালনাগাদ করতে যাওয়ার পর ‘ব্লু-বুক’এ মালিকের নাম বা নামের বানানের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন সার্টিফিকের্টের কিঞ্চিৎ গরমিল থাকলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক গাড়ির ফি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এতে গাড়ির মালিক বিড়ম্বনায় পড়েন। সরকারও সময়মতো রাজস্বপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। হয়রানি বন্ধে মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যকে ভিত্তি ধরে টাকা গ্রহণ তথা মোটরযানের ডকুমেন্ট হালনাগাদ করার দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সিটি কর্পোরেশনের কর প্রসঙ্গে : ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভারের সিটি কর্পোরেশনের কর ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০০ টাকা করা হয়। অথচ ১০ গুণ বেশি ইনকামধারী ২ কোটি টাকা দামের লাক্সারি বাসের সিটি কর ৫০০ টাকা। পরে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তা ১০০০ টাকা করা হলেও অন্য জেলায় ৫০০ টাকা। সিটি কর দেশের কোন জেলায় বিআরটিএ অফিসে আদায় করা হয় না, শুধুমাত্র চট্টগ্রামের বেলায় এই নিয়ম। যা এক দেশে দুই আইন।
চালকদের সমস্যা : ভারী মোটরযান চালক যাদের ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তাদেরকে সহজশর্তে এবং সরকারি ফি’র বিনিময়ে অবিলম্বে ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। যতদিন এসব চালককে ভারী লাইসেন্স দেবে না ততদিন তাদেরকে হালকা অথবা মধ্যম শ্রেণির লাইসেন্স দিয়ে ভারী গাড়ি চালানোর সুযোগ দিতে হবে। এজন্য মামলা, জরিমানাসহ কোনোপ্রকার আইনি হয়রানি করা যাবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের ১০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অনূর্ধ্ব ১ মাসের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ কার্যালয়ে জমাদান নিশ্চিত করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে পুনরায় হয়রানিমূলক ‘ফিল্ডটেস্ট ও পরীক্ষা পদ্ধতি’ বাতিল করতে হবে। যেসব মোটরযান চালক (কয়েক লাখ) স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন, কোন অজুহাত ছাড়া তাদেরকে আগামী ২ মাসের মধ্যে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। দেশের প্রতিটি মহানগর ও জেলার সুবিধাজনক স্থানে সরকারি উদ্যোগ ও খরচে ‘মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল’ চালু করতে হবে। এসব প্রশিক্ষণ স্কুল থেকে উত্তীর্ণদেরকে দেওয়া সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে বিআরটিএ-কে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে।
আমদানি ও রপ্তানিকারকের হয়রানিমূলক আচরণ : মাসের পর মাস পরিবহন ভাড়া পরিশোধ না করা এবং নানা অসহযোগিতার কারণে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেও সুফল মিলেনি। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং গ্রুপের কাঁচামাল আমদানি এবং তৈরি পণ্য রপ্তানি বাবত আমাদের অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির টাকা বকেয়া রেখে হঠাৎ করে ভিন্ন কোনো এজেন্সিকে কার্যাদেশ দেয়। বকেয়া টাকা না দেয়ার জন্য নানা কুটকৌশল ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। সমস্যাসমূহ নিরসন করা অতীব জরুরি।
আমদানিকারকের ডকুমেন্টজনিত সমস্যার কারণে সৃষ্ট ঝামেলা : আমদানিকৃত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, প্রাইমমুভার-ট্রেইলারে লোড দেওয়ার পর কখনো কখনো আমদানিকারকের ডকুমেন্টসজনিত সমস্যার কারণে মালামালসহ সংশ্লিষ্ট গাড়ি আটক করা হয়। আটক করা গাড়ি মাসের পর মাস আটকাবস্থায় পড়ে থাকে। এতে ওই গাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ির মালিক বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। প্রশ্ন হলো, আমদানিকারকের দোষ বা অপরাধের দায়ভার পরিবহনযানের মালিক কেন বহন করবেন। তাই, এমন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মালামাল আনলোড করে গাড়ি প্রকৃত মালিককের নিকট হস্তান্তর করতে হবে।
গাড়ির কাগজপত্র চেকিং এর নির্দিষ্ট স্থান প্রসঙ্গে : গাড়ির কাগজপত্র চেকিং এর জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে হবে। যত্রতত্র পণ্যপরিবহনযান দাঁড় করানো যাবে না এবং পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যসহ সকল প্রকার হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক, হাইওয়ে, ক্ষেত্র বিশেষে থানা পুলিশ বা অন্যকোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা কারণে মোটরযান আটক করে তাদের ডাম্পিং-ইয়ার্ডে জমা রাখে। এসব অধিকাংশ গাড়ি আটক রাখার সময়সীমা কয়েক মাস থেকে শুরু করে কয়েক বছরও গড়ায়। এসময় গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি এবং গাড়ি নষ্ট হয়। মালিক তথা দেশের সম্পদের এমন নষ্ট করা চরম অন্যায়। এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ সাপেক্ষে গাড়িগুলো আটকের অনূর্ধ্ব সাত দিনের মধ্যে প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহনের কার্যক্রম : শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন নিজস্ব গাড়ি (কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, প্রাইমমুভার-ট্রেইলার) নিজেদের উৎপাদিত পণ্য ব্যতীত ভাড়ায় কোনো পণ্য পরিবহন করতে পারবে না। পণ্যপরিবহন খাতে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক সংখ্যক গাড়ি চলাচলরত থাকায় নতুন করে পণ্যবাহী গাড়ি আমদানি না করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান, ট্রাক প্রাইমমুভার পরিবহন মালিক এসোসিয়েশন

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট