চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আবারও বাড়ল রডের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২২ | ১০:৪৩ অপরাহ্ণ

নির্মাণকাজের ভরা মৌসুমে ফের বাড়লো নির্মাণশিল্পের প্রধান উপকরণ রডের দাম। গত কয়েক দিনে চট্টগ্রামের বাজারে টনপ্রতি এক হাজার টাকা বেড়েছে। আরও বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সবকটিই চট্টগ্রামে অবস্থিত। তবে চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকার মিলগুলো প্রতিটন তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে রড উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ, কেমিক্যালসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে স্থানীয় বাজারেও স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে যায়। স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে রডের দাম বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় এখন ৬০ গ্রেডের রডের দাম ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) তপন সেনগুপ্ত গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে। এছাড়াও অন্যান্য কাঁচামালের দামও বেড়েছে। নির্মাণ উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার রডের দামও বাড়বে।’

বিআরএসএম ব্র্যান্ডের রড আগের দরে টনপ্রতি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘এখনো দাম বাড়ানো হয়নি। কাঁচামালের দামের ওপর নির্ভর করে রডের দাম বাড়ানো হবে।’

বিশ্ববাজারে গত সপ্তাহে স্ক্র্যাপের দাম টনপ্রতি ৫৩০ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬০-৫৮০ ডলারে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ানোর পর দেশীয় বাজারেও স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়াও রড উৎপাদনের কেমিক্যালের দামও বেড়েছে। রড উৎপাদনের কাঁচামাল ও কেমিক্যালের দাম বাড়ায় ফের বেড়েছে রডের দাম।

কেএসআরএম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (সেলস এন্ড মার্কেটিং) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম ৫৮০ ডলারের ওপরে বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে স্থানীয় বাজারেও স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে। স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধি ছাড়াও বাজারে স্ক্র্যাপের সংকট দেখা দিয়েছে এবং স্ক্র্যাপ ছাড়াও রড তৈরির কেমিক্যালের দামও ৩০-৪০ ডলার বেড়েছে। কাঁচামালের দাম বাড়ায় রডের দাম বাড়ানো হয়েছে।’

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কেএসআরএম ব্র্যান্ডের রডের দাম টনপ্রতি ৫শ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৭ হাজার ৫শ টাকা দরে। দু-একদিনের মধ্যে আরও পাঁচশ টাকা বাড়বে বলে জানান তিনি।’

বাজার ঘুরে দেখা যায়, কয়েকদিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের ইস্পাত শিল্পগুলো রডের দাম টনপ্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা বাড়িয়েছে। কয়েকটি ব্র্যান্ডের রডের দাম গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার টন প্রতি ৫শ টাকা বাড়িয়েছে। আবার গতকাল বাড়িয়েছে আরও এক হাজার টাকা।

গোল্ডেন ইস্পাতের পরিচালক সরোয়ার আলম গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিশ্বাবজারে তার্কি ও পাকিস্তান স্ক্যাপের বাজার অস্থির করে তুলেছে। প্রতিদিনই স্ক্যাপের দাম বাড়ছে। গত অক্টোবর মাসে বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৫৯০ ডলার। সাধারণ স্ক্যাপের দাম ছিল ৫১০ ডলার। নভেম্বর মাসে তা কমে ভালোমানের স্ক্র্যাপ ৫৫৫-৫৬০ ডলারে নেমে এসেছিল। এখন ফের বেড়ে ৫৮০-৫৮৫ ডলারে উঠেছে।’

স্ক্র্যাপের দাম যে হারে বাড়ছে তা ৬শ ডলারে উঠতে পারে আশঙ্কা করে সরোয়ার আলম বলেন, ‘এ অবস্থায় রডের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। গোল্ডেন ইস্পাতের দাম টনপ্রতি এক হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গত বছরের নভেম্বরে ৬০ গ্রেডের রডের দাম পাইকারিতে টনপ্রতি ৮০ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। খুচরা পর্যায়ে ৮১ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছিল। এর আগে ওয়ান ইলেভেনের (২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর) সময় প্রতি টন রডের দাম সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকায় উঠেছিল। নভেম্বরে ফের দাম বেড়ে ৮০ হাজার টাকার ওপরে ঠেকে। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে টনপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা কমানো হয়। মাস পেরুতে ফের বাড়ল রডের দাম।

রডের এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে। সঙ্গে রডের চাহিদাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে বেড়েছে রডের দাম।

পাইকারি বাজারে ৬০ গ্রেডের রড প্রতি টন কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭৬ হাজার টাকা থেকে ৭৮ হাজার ৫শ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে কোম্পানিভেদে ৫শ থেকে এক হাজার টাকা কম দরে বিক্রি হয়েছিল।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ ও ভাঙা উপযোগী পুরনো জাহাজের দামও বেড়েছে। স্ক্র্যাপ ও জাহাজের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও বেড়েছে পরিবহন খরচও। তার প্রভাব পড়তে পারে রড উৎপাদনে। বাড়তে পারে রডের দাম।’

গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে আমদানিকৃত পুরনো জাহাজের স্ক্র্যাপের দর ছিল টনপ্রতি ৪০০ ডলার। করোনা সংক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর থেকে আমদানিকৃত মেল্টিং স্ক্র্যাপের দাম ও পুরনো জাহাজের দাম বেড়ে যায়। স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে টনপ্রতি ৫৯০-৬০০ ডলারে পৌঁছে ছিল। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্ক্যাপ ও পুরনো জাহাজের দাম বেড়েছিল। এর প্রভাব পড়েছিল রড উৎপাদনে। গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬০ গ্রেডের রড বিক্রি হয়েছিল ৮০ হাজার টাকায়।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট