চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

এসি থেকেই বার বার আগুন চমেক হাসপাতাল

গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্টদের গাফেলতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জুলাই, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে আবারও রক্ষা পেল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। তবে বার বার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে গেলেও এ বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের মানসিক বিভাগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকা- ভয়াবহ রূপ নেয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। তবে এতে প্রাণহানির মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা ছিল। ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে এসির শর্ট সার্কিট থেকেই অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়েছে। এর আগেও দুই দফা অগ্নিকা-ের সূত্রপাত ছিল একই যন্ত্র থেকে।
তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রায় ছয়শ’র বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) রয়েছে। এরমধ্যে গণপূর্ত বিভাগের আওতায় রয়েছে সাড়ে তিন’শ এসি। বাকি এসিগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ও বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে ডোনেশন পাওয়া। তবে গতকালসহ ঘটে যাওয়া সম্প্রতি তিনটি অগ্নিকা-ের সূত্রপাত কিন্তু গণপূর্ত বিভাগের আওতায় থাকা এসি থেকে হয়।
হাসপাতালের ছয়’শ এসির মধ্যে বেশিরভাগ এসিই পুরনো এবং অনেকগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস। হাসপাতালের সব বৈদ্যুতিক বিষয়ে দেখাশোনা করার দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। এরমধ্যে বেশিরভাগ এসিই জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার কারণে এসব এসিগুলো অনেকটাই বৈদ্যুতিক বোমায় পরিণত হয়েছে এবং বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে বার বার দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও এর কারণ হিসেবে গণপূর্ত বিভাগ বলছে, দীর্ঘক্ষণ এসি চালুর কারণেই অতিরিক্ত হিট হয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও এ বিষয়টি মোটেও মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর ফায়ার সার্ভিস বলছে, এসব পুরানো এসির কারণে যে কোন মুহূর্তে হাসপাতালে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মতামত তাদের।
জানতে চাইলে গণপূর্ত (ই/এম) বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মইনুল হক পূর্বকোণকে বলেন, ‘গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনাটি ঘটেছে- রাতে এসি বন্ধ না করে ওই চিকিৎসক চলে যান। যার কারণে এসি অতিরিক্ত হিট হয়ে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। শুধু কালই নয়, হাসপাতালের সব এসিই এমন দীর্ঘ সময় ধরে চালু রেখে চলে যান সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে আমরা মৌখিক ও লিখিতভাবে হাসপাতালের পরিচালককে একাধিকবার জানিয়েছি। যেন একটানা এসি চালু না রাখে। তারপরও এসিগুলো একবার চালু করলে, সারাদিন সেটি আর বন্ধ হয় না। যার কারণে অতিরিক্ত হিট হয়ে শটসার্কিটের মতো ঘটনা ঘটে থাকে’।
এদিকে নিয়ম বহির্ভূত অনেক এসি লাগানোর কারণেও শর্টসার্কিট হয়ে থাকে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একটি বৈদ্যুতিক লাইনে সর্বোচ্চ একটি বা দুটি এসি স্থাপনযোগ্য। তবে সেখানে অতিরিক্ত আরও একাধিক এসি স্থাপন করা হয়েছে। যার কারণে লাইন অতিরিক্ত লোড না নিতে পেরে শর্টসার্কিটের মতো ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে আমরা এমন কিছু এসি বন্ধ করে দিয়েছি। আর ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরো হাসপাতালের সকল এসি ও ফ্যানসহ সকল বৈদ্যুতিক বিষয়গুলো গণপূর্ত বিভাগ দেখাশোনার কথা থাকলেও তা তারা ঠিক মতো দেখে না। কিছুদিন পর পর তারা যদি এসব পরীক্ষা করে তাহলে অন্তত এমন দুর্ঘটনা আর ঘটবে না। এ বিষয়ে তাদেরকে একাধিকবার বলা হয়েছে বলেও জানান কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘আজকের (মঙ্গলবার) ঘটনার পর গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে বসা হয়েছে। তাদের এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। এসব বিষয় তারা দেখাশোনার কথা। আমাদের আলাদা কোন জনবল নেই যে আমরা গিয়ে তা দেখাশোনা করবো’।
এদিকে শুধু এসি-ই নয়, বরং হাসপাতালের ওয়ার্ডে ব্যবহার হওয়া বৈদ্যুতিক তার ও সুইচগুলো নিম্মমানের বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও বৈদ্যুতিক সংশ্লিষ্টরা। এসবের কারণে আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা ফায়ার সার্ভিসের।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘হাসপাতালের এখনো একাধিক এসি রয়েছে, যা বৈদ্যুতিক বোমায় পরিণত হয়েছে। এগুলোর কারণে অতীতেও ঘটনা ঘটেছে। সামনেও ঘটতে পারে। বেশি অংশই পুরনো যন্ত্র। দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট