চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চুয়েটে মেডিকেল অফিসারকে মারধর ছাত্রলীগ কর্মীদের

নিজস্ব সংবাদাতা, রাউজান

২৩ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহর থেকে বাংলা মদ আনতে এম্বুলেন্স না দেয়ায় ছাত্রলীগ কর্মীরা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট)’র মেডিকেল সেন্টারের অফিসার ডা. খোরশেদুল আলমকে মেরে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে গতকাল সোমবার দুপুর থেকে বিএমএ’র নির্দেশে চুয়েট মেডিকেল সেন্টার বন্ধ করে কর্মবিরতি শুরু করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে ওই ঘটনার বিচার দাবিতে চুয়েট প্রশাসনকে ৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে চুয়েট অফিসার এসোসিয়েশন। এনিয়ে চুয়েটে কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাক্তার ও ছাত্রদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। চুয়েট মেডিকেল সেন্টার মেডিকেল অফিসার ডা. খোরশেদুল আলম গতকাল সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন ‘শনিবার বেলা ১১টার দিকে চুয়েট ছাত্রলীগ কর্মী অতনু ভৌমিক ও ফাহাদ হাসানসহ চারজন চুয়েট’র মেডিকেল সেন্টারে যান। তখন আমি ডিউটিতে ছিলাম। ওই চার ছাত্র আমাকে বলে ‘বাংলা মদ কিনে আনতে শহরে যাওয়ার জন্য এম্বুলেন্স লাগবে। এসময় আমি তাদের বলি ‘এম্বুলেন্স শুধুমাত্র রোগী আনা নেওয়া ছাড়া অন্যকোন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় না। এরপর উল্টো ছাত্ররা বলে ‘ক্ষমতা দেখাও। আমাদের ভয়ে চুয়েট কাঁপে।’ এ্যাম্বুলেন্স দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তারা (চার ছাত্র) আমাকে মারধর করে।’ এক পর্যায়ে আমি অন্যরুমে গেলে তারা সেখানে আমাকে হাত, পা দিয়ে শারীরিকভাবে আঘাত করে। এ অবস্থায় চুয়েট পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ বাবুলকে ডেকে আনলে তার সামনেই ছাত্ররা খারাপ ব্যবহার করে। যাওয়ার সময় আমাকে হুমকি দেয়।’ এরপর আমি ভিসি প্রফেসর ড. রফিকুল আলমকে বিষয়টি জানাই। তিনি বিচারের আশ্বাস দেন।’
এদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তারকে মারধরের প্রতিবাদ ও দায়ী ছাত্রদের বহিষ্কার, শাস্তির দাবিতে চুয়েট অফিসার এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা রবিবার জরুরি মিটিংয়ের পর চুয়েট প্রশাসনকে ৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় তারা বড় আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। এদিকে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে মেডিকেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিসির কাছে গিয়ে ওই ঘটনার বিচার চান। ভিসি বিচারের আশ্বাস দিলেও তার কথায় আশ্বস্ত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন মেডিকেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর তারা বিষয়টি বিএমএ’র কর্মকর্তাদের জানান। বিএমএ’র নির্দেশে সোমবার দুপুর ২টা থেকে অনির্দিষ্টকালে জন্য চুয়েট মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রেখে ডাক্তার-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে। এ নিয়ে করণীয় ঠিক করতে বিএমএ সোমবার রাত ১০টায় বৈঠকে বসছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। আহত ডা. খোরশেদুল আলম বলেন ‘অতনু ভৌমিক এর আগেও চুয়েটে শিক্ষক-কর্মচারের প্রতি খারাপ আচরণ করেছে। বিভিন্ন অপরাধ করেছে।’ চুয়েট স্টাফ এসোসিয়েশন ওই আন্দোলের সভাপতি জামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হোসেন রুবেল বলেন ‘চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় আমরা নিন্দা ও বিচার দাবি করছি। এনিয়ে যে আন্দোলন চলছে তাতে একাত্মতা পোষণ করছি।’
এ ঘটনায় অতনু ভৌমিক মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন ‘মারধরের কিছু হয়নি, ওইদিন চুয়েটে র‌্যাগ ডে ছিল। ব্যানার, পোস্টার আনার জন্য তার কাছে (ডা. খোরশেদুল আলম) এ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম। তিনি সেটি না দেয়াতে আমাদের সঙ্গে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছে। তিনি আমাদের গালমন্দ করায় এক পর্যায়ে আমাদের ছোট ভাইদের সাথে তার হাতাহাতি হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন ‘এখানে বাংলা মদ কে খাবে। বাংলা মদ আনার জন্য কি শহরে যাবো?।’ চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ইমাম বাকের বলেন ‘আমাদের ছোট ভাইদের সঙ্গে ডাক্তারের বাকবিত-া, হাতাহাতি হয়েছে। মারধরের কথা জানি না।’ এ ব্যাপারে চুয়েটের রেজিস্ট্রোর প্রফেসর ড. ফারুকজ্জামান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘বিষয়টি কি তা যাচাই-বাছাই করার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট