চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দুদকের জালে আরও ৩৬ জন

চট্টগ্রাম কারাগারে দুর্নীতি হ জিজ্ঞাসাবাদে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের টিম এখন চট্টগ্রামে হ শুধু জেলার সোহেল রানাই নন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত

ইমাম হোসাইন রাজু

২৩ জুলাই, ২০১৯ | ২:১৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কারাগারের দুর্নীতির সাথে আলোচিত জেলার সোহেল রানা একাই সম্পৃক্ত নয়। এর সাথে কারা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কারাগারের ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আজ মঙ্গলবার থেকে তিনদিন কারাফটকে এই সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ইতোমধ্যে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কমিশনের পরিচালক মানসুর ইউসুফের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, একই অভিযোগে চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক, জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক, ইকবাল করিম চৌধুরীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদক সূত্র। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ঢাকায়। সেখানে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের আরেকটি টিম কাজ করবে বলেও জানা গেছে।
দুদক জানায়, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার তিনদিন ধরে চট্টগ্রাম কারা বিভাগের এ ৩৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুদক পরিচালক মানসুর ইউসুফের নেতৃত্বে দুদকের একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এ টিমে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মাহবুব আলমও রয়েছেন। এদিকে যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাদেরকে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে বলেও জানায় দুদক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মাহবুব আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘সাবেক জেলার সোহেল রানা সংশ্লিষ্ট কারাগারের ৩৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম আসবে। আমিও ওইটিমের মেম্বার। তাদেরকে দুদক অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবো না বলেই, কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কেননা কিছু কাগজপত্র দেখার বিষয় রয়েছে’।
এর আগে সোহেল রানা সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে চট্টগ্রাম কারাগারের এই ৩৬ জন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়। তবে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের কারণে ওই ৩৬ চট্টগ্রাম কারাগারে হাজির থাকবেন বলেও জানায় দুদক সূত্র। তাদের বিভিন্নভাবে দুদক পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এই ৩৬ জনের ইতোমধ্যে বিভিন্ন দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণও মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় দুদক সূত্র।
জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে যাদের : চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক ডেপুটি জেলার হুমায়ন কবির হাওলাদার (বর্তমানে পঞ্চগড়), মো. ফখর উদ্দিন (বর্তমানে মাগুরা), মনজুরুল ইসলাম (বর্তমানে নড়াইল), মো. আতিকুর রহমান (বর্তমানে দিনাজপুর), মু. মুনীর হোসাইন (বর্তমানে ঝালকাঠি), আব্দুস সেলিম, হিসাব রক্ষক এমদাদুল ইসলাম (বর্তমানে বান্দরবান), সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর আনজু মিয়া (বর্তমানে পটুয়াখালী), প্রধান কারারক্ষি মো. মোসলেম উদ্দিন (বর্তমানে পঞ্চগড়), আব্দুল করিম (বর্তমানে ভোলা), বেলাল হোসেন (বর্তমানে বান্দরবান), সহকারী প্রধান কারারক্ষি লোকমান হাকিম (বর্তমানে খুলনা বিভাগের সদর দপ্তরে)। এছাড়া বর্তমানে সিলেট বিভাগীয় দপ্তরে থাকা কারারক্ষি কাউছার আলম, আরিফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শহীদুল মাওলা, শরীফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় দপ্তরের অংচিং হলা মার্মা, শাহাদাত হোসেন, আব্দুল হামিদ, রুহুল আমিন, রংপুর বিভাগীয় দপ্তরের ইকবাল হোসেন, শামীম শাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে থাকা এস এম মোভন, অলি উল্লাহ, মো. মাজহারুল হক খন্দকার, আবুল খায়ের (বর্তমানে নোয়াখালী), মহসিন তফাদার (বর্তমানে ফেনী) ত্রিভূষণ দেওয়ান (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া), স্বপন মিয়া (বর্তমানে নোয়াখালী), মিতু চাকমা (বর্তমানে বান্দরবান), জুয়েল মিয়া (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া), শাকিল হোসেন (বর্তমানে চাঁদপুর), বিল্লাল হোসেন (বর্তমানে বান্দরবান), শিবারণ চাকমা (বর্তমানে কুমিল্লা) ও ওসমান গণি (বর্তমানে নোয়াখালী)।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াই কোটি টাকার ব্যাংক এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের চেক এবং ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয় সোহেল রানা। এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানায় পুলিশ বাদি হয়ে মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। এর পর থেকেই মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের হওয়া ওই মামলার তদন্ত শুরু করেন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এছাড়া এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, দুদকের তদন্তকালে সোহেল রানা ও তার স্ত্রী, শ্যালকের নামে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও যশোরে ২৬টি ব্যাংক একাউন্টে ১৫ কোটি টাকা লেনদেনেরও তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও চট্টগ্রাম কারাগারের ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ পায় বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনে তৎকালীন ডিআইজ পার্থ গোপাল বণিক (বর্তমানে সিলেটে) এবং জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে (বর্তমানে বরিশাল) অনিয়মের জন্য দায়ী করে। এছাড়া তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের মাধ্যমে অনুসন্ধান করার সুপারিশ করে কমিটি। পরে তাদের বিভিন্ন স্থানে বদলিও করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করে এ কমিটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট