চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে পালক কিশোরী কন্যাকে খুন!

ঘাতক নুরুন্নবী গ্রেপ্তার

নাজিম মুহাম্মদ

২৩ জুলাই, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে পালক কন্যাকে খুন করেছে নুরুন্নবী। অথচ ছোটবেলা থেকে নিজের সন্তানের মতো মেয়েটিকে লালন পালন করেছে। পর পর দুটি ছুরিকাঘাত করে কিশোরীর মৃতদেহ রেললাইনে ফেলে দেয়। ঘটনার ষোল দিনের মাথায় ঘাতক নুরুন্নবীকে রাউজান থেকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ৬ জুলাই চান্দগাঁও থানার খেঁজুরতলা লালপুল রেলবিট এলাকা থেকে রাত আটটার সময় সোমা দাস নামে ওই কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে নিহত কিশোরীর মা ধর্মান্তরিত নাছিমা বেগম বাদি হয়ে রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন চট্টগ্রাম মেট্টো অঞ্চলের উপ পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, রেললাইন থেকে কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধারের বিষয়টি আমরা ছায়া তদন্ত করি। তদন্তে আমরা জানতে পারি পালক পিতা নুরুন্নবী কিশোরীকে হত্যা করেছে। পরে প্রযুক্তিগত তথ্যের সহায়তায় নুরুন্নবীকে গত রবিবার বিকেলে রাউজানের মদের মহাল এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। তাকে রেলওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নুরুন্নবী সাতকানিয়ার রূপকানিায় গ্রামের মোহাম্ম পেটানের ছেলে। ঘটনার পর পর নুরুন্নবী প্রথমে সাতকানিয়ার ঢেমশায় গিয়েছিলো। পরে রাউজানে আত্নীয়ের বাসায় চলে যায়।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুন্নবী জানান, তিনি সাতকানিয়ার কেরানীহাটের উত্তর ঢেমশা গ্রামের জনৈক ইসলাম মেম্বারের বাসায় ভাড়া থাকতেন। সোমা তার পালক কন্যা। ৫ জুলাই রাতে কিশোরীকে ধর্ষনের চেষ্টা করলে মা নাছিমা তাতে বাধা দেন। পরদিন দুপুরে সোমাকে চান্দগাঁও খেজুরতলা খালার বাসায় পাঠিয়ে দেন। সোমা বের হবার পর পর নুরুন্নবীও ঘর থেকে বের হয়ে তার পিছু নেয়।
নুরুন্নবী জানান, ঘটনার দিন বৃষ্টি ছিল। স্ত্রীর খেজুর তলার বাসাটি আগে থেকেই চিনতো। পিছু নিয়ে চান্দগাও লালপুর রেললাইন এলাকায় এসে সোমাকে দেখতে পায়। বৃষ্টি থাকায় রেললাইলন এলাকায় তেমন লোকজন ছিলো না। তার ধারণা ধর্ষনের চেষ্টার বিষয়টি সোমা আত্নীয়স্বজনদের জানিয়ে দেবে । রেল লাইন এলাকায় পথ আটকে সোমার মাথায় ও ঘাড়ে পর পর দুটি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
রেলওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) মোস্তাফিজ ভুঁইয়া জানান, ধর্ষণের চেষ্ঠায় ব্যর্থ হয়ে কিশোরী পালক কন্যাকে ছুরিকাঘাত করেছে এমনটি জানিয়েছে নুরুন্নবী। গতকাল সোমবার পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে নুরুন্নবীকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ধর্মান্তরিত নাছিমা জানান, সতেরো বছর আগে রাউজানের বানিয়াপাড়ার রাজু দাসের সাথে তার বিয়ে হয়। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় রাজুর সাথে তার বিচ্ছেদ হয়। এরমধ্যে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় সোমা দাশ রেহা। সাত বছর আগে ধর্মান্তরিত হয়ে নুরুন্নবীর সাথে তার বিয়ে হলে শিশু সোমাকে নানা রামদাস লালন পালন করেন। সোমার বয়স ১২/১৩ বছর হবার পর সাতকানিয়ায় মায়ের কাছে চলে আসে। মাঝে মাঝে নানার বাড়ি গিয়ে নানার খোঁজ খবর নিয়ে আসতো। গত দুই মাস আগে সাতকানিয়ার উত্তর ঢেমশা গ্রামে বাসা ভাড়া নেয় নুরুন্নবী।
নাছিমা জানান, তার দ্বিতীয় স্বামী নুরুন্নবী প্রায় সময় সোমার দিকে বিকৃত দৃষ্টিতে তাকাতো। তার গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করতো। সোমা মায়ের কাছে এসব বিষয় জানিয়েছে একাধিকবার। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে মেয়ের দিকে নজর রাখতেন। ঘটনার আগের দিন অর্থ্যাৎ গত ৫ জুলাই রাতে কিশোরী সোমাকে নুরুন্নবী ধর্ষণের চেষ্টা করলে তা দেখে ফেলে। এ নিয়ে রাতে নাছিমার সাথে নুরুন্নবীর ঝগড়া হয়। রাতভর নির্ঘুম থেকে পাহারা দিয়ে সকাল (৬ জুলাই) এগারোটার দিকে কিশোরী সোমাকে চান্দগাঁও খেঁজুরতলা ব্রাহ্মণপাড়ায় বোন পূর্নিমা দাসের কাছে পাঠিয়ে দেন। সোমা উত্তর ঢেমশার বাসা থেকে বের হবার পর পরই নুরুন্নবীও ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ঐদিন (৬ জুলাই) রাত সাড়ে আটটার সময় রেল লাইনের পাশে সোমার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
নাছিমা জানান, বের হবার সময় নুরুন্নবীর পরনে এক জোড়া প্লাস্টিকের কালো রংয়ের জুতা, জিন্সের প্যান্ট, ও একটি চেকের হাফ টিশার্ট পরা ছিলো। সোমার লাশের পাশে যে জুতো জোড়া পাওয়া যায় সেটি নুরুন্নবীর পরনে ছিলো।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট