চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শ্রমিকের টাকা ‘চেয়ারম্যানের’ পকেটে!

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৭ জানুয়ারি, ২০২২ | ৫:৫০ অপরাহ্ণ

কর্মক্ষম বেকার, গরিব ও দুস্থ পরিবারের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসৃজন প্রকল্প নেয় সরকার। যেখানে শুধুমাত্র কর্মক্ষম, ভূমিহীন নারী-পুরুষ এ কর্মসূচির আওতায় থাকবে। যার বিনিময়ে সরকারের পক্ষ থেকে দৈনিক মজুরিও পাবেন। অথচ তার ঠিক উল্টো চিত্রের ঘটনা ঘটে ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নে। যেখানে সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পুলিশ সদস্য, গ্রাম পুলিশ, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। যার সাথে জড়িত খোদ চেয়ারম্যান নিজেই। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই ওঠে আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের দীর্ঘ অনুসন্ধানে।

দুদক জানায়, নামে বেনামে তালিকা তৈরি করে চেয়ারম্যান নিজেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি অর্থবছরই ৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। আর সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায়  ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানে আলম এবং কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, কর্মসৃজন প্রকল্পের নয়-ছয়ের ঘটনায় ২০১৯ সালে তদন্ত শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা-২  কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ২০২০ সালের শেষ দিকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের অনিয়ম খুঁজে পায়। যাতে কর্মসৃজন প্রকল্পের তালিকায় ৪১ জনের নাম ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। আর সব অর্থই চেয়ারম্যান নিজেই তার নিজ ব্যাংক একাউন্টে স্থানান্তর করেন। যাতে সহযোগিতা করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় অনুসন্ধান কর্মকর্তার প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরে দুুদক কমিশন চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমতি দেন।

মামলার আসামিরা হলেন : দাঁতমারা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জানে আলম, তৎকালীন ট্যাগ অফিসার প্রণবেশ মহাজন, ফটিকছড়ির কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আজিজুল হক, একই ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা সুজিত কুমার নাথ ও ক্যাশিয়ার আবুল কাশেম।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৫-২০১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইউজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। দুই দফায় ওই অর্থবছরে  মোট ৫৯ লাখ ৪ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। একইভাবে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এ কর্মসূচির আওতায় রাস্তাঘাট সংস্কারের ব্যয়ের জন্য ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে চারবারে সর্বমোট ১ কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে দাঁতমারা ইউনিয়নের নামে। কিন্তু এসবের মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ১ম ও ২য় পর্যায়ের মোট ৮০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি হারে ৪১ জন শ্রমিকের ৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রকল্পে ভূয়া শ্রমিক দেখিয়ে, ভূয়া মাস্টার রোল তৈরি করে এবং শ্রমিকদের নামে ভূয়া ব্যাংক হিসাব খুলে নীতিমালা ভঙ্গ করে জব কার্ডের অনুমোদনকারী হয়ে প্রকল্পের ট্যাগ অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে পারস্পরিক যোগসাজশে শ্রমিকদের নামে ৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের তালিকাভুক্ত শ্রমিকের মধ্যে ৪১ জন উপকারভোগী শ্রমিকের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তারা প্রত্যেকেই জানান, তারা কেউই শ্রমিক নন এবং সকলেই স্বাবলম্বী। তারা কখনো কৃষি ব্যাংকে যাননি কিংবা হিসাব খোলেননি এবং টাকাও উত্তোলন করেননি। এছাড়া কর্মসৃজন শ্রমিকদের টাকা ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করার কথা থাকলেও তা ব্যাংক থেকে তুলে চেয়ারম্যান নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন।

মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক আতিকুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘কমিশনের নির্দেশক্রমে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট